জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ৩ নভেম্বর : ‘গণ আওয়াজ’-এর সংবাদে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলার বৃহস্পতিবারের রায়ে।
করিমগঞ্জে প্রস্তাবিত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে গৌহাটি হাইকোর্ট।
মেডিকেল কলেজের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আইনজীবী হিফজুর রহমান চৌধুরীর দায়েরকৃত দ্বিতীয় জনস্বার্থ মামলায় বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়া এই রায় দিয়েছেন।
এদিন অনেক সময় শুনানি চলে। সরকার পক্ষের হয়ে সওয়াল করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল দেবজিত শইকিয়া।
গুয়াহাটি থেকে আইনজীবী হিফজুর রহমান চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেছেন, জেলা সদর থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার জন্য মেডিকেল কলেজ অফ ইন্ডিয়ার গাইডলানে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে।
বিভিন্ন যুক্তি এবং ঘটনা প্রবাহ আদালতের সম্মুখে তুলে ধরি, আদালত সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেডিকেল কলেজের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছি। ভবিষ্যতে এটা অনেক কাজে দেবে।
করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার দাবি দীর্ঘদিনের। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাতাবাড়িতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে বলে ঘোষণা করলেও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়নি।
এ নিয়ে গৌহাটি হাইকোর্টে করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজ নিয়ে দায়েরকৃত দ্বিতীয় জনস্বার্থ মামলার চূড়ান্ত রায় দিয়েছে বৃহস্পতিবার। জনস্বার্থ মামলার নাম্বার হচ্ছে পিআইএল/৮১/২০২১।
হিমন্তবিশ্ব শর্মা (তখন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী নন) নির্বাচনী প্রচারাভিযানে এসে করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সদনে বাজেট বক্তৃতায় করিমগঞ্জ মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার ঘোষণা করে সরকার। সরকারের হয়ে এ কথা অবগত করান অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগ।
তবেপর কাজ আর অগ্রসর না হওয়ায় গৌহাটি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা (৬৩/২০২০) দায়ের করেন করিমগঞ্জের বাসিন্দা গৌহাটি হাইকোর্টের তরুণ আইনজীবী হিফজুর রহমান চৌধুরী।
২০০০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট জনস্বার্থ মামলার রায় দান করে। সেই রায়ে উল্লেখ করা হয়, মামলাকারী স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সচিবকে আবেদন জানালে তিনি যেন সাতদিনের ভিতরে এর জবাব দেবেন।
আদালতের নির্দেশ মত মামলাকারীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রধান সচিব উত্তর না দেওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সচিব সমীর সিনহার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার জন্য একটি মামলা করেন হিফজুর।
এর নাম্বার (সি) ৯১/২০২১। হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দিলে মামলাকারীকে ই-মেইল মারফত উত্তর দেন প্রধান সচিব।
বিধানসভায় দাখিল করা অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগের বাজেট বক্তৃতার একটী কপিও দেওয়া হয়। প্রধান সচিব জানান, করিমগঞ্জে বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন মতামত থাকার ফলে জমি নির্ধারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। জমি নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পর ডিপিআর তৈরি হবে।
এরমধ্যে ২০২১ সালের ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সচিব করিমগঞ্জের তৎকালীন জেলাশাসক এন আনবামুথানকে চিঠি লিখে জেলা সদরে থাকা সিভিল হাসপাতাল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫০ বিঘা জমি চিহ্নিত করার জন্য বলেন।
পরে করিমগঞ্জে এসে মেডিকেল কলেজের জন্য কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন শীর্ষ স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুরাগ গোয়েল। গোয়েল করিমগঞ্জের প্রাক্তন জেলাশাসক।
অন্যদিকে, করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজের অবস্থান জানতে চেয়ে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান সচিবের কাছে একটি আরটিআই করা হয়। আরটিআই করেন আইনজীবী হিফজুর রহমান চৌধুরী। পরে উত্তর আসে, জমি চিহ্নিত হলে ডিপিআর তৈরি হবে যথারীতি।
অন্যদিকে, আরেকটি জনস্বার্থ মামলা করা হয় হাইকোর্টে (৮১/২০২১)। ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এর রায় দেয়। সরকারকে মেডিকেল কলেজের জমির স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলে।
গত ২০ জুন আদালতে এর লিখিত জবাব দেয় রাজ্য সরকার। ২৬ অক্টোবর শুনানি হয়। চূড়ান্ত রায়ে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে।
হিফজুর রহমান চৌধুরী এটাকে জয় বলেই মনে করছেন। তিনি বলেছেন, সরকার বলছে জমি চিহ্নিত করা হয়নি। আদালত দ্বিতীয় জনস্বার্থ মামলার প্রথম শুনানিতে মামলার বিষয়টি আমাকে চিন্তা করে দেখতে বলেছেন।
চূড়ান্ত রায়ে সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজের কাজ সম্পন্ন করার জন্য।
কিন্তু এটা আমার ব্যক্তিগত মামলা নয়। এতে করিমগঞ্জবাসির স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এ নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে। এদিকে, হিফজুরের দ্বিতীয় জনস্বার্থ মামলার চূড়ান্ত রায়ে হাইকোর্ট সরকারকে মেডিকেল কলেজের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়ায় কাজ কতটুকু অগ্রসর হয়, এখন দেখার বিষয় এটাই।