জুলি দাস, করিমগঞ্জ, ২৫ সেপ্টেম্বর : করিমগঞ্জের সুসন্তান অসমের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অরুণোদয় ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণ সভায় উপস্থিত প্রত্যেকে তাকে ঘিরে বিভিন্ন স্মৃতি রোমন্থন করেন। বক্তাদের একাংশ প্রয়াত ভট্টাচার্যকে করিমগঞ্জের ‘সুপ্রিম সম্পদ’ বলে আখ্যা দেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনিত রোগভোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন দিল্লির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভট্টাচার্য। বয়স হয়েছিল ৮০ বছরl
করিমগঞ্জের সর্বপ্রথম আইএএস আধিকারিক ছিলেন তিনি। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মুখ্যসচিবের পদে চাকরি করেছেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার সময়ে। করিমগঞ্জের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে।
এমন ব্যক্তিত্বের প্রয়ানে সিটিজেন্স একশনস ফোরামের উদ্যোগে স্থানীয় বিএড কলেজে রবিবার দুপুরে এক স্মৃতিচারণ সভার আয়োজন করা হয়। বক্তব্য রাখেন ফোরামের সভাপতি হবিবুর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ, শিক্ষাবিদ নিশিথরঞ্জন দাস, প্রেসক্লাব করিমগঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি সতু রায়, বিএড কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রমেন্দ্র ভট্টাচার্য, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, আদিত্যসহায় ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা।
কবিতা আবৃত্তি এবং অরুণোদয় ভট্টাচার্যকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার সংবর্ধনা পত্র পাঠ করে শোনান প্রবীর ভট্টাচার্য। অরুণোদয় ভট্টাচার্যের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন দীপঙ্কর ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাব করিমগঞ্জের সভাপতি মিহির দেবনাথ সহ অন্যান্যরা।
বক্তারা বলেন, ১৯৬২ সালে ইউপিএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস হন প্রয়াত অরুণোদয় ভট্টাচার্যl করিমগঞ্জে সর্বপ্রথম এই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তিনি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন সাহিত্যিকওl ছাত্রাবস্থা থেকেই তা নিয়ে চর্চা ছিলl স্কুল জীবনে ‘আলো’ নামের এক সাহিত্য পত্রিকা বের করেনl সেখানে প্রকাশিত ‘রাজধানীর ডায়েরী’ ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল।
এছাড়া ইংরেজি এবং বাংলায় আটটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছেl কাব্যগ্রন্থগুলির নাম হচ্ছে–একটি ভিটে একটি মানুষ, আবার বন্দরে, স্বগত সংলাপ, প্রতিশব্দ, Waving Corridors, Contours, Dense with Silence, Ifs Buts Ands l
অরুণোদয় ভট্টাচার্য কাজ পাগল লোক ছিলেনl অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনোভাব ছিল প্রবল। সহজ, সরল, সাধারণ, রাজ্যের যে কোন মানুষের কথা ধৈর্য্য সহকারে শুনতেন এবং সমাধানের পথ খুঁজতেন।
প্রশাসনিক উচু পদে থাকার সময় তিনি একাধিকবার করিমগঞ্জ আসেনl অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদে থাকার সময় তখনকার মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত হিতেশ্বর শইকিয়ার সফরসঙ্গী হয়ে একবার করিমগঞ্জ আসেনl তখন তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিবl বেতাইল-লঙ্গাই রোড সংযোগস্থল এবং বনমালী-থানা রোডের সংযোগস্থলের রাস্তা তারই অবদানl
বক্তারা বলেন, প্রয়াত ভট্টাচার্য ছিলেন করিমগঞ্জের গর্ব। ছাত্র জীবন থেকে অনেক মেধাবী ছিলেন। তার একটি গবেষণামূলক বইয়ের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন, এই তথ্য জানান দীপঙ্কর ঘোষ। ঘোষ আরো বলেন, অরুনোদয় ভট্টাচার্যের কাছে ঋণী করিমগঞ্জ। কারণ তার মাধ্যমে করিমগঞ্জের অনেকে উপকৃত হয়েছিলেন।