অন্দর মহল : বিজেপি রাজনীতিতে খুব কম সময়েই নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সফল এক সময় কংগ্রেস থেকে লেজেগুবরে হয়ে আশ্রয় নেওয়া হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
দুরন্দধর এবং বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া এই নেতা একদিকে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং অন্যদিকে সিবিআই-ইডির ভয়ে বিজেপিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
প্রথম কয়েক বছর দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে নিজেকে বিজেপিতে গুছিয়ে নেন।
এরপর একে একে কংগ্রেস থেকে পুরনো সতীর্থদের বিজেপিতে টেনে এনে দলের পুরনো কর্মকর্তাদের কোনঠাসা করে আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।
২০২১ শের বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁর আসল স্বরূপ প্রকাশ্যে আসে।
এআইইউডিএফকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের হুংকার দিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়ালের কাছ থেকে কুর্সি ছিনিয়ে নেওয়ার কথা সবাই জানেন।
এরপর থেকে ইডি, সিবিআই এবং পুলিশ যাদের জেরার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তাদের উপরও ছড়ি ঘুরাতে শুরু করেন। বর্তমানে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা সবই তাঁর পকেটে।
যখন যেভাবে ইচ্ছে হয় সেভাবেই আইনকে পরিচালনা করছেন।
বাঙালিদের কোনঠাসা করতে তাঁর নির্দেশেই আসামে ডিলিমিটেশন হয়েছে।
হিন্দুত্বের দুহাই দিয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে কিভাবে হিন্দুদের ক্ষতি করছে তা সময়ই দেখিয়ে দেবে।
হিন্দু বাঙালি, হিন্দু অসমীয়া, হিন্দু হিন্দিবাসী, বড়ো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে কেবল ক্ষমতার লোভে বিভক্ত করা হচ্ছে।
বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার প্রতিও তাঁর এলারজি দীর্ঘ দিনের। উপত্যকার হিন্দু বাঙালি এবং চা জনগোষ্ঠী সহ হিন্দিবাসিরা সংঘবদ্ধ।
সংখ্যালঘু মুসলিমরাও বরাকের উন্নয়নে হিন্দুদের সাথে ঐক্যবধ্য।
কিন্তু বার বার এই ঐক্যবদ্ধতায় ভাঙ্গন ধরিয়ে অসমীকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
তাঁর টার্গেটে হিন্দু বাঙালি।
আসামের বিজেপির উত্থানের পেছেনে হিন্দু বাঙালিদের অবদান অপরিসীম।
এছাড়াও হিন্দু বাঙালিরা কোন দিনই কারও ব্যক্তিগত বৈস্যতা স্বীকার করেনা, নিজেদের অস্থিত্ব এবং সত্বা রয়েছে।
কিন্তু হিমন্ত বিশ্ব কখনই চাননা বিজেপিতে হিন্দু বাঙালিদের অবদান, অস্থিত্ব এবং সত্বা থাকুক।
তাই তিনি কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসার পর এটাকে টার্গেট করেছেন।
এদিকে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীত্ব নিয়ে বরাকের রাজনিতিতেও এক ঢিলে তিন শিকার করেছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
গোপন অভিসন্ধির আশ্রয় নিয়ে করিমগঞ্জ আসন সংরক্ষণ মুক্ত করে সাধারণের জন্য থাকা শিলচর আসন সংরক্ষিত করেছেন।
এতে বর্তমান সাংসদ এবং বিজেপির ফের দাবীদার রাজদিপ রায়কে অনায়াসেই সরিয়ে দিয়ে আধিপত্য বিস্তারে একধাপ এগিয়ে যেতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাজ্য বিধানসভায় নিজের আধিপত্য রাখতে মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যকে সরিয়ে আনুগত্য কৌশিক রাইকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করার পথ প্রশস্ত করেছেন।
এতে বাঙালি হিন্দুদের দুর্বল করা সহজ হবে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই কুটচালের পেছনে রাজনৈতিক সচেতন মহল ছাব্বিশের আসাম বিধানসভা নির্বাচনকে দেখতে পাচ্ছেন।
কারন, বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এক বৃহৎ অংশ হিমন্ত বিশ্বের আগ্রাসী সহ্য করতে পারছেন না।
সাধারণ মানুষও রাজ্যের বর্তমান হিমন্ত সরকারের উপর সন্তুষ্ট নয়।
মুখ্যমন্ত্রী মুখে দুর্নীতি মুক্ত এবং উন্নয়নের বুলি আওড়ালেও দুর্নীতি আরও বেড়েছে এবং যেভাবে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি সহ বাড়তি করের বুঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেভাবে উন্নয়ন কিছুই হচ্ছেনা।
এতে আসাম সরকারের উপর মানুষ প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও অনুধাবন করতে পারছেন।
সামনে লোকসভা নির্বাচন, তাই এই মুহূর্তে এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস দেখাচ্ছে না বিজেপি নেতৃত্ব।
তবে ছাব্বিশের নির্বাচনে আগে দল আসামের রাজনীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও এই সত্যটাই আচ করতে পেরে আগে থেকেই চাল দিতে দাবার গুটি সাজিয়ে রাখছেন।
যদি এরকম কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে যাতে সতীর্থদের নিয়ে এআইডিইউএফ বা অন্য কোন দলের সঙ্গে আতাত করে সরকার গঠন করতে পারেন। কারন তাঁর রাজনীতির আসল উদ্দেশ্যই সস্তায় ক্ষমতার ফায়দা তোলা।