জুলি দাস, করিমগঞ্জ, ২৩ সেপ্টেম্বর : মাত্র ষোলো বছর বয়সে অভিভাবক বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় মনক্ষুন্ন হয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন সমনি মধুর প্রজ্ঞাজি। বর্তমানে তিনি ফিলোসোফিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে রাজস্থানের জৈন বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনায় নিয়োজিত।
এছাড়া এই সন্ন্যাসিনী ধর্ম প্রচারে বছরের বিভিন্ন সময় দেশ এবং বিদেশে যান। মানবতার মূল্যবোধ সম্পর্কে উপদেশ দেন।
গত কয়েকদিন করিমগঞ্জে অবস্থান করে জৈন সম্প্রদায়ের জনগণের সঙ্গে নিজের ভাব বিনিময় করেন। জৈন ধর্ম নিয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি। করিমগঞ্জের জৈন মন্দিরে থেকে শুক্রবার সকালে শিলচর পৌঁছেছেন তিনি। সেখান থেকে যাবেন যোরহাট।
উল্লেখ্য, গত তিনমাস থেকে অসমে রয়েছেন সমনি মধুর প্রজ্ঞাজি সহ সমনি মনন প্রজ্ঞাজি এবং সমনি সুপ্রজ্ঞাজি।
পরমপূজ্য যুগপ্রধান আচার্য শ্রী মহাশ্রবণজির সুযোগ্যা শিষ্য সমনি মধুর প্রজ্ঞাজি, সমনি মনন প্রজ্ঞাজি এবং সমনি সুপ্রজ্ঞাজির করিমগঞ্জ আগমন উপলক্ষে পূর্ববাজারে থাকা জৈন উপাসনা ভবনে বিভিন্ন ধার্মিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রী জৈন শ্বেতাম্বর তেরাপন্থী সভা, তেরাপন্থ মহিলা মন্ডল এবং তেরাপন্থ যুবক পরিষদ।
জৈন ধর্মাবলম্বী জনগণ ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ের কয়েকজনও অংশ নেন। আলোচনাকালে সমনি মধুর প্রজ্ঞাজি বলেছেন, জীবনকে ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য এবং ভালো জীবন কাটানোর জন্য অনুপ্রেরণা জোগানো হয়।
জীবনে যাতে পরিবর্তন আসে, এ ব্যাপারে বিভিন্ন টিপস দেন তারা। মানবতার উপর শিক্ষা দেন। তিনি আরো বলেন, অনেকের ঠিকমতো মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। এটা বিভিন্ন সময় পরিলক্ষিত হয়।
এর জন্য ‘জীবন বিজ্ঞান’ (সাইন্স অফ লিভিং)-এর একটি কোর্স রয়েছে শুধুমাত্র শিশুদের জন্য। এই কোর্স করলে শিশুদের জীবনে নিশ্চিতভাবে পরিবর্তন আসবে।
কীভাবে ক্রোধ, লোভ সংবরণ করা যায়, সেটা নিয়েও বিভিন্ন ক্লাসের মাধ্যমে টিপস দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে রাজস্থানের জৈন বিশ্বভারতীর মুখ্য কার্যালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা (এক্সপেরিমেন্ট) করা হয়। মেডিটেশনও শেখানো হয়। তবে হস্তরেখা দেখে বিভিন্ন বিচার করার বিরোধী তিনি।
দেশ ছাড়াও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৫ বার এসব কাজে সফর করেছেন মধুর প্রজ্ঞাজি। এরমধ্যে রয়েছে আমেরিকা, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নিউ জার্সি, লন্ডন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, ভ্যাটিকান সিটি, জাপান, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কানাডা ইত্যাদি।
মধুর প্রজ্ঞাজি বলেছেন, রাজস্থানের গ্রামে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার রীতি প্রচলিত। সেজন্য মাত্র ১৬ বছর বয়সে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়।
তিনি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছেন। ফলে ঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে পড়াশোনা করে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন। তিনি আরো বলেন, নিজের জন্যও ভাবতে হয়। এর জন্য বিয়ে করেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে বর্তমানে মন্দিরে দেখা করার জন্য আসলেও তিনি বাড়িতে যান না বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, জৈন ধর্মের সন্ন্যাসিনীরা কথা বলার সময় মুখের সামনে রুমাল ব্যবহার করে কথা বলেন। কারণ কথা বলার সময় জীবাণু নিয়ন্ত্রিত থাকে।