আইজাওল, ৫ সেপ্টেম্বর : আসামের-মিজোরাম সিমান্তের বিতর্কিত এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করার আসামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনল মিজোরাম পুলিশ।
মিজোরাম পুলিশের অভিযোগ দুই রাজ্য যখন শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্তঃরাজ্য সীমা সমস্যার সমাধান একাধিকবার আলোচনার টেবিলে বসেছে সেই সময় অসম পুলিশের ক্রিয়াকলাপ সীমান্তে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
উল্লখ্য যে, গত বছর দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে সীমা বিবাদ নিয়ে সহিংস সংঘর্ষে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপরই দুই রাজ্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে তৎপর হয়ে ওঠে।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিনিধিস্তরে হলেও কোন সমাধান বের হয়ে না আসায় গত সেপ্টেম্বর মাসে নতুন দিল্লীর আসাম হাউসে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্তরে আলোচনা হয়।
মিজোরামের কোলাসিব জেলার এসপি ভ্যানলালফাকা রাল্টে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ২০১৮ সালে আন্তঃরাজ্য সীমান্তের মিজোরামের চ ছুঙ্গার ধানক্ষেতের বিপরীতে যে বিতর্কিত জায়গায় আসাম-মিজোরামের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছিল সেখানে দুটি অস্থায়ী বাঁশের কুঁড়েঘর তৈরি করা হয়েছে।
এই এলাকাটি আসামের হাইলাকান্দি জেলার সাথে সংলগ্ন। মিজোরাম সরকারের প্রতিক্রিয়ার পর সোমবার আসাম পুলিশ নিজেই দুটি কুঁড়েঘর ভেঙে দিয়েছে।
আসাম পুলিশ জানিয়েছে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা দুই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালচামলিয়ানার ও আসামের সীমান্ত উন্নয়ন ও সুরক্ষা মন্ত্রী অতুল বোরার সাথেও কথা বলেছেন।
রাল্টে বলেছেন যে আসামের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে এলাকায় একটি জরিপ চালিয়েছিলেন, জরিপ এবং কুঁড়েঘর নির্মাণের প্রচেষ্টা জানতে পেরে কোলাসিব ডেপুটি কমিশনার এবং তিনি নিজে হাইলাকান্দির পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেন।
হাইলাকান্দি পুলিশ সুপারকে এলাকাটি বিতর্কিত জমির মধ্যে রয়েছে যেখানে উভয় রাজ্য সরকারই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে জানানোর পর আসাম পুলিশ বাঁশ বেতের তৈরি অস্থায়ী ঘরগুলো ভেঙ্গে দেয়।
আসামের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে তারা জানেন না যে এটি বিতর্কিত এলাকা। কুঁড়েঘর গুলো ভেঙ্গে দেওয়ার পরে আন্তঃরাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
রাল্টে আরও বলেন যে, তারা সন্দেহ করেছিলেন আসাম সরকার এই অঞ্চলে স্থায়ী পুলিশ ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে। বিতর্কিত এলাকায় কাঠামো নির্মাণ দুই রাজ্যের মধ্যে চলমান সীমান্ত আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এদিকে, মিজোরামের শীর্ষ ছাত্র সংগঠন মিজো জিরলাই পাওল (MZP) ঘটনার জন্য আসাম সরকারকে তীব্রভাবে দায়ী করেছে।
মিজোরামের প্রভাবশালী ওই ছাত্র সংগঠনের জারি করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অসম পুলিশ স্থিতাবস্থাকে উপেক্ষা করে বিতর্কিত এলাকায় কুঁড়েঘর নির্মাণ করা মিজোরামের জনগণের পাশাপাশি দুই রাজ্যের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার অপমান।
ছাত্র সংগঠন বলে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে একই এলাকায় তারা যখন একটি কাঠের কুঁড়েঘর তৈরি করার চেষ্টা করেছিল সেই সময় হিংসাত্মক সংঘর্ষ হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলি চালালে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
মিজোরাম এবং আসামের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ একটি দীর্ঘ অমীমাংসিত সমস্যা, যা আজ পর্যন্ত অমীমাংসিত রয়ে গেছে। গত বছর জুলাই মাসে আসামের একজন বেসামরিক নাগরিক সহ সাতজন মারা গিয়েছিলেন।
উভয় রাজ্য বর্তমানে উত্তপ্ত সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, উভয় পক্ষই একমত যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্তে কোনো কার্যক্রম চালানো যাবে না। এই মাসের মধ্যেই গুয়াহাটিতে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার পরবর্তী পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।