সতেরো বছর পর করিমগঞ্জে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের লঙ্গাই, মাইজগ্রাম ও কর্নমধু আঞ্চলিক সমিতির লোক উৎসব

Spread the love

লোক গানের সঙ্গে রয়েছে জীবন দর্শন, আত্মপরিচিতি ও ইতিহাসের প্রয়োজনে লোকসংস্কৃতি চর্চা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান  

জুলি দাস

করিমগঞ্জ, ১৩ ফেব্রুয়ারি : লোক সংস্কৃতির লোক বলতে একই ভাষাভাষী ও একই জীবন দর্শনে বিশ্বাসী এক জনগোষ্ঠীকে বুঝায়। অর্থাৎ লোক সংস্কৃতি শুধুমাত্র আত্মপরিচয় নয়, বরং সংস্কৃতি ও ভূগোলের চিহ্নের পরিচায়ক।

এই মন্তব্য করেন বিশিষ্ট লোক সংস্কৃতি গবেষক ও লেখক ড.অমলেন্দু ভট্টাচার্য।

২০০৬ সালের পর দীর্ঘ সতেরো বছরের মাথায় লঙ্গাইঘাট এলাকায় বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের লঙ্গাই, মাইজগ্রাম ও কর্নমধু আঞ্চলিক সমিতির উদ্যোগে দুই দিবসীয় লোক উৎসবের সূচনা হয়েছে শনিবার।

এদিন বিকেলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসবের সূচনা করেন বিশিষ্ট লোক সংস্কৃতি গবেষক ও লেখক ড.অমলেন্দু ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট অতিথি বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য, এএসটিসির চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুখেন্দুশেখর দত্ত, পুরপতি রবীন্দ্রচন্দ্র দেব সহ বিশিষ্টরা।

   ড.অমলেন্দু ভট্টাচার্য লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, একটি অঞ্চলের মানুষের মানসিকতা এবং জীবনধারণের পদ্ধতি যদি জানতে হয় তবে সেই অঞ্চলের লোক সংস্কৃতি জানা প্রয়োজন।

লোক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভূগোলের এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। লোক গান কেবল মাত্র গান নয়, এর সঙ্গে রয়েছে এক জীবন দর্শন।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন যে, ভাটিয়ালি গান একদিকে যেমন এ অঞ্চলের ভূগোলের পরিচয়বাহী, ঠিক তেমনি জীবন দর্শনের পরিচয় বহন করছে।

বহু বছর আগে থেকে লোক সংস্কৃতির উপর কাজ করেছেন অনেকে। কেননা তাঁরা জানতেন একটা অঞ্চলের মানুষের মানসিকতা জানতে হলে একমাত্র উপাদান এই লোক সংস্কৃতি।

ইতিহাসবিদ দীনেশচন্দ্র সরকারের মতে জায়গার নামের শেষে শাসন শব্দ থাকলে বুঝতে হবে এই অঞ্চলগুলিতে কোনো সময়ে তাম্র শাসনের মাধ্যমে জনবসতি স্থাপন হয়েছিল।

 অর্থাৎ এর থেকে বাঙালির প্রাচীনতম ঐতিহ্য সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। নিজেদের আত্মপরিচিতি এবং ইতিহাসের প্রয়োজনে লোকসংস্কৃতি চর্চা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বাঙালির সংস্কৃতি বিগত দিনে কৃষি জীবনের মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছিল। কেননা বাঙালির সব অনুষ্ঠানের পেছনে ক্রিয়াশীল কৃষি।

কিন্তু আজকের দিনে আমাদের সমাজ জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞাপন। আজকের প্রজন্মের মূল্যবোধ গড়ে উঠছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ফলে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি আমরা।

কিন্তু এখনো এই অঞ্চলের মানুষ নিজেদের প্রাচীন রূপকে আঁকড়ে ধরে লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যা আমাদের প্রাচীনত্বের প্রতীক।

তাই লোক সংস্কৃতির অঙ্গন সর্বদা আরো বিকশিত করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে সবাইকে। কেননা লোক সংস্কৃতি চিরকাল এক মানবিক উদারতার বার্তা বহন করে।

   বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বলেছেন, আজকের দিনে আমাদের জীবনের সব কিছু ঠিক করে দেয় বিজ্ঞাপন।

আমাদের চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া, চলন ধরন সব আজকাল বিজ্ঞাপন ঠিক করে। ফলে আজকের বাঙালিরা অনুকরণের পথে। নিজেদের জীবন যাপনের সব কিছু অনুকরণ করতে করতে নিজেদের সংস্কৃতি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।

একদিকে, ভাষিক আগ্রাসনের মাধ্যমে বাঙালিদের শেকড় উপড়ে ফেলার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে নাগরিকত্ব, সংস্কৃতি এমন এক অবস্থানে রয়েছে যে উত্তর প্রজন্ম সম্মান সহ বাস করতে পারবে কিনা, সেটা আজ এক বড় প্রশ্ন।

তাই লোক সংস্কৃতির যোদ্ধাদের মনোবল এভাবে লোক উৎসবের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে যে নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা চলবে।

   আমন্ত্রিত অতিথি  বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য বলেছেন, রাষ্ট্রীয় বিভাজনের জন্য আজ সিলেট এবং বরাক উপত‍্যকা পৃথক।

কিন্তু দু’টি স্থানের ভাষা কিন্তু এক। বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল দু’টি স্থানেই সিলেটি ভাষা প্রচলিত।

তিনি বলেন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঙালির কৃষ্টি, সংস্কৃতির জলাঞ্জলী দেওয়া চলবে না। আলোচনাক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং কলকাতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি।

ভাটিয়ালি গান থেকে ওঝা গানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বাংলাদেশের এই অধ্যাপক এবং বলেন, একতারা, দুতারা ও ঢোলকে কোনভাবেই ভুললে চলবে না।

কারণ এই সকল বাদ‍্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে বাঙালির সংস্কৃতি জড়িত।

অধ‍্যাপক শরদিন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ক্রিকেট খেলার সব সংস্করণে আমরা জড়িত হব। কিন্তু ষোলগুটি, দাড়াগুটিকে মোটেও ভুলে নয়।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রেখেছেন এএসটিসির চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস, উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, প্রাক্তন বিধায়ক ড০ সুখেন্দুশেখর দত্ত, অধ্যাপক সব্যসাচী রায় সহ অন্যান্যরা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের লঙ্গাই, মাইজগ্রাম ও কর্নমধু আঞ্চলিক সমিতির সম্পাদক বিভাসচন্দ্র দাস। উদ্বোধনী সংগীত ‘কে যাস রে ভাটির গান গাইয়া…’ পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।

এর আগে অতিথিদের উত্তরীয় এবং ব্যাজ পরিয়ে বরণ করা হয়। এদিন রাত পর্যন্ত রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। রবিবার সকাল থেকে ফের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।

Gana Awaz Desk

Avatar

create token < a href="https://capablemachining.com/">china cnc milling bep20 token create a usdc token create crypto token create a bep20 token create a token ethereum token stripe token create bnb token create token create a token token mint mint club token