ইম্ফল, ৬ মে : জাতিগত দাঙ্গায় উত্তপ্ত মণিপুর। কয়েকদিন থেকে উত্তরপূর্ব রাজ্য মনিপুরকে গ্রাস করেছে নিয়েছে জাতিগত দাঙ্গা।
সংরক্ষিত বন থেকে আদিবাসী গ্রামবাসীদের উচ্ছেদের অভিযানে এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেয়িকে তফসিলি উপজাতি (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে উপজাতি গোষ্ঠীগুলির বিক্ষোভের মাধ্যমে ক্রোধ সহিংসতার স্ফুলিঙ্গে জ্বলে ওঠে।
মণিপুরে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন সর্বদাই সমতলী মেইতেয়িরা প্রাধান্য পেয়েছে আসছে।
ফলস্বরূপ, সরকারের ক্রিয়াকলাপগুলিও আদিবাসীদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয়।
বিশেষ করে নাগা এবং কুকি যারা মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ উপত্যকার পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে বেশিরভাগ অংশে বসবাস করে।
ফেব্রুয়ারীতে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানকে আরও একটি উপজাতীয় বিরোধী পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়েছিল, যা কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যেই উদ্বেগ এবং ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী চুরাচাঁদপুর জেলার নিউ লামকা শহরের একটি সভায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু জনতা ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সেই সময় জনতা মেইতেয়ি সম্প্রদায়ের নতুন করে খোলা একটি জিমে আগুন দিতেও সক্ষম হয়েছিল, এই জিমটিও শুক্রবার বিকেলে উদ্বোধন করার কথা ছিল।
সমগ্র চুরাচাঁদপুর জেলায় আদিবাসী উপজাতি নেতা ফোরামের ডাকা ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ হওয়ার মাত্র 11 ঘন্টা আগে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ফোরাম দাবি করেছে, কৃষক এবং অন্যান্য উপজাতি বসতিদের সংরক্ষিত বন উচ্ছেদ করার জন্য চলমান উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে সরকারের কাছে বারবার স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সরকার মানুষের দুর্দশা সমাধানে সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার কোনও লক্ষণ দেখায়নি।
কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক চুরাচাঁদপুর ডি জে হাওকিপ পিটিআইকে বলেছেন, পার্বত্য জেলার বেশ কিছু এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
শত শত কুকি আদিবাসীকে তাদের ঐতিহ্যবাহী বসতি এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
কুকি জনগণের ক্ষোভ উচ্ছেদের বিষয়ে নয় বরং শত শত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রদানে ব্যর্থতাকে দায়ি করেছে।
৬০ সদস্যের মণিপুর বিধানসভায় বিজেপির পাঁচজন সহ ১০ জন কুকি বিধায়ক রয়েছেন। এরমধ্যে কুকি পিপলস অ্যালায়েন্স-এর দুইজন বিজেপি সরকারের মিত্র হিসাবে রয়েছেন।
আদিবাসী উপজাতীয় নেতাদের ফোরাম (আইটিএলএফ) তাদের বেরিয়ে আসতে এবং উচ্ছেদ অভিযানে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে।
আইটিএলএফ বলেছে তারা যদি সাড়া দিতে ব্যর্থ হয় তবে ভবিষ্যত পদক্ষেপ হিসাবে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে হাওকিপ বলেছেন।
গত মার্চের শুরুতেও কাংপোকপি জেলার থমাস গ্রাউন্ডে একটি সহিংস সংঘর্ষ হয়।
সেই সময় সংরক্ষিত বন এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নামে আদিবাসীদের জমি দখলের বিরুদ্ধে একটি গণ সমাবেশ করার চেষ্টা করেছিল।
সেই সমাবেশে পাঁচজন আহত হলে রাজ্য মন্ত্রিসভা দুটি কুকি-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন, কুকি ন্যাশনাল আর্মি এবং জোমি রেভল্যুশনারি আর্মির সাথে ত্রিপক্ষীয় সাসপেনশন অফ অপারেশনস আলোচনা প্রত্যাহার করে।
এসওও চুক্তি হল যুদ্ধবিরতি ব্যবস্থা- যা কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং কুকি দলগুলির স্বাক্ষরিত।
মন্ত্রিসভাও তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে রাজ্য সরকার বন সম্পদ রক্ষা এবং পোস্ত চাষ নির্মূল করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপের সাথে আপস করবে না।
এমনকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদের অসন্তোষটির মধ্যে ইম্ফলের উপজাতীয় উপনিবেশ এলাকার তিনটি গির্জা সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে ১১ এপ্রিল ভেঙে ফেলা হয়।
, যা আরও অসন্তোষের দিকে পরিচালিত করেছিল।
বুধবার মেইতেই সম্প্রদায়কে এসটি মর্যাদা দেওয়ার পদক্ষেপের প্রতিবাদে যখন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (এটিএসইউএম) উপজাতি সংহতি মার্চ ঘোষণা করেছিল তখন এটি যে সংঘর্ষের দিকে যেতে পারে যুক্তিযুক্ত আশঙ্কা ছিল।
গত মাসে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের এসটি মর্যাদার দাবিতে কেন্দ্রের কাছে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি সুপারিশ পাঠাতে বলার পর নাগা এবং কুকি আদিবাসীরা এই পদযাত্রার আয়োজন করে।
কেউ কল্পনা করেনি যে এটি সহিংসতার সর্পিল হয়ে পড়বে যা বনের আগুনের মতো হাজার হাজার মানুষকে পুড়াবে এবং তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করবে।