নিরাপত্তা চেয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের প্রধান বিচারপতিকে প্রদীপ দত্তরায়ের স্মারকপত্র।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত সরকার, নতুন দিল্লি.
বিষয় : আসামের বাঙালি এবং বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সদস্যদের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন আলফা-স্বাধীন কর্তৃক হুমকি।
মহাশয়,
যথাযথ সম্মানের সাথে বলতে চাই যে আমি আসামের দক্ষিণাঞ্চলের বরাক উপত্যকায় একজন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করছি।
1983 থেকে 1992 সাল পর্যন্ত, কাছাড়-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ (আকসার)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে বরাক উপত্যকায় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গণআন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলাম।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সেই সময় আমাদের সাথে এই ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং এ সংক্রান্ত একটি বিল সংসদে পাস হয়।
গত দুই বছর ধরে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ নামক একটি সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের প্রধান আহ্বায়ক হিসেবে এই উপত্যকার মানুষদের বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিষয়ে সোচ্চার রয়েছি।
নাগরিকত্ব নিয়ে এই উপত্যকার লোকদের অনেকদিন ধরে হয়রানি করা হচ্ছে।
এখানকার বৈধ নাগরিকদের ডি ভোটার নোটিশ জারি করা হয় এবং তাদের কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়।
বিপুল পরিমানে আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক অশান্তির মধ্যেও আমরা এনআরসি প্রণয়নের প্রক্রিয়াতে অংশ নিয়েছি।
কিন্তু কোন অজানা কারণে প্রক্রিয়াটি মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বিল পাশ করার পরেও সিএএ আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় দেশভাগের শিকার এই উপত্যাকার বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের শেষ আশাও বন্ধ হয়ে পড়েছে।
সরকারি চাকরিতে এই উপত্যকার নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চনা করা হয়।
১৯৬১ সালে মাতৃভাষার (বাংলার) অধিকারের জন্য যে এগারোজন শহীদ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের এখনও সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
উপত্যকাটি প্রায় সব দিক দিয়েই উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। এখানে কোন শিল্প না থাকায় স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগও নগন্য।
কাছাড় পেপার মিল, সুগার মিল এখানকার বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি অবহেলায় বন্ধ হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থারও বেহাল দশা।
শিলচরকে সৌরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত করার প্রস্তাবিত পূর্ব-পশ্চিম করিডোরের কাজ গত ১০ বছর ধরে চলছে, অথচ আজও সম্পূর্ণ হয়নি।
শিলচর-গুয়াহাটি সহ ভারতের বাকি অংশের সাথে সংযোগকারী একমাত্র মহাসড়কটি ঘন ঘন ভূমিধসের শিকার হয়, যার ফলে যোগাযোগ ব্যাহত হয়।
এই উপত্যকার সব শহরেই নাগরিক পরিষেবার শোচনীয় অবস্থা।
আমরা দিসপুরের সরকারকে বারবার এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছি, বিক্ষোভ, ধর্মঘট ইত্যাদি সংগঠিত করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্ষমতাসীন সরকার কোন সুরাহা করেননি।
সমষ্ঠি পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া চলাকালীন বরাক উপত্যকার সীমিত রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরকে চক্রান্ত করে সঙ্কুচিত করতেই দুটি বিধানসভা আসন কর্তন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
এই পটভূমিতে, আমরা আসাম থেকে বরাক উপত্যকাকে আলাদা করার আহ্বান জানাতে বাধ্য হয়েছি এবং প্রায় ৪২ লক্ষ জনসংখ্যার বরাক উপত্যকার তিনটি জেলা নিয়ে একটি পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করেছি।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী বরাক সফরে এসে বলেছিলেন যে, এই উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সমর্থন করলে তার সরকার এই পৃথকীকরণের দাবিতে আপত্তি করবে না।
আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে আমাদের দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু সম্প্রতি আসামের একটি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন আলফা-স্বাধীন, সংবাদ মাধ্যমকে জারি করা একটি চিঠিতে আমাদের এই পদক্ষেপের আপত্তি জানিয়ে আসামের বাঙালিদের এই ব্যাপারে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে, নতুবা ভয়ানক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
পাশাপাশি বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সদস্যদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আপনি সম্ভবত জানেন যে আলফা-স্বাধীন একটি দেশবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন যা আসামের জন্য একটি আলাদা রাস্ট্রের দাবি করছে।
এই সংগঠনটি বিগত দিনে নিরীহ মানুষ হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য কুখ্যাত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল।
সুতরাং, এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আপনাকে অবিলম্বে আসামের বাঙালিদের এবং বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নামক আমাদের সংগঠনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এটা উল্লেখ করা বাহুল্য যে সারা দেশের এবং আসামের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বর্তায়।
সুতরাং, আসামের বাঙ্গালীর পাশাপাশি আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের উপর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা হামলা হলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকার এককভাবে দায়ী থাকবে।
আগামী পনেরো দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
একই সাথে এতদ্বারা আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ভারতের মাননীয় প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং মাননীয় আদালতকে এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানাচ্ছি।
ধন্যবাদান্তে,
প্রদীপ দত্ত রায়
প্রধান আহবায়ক, বারাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
অবগতি ও পদক্ষেপের নেওয়ার জন্য প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে –
1. আসামের মাননীয় রাজ্যপাল। 2. আসামের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী।
3. আসামের সমস্ত লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদ।
4. ডিজিপি, আসাম 5. ডিআইজি, সাউদার্ন রেঞ্জ, আসাম 6. এসপি, কাছাড়কে।