বাদেজমা সালেপুর এমই স্কুলে নজরকাড়া সম্প্রদায় উৎসব
জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১৮ ফেব্রুয়ারি : শুধু আদৰ্শ শিক্ষক থাকলেই হবে না, একটি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সমাজের প্রত্যেকস্তরের জনসাধারনকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ কথা বলেছেন করিমগঞ্জ সর্বশিক্ষা অভিযান মিশনের বিপিও (টিটি) ড০ বিকাশ ভট্টাচার্য।
পাথারকান্দি শিক্ষাখণ্ডের অধীন খাঠালগুল সমল মন্ডল কেন্দ্রের অন্তর্গত বাদেজমা সালেপুর এমই স্কুলে আয়োজিত সম্প্রদায় উৎসবে একথা বলেন তিনি।
বিভিন্ন রকমারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্প্রদায় উৎসব উদযাপিত হয়েছে বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির সভাপতি আজির উদ্দিন বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন।
উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা। পরে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পরিক্রমা করে এলাকায়।
এতে ক্লাস্টারের ৮টি স্কুলের কঁচি-কাঁচা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, বিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ ও অতিথিরা সামিল হয়েছিলেন।
প্রায় সহস্ৰাধিক লোকের সমাগমে স্লোগান সহকারে শোভাযাত্ৰা স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে ইচাগঞ্জ বাজার পরিক্রমা করে অনুষ্ঠানস্থলে এসে শেষ হয়।
পরে বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল মালিক ও অন্যান্য অতিথিদের সহযোগিতায় প্রদীপ প্ৰজ্জ্বলনের মাধ্যমে স্কুলের ভুমি-দাতা প্রয়াত হাজী গণি মিয়া স্মৃতিমঞ্চ উদ্বোধনের পর মুল অনুষ্ঠানের সুচনা হয়।
উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নবনীতা সাহা।
তিনি বলেন, সমগ্ৰ শিক্ষা অসম-এর এক মহতী পদক্ষেপ হচ্ছে সম্প্রদায় উৎসব।
এর প্রধান লক্ষ্য হল সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারনকে স্কুলের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে জড়িত করে একটি আদর্শ ও দৃষ্টান্তমূলক বিদ্যালয় তৈরী করা।
তিনি উপস্থিত সকলকে স্কুলের সর্বাঙ্গীণ উন্নতিতে সক্ৰিয়ভাবে জড়িত হওয়ার অনুরোধ জানান।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির সভাপতি আজির উদ্দিন, সর্বধর্ম সমন্বয় সভার সভাপতি, সম্পাদক যথাক্রমে হরেকৃষ্ণ গোস্বামী ও আমীর হোসেন, প্রাক্তন ছাত্র আসাব উদ্দিন প্রমুখ।
প্রত্যেক বক্তা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
১২৩৮ নং গণিমিয়া নিম্ন প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা গীতা সরকারের পরিচালনায় বিভিন্ন স্কুলের কঁচি-কাঁচা কর্তৃক উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন হয়।
ধামাইল, বিহু, ঘোমর, রবীন্দ্রনৃত্য, বিভিন্ন ধরনের গান যেমন গজল, দেশাত্মবোধক কবিতা, আবৃত্তি, হাস্য-কৌতুক ইত্যাদি মঞ্চস্থ হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে খেলাধুলা, কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী উদ্বোধন, নাচ-গান, সেমিনার (বিষয় : রোল অব কমিউনিটি ইন হলিষ্টিক ডেভেলপমেন্ট অব স্কুল), পুরষ্কার বিতরণ ইত্যাদি ছিল।
সেমিনারে মুখ্য বক্তা ছিলেন ডিপিও (টিটি) ড০ বিকাশ ভট্টাচার্য্য।
তিন স্কুলের সর্বাত্মক উন্নতিতে সমাজের সকল সম্প্রদায়ের যে বিরাট ভূমিকা আছে সেটা বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন। বলেন, স্কুলে আদর্শ শিক্ষকের অভাব নেই।
কিন্ত শুধু আদৰ্শ শিক্ষক থাকলেই হবে না, সমাজের প্রত্যেকস্তরের জনসাধারনকে স্কুলের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি কথা প্ৰসংগে স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক গৌতম দেবের ভূয়ষি প্রশংসা করেন। বলেন, বাদেজমা সালেপুর এমই স্কুলকে একটি আদর্শ ও দৃষ্টান্তমূলক স্কুল হিসেবে গড়ে তুলতে গৌতম দেবের আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে।
তিনি স্কুলের সব অভিভাবক, শুভানুধ্যায়ী ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গৌতম দেব ও প্রধান শিক্ষিকাকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান।
এরফলে বাদেজমা সালেপুর এমই স্কুল পাথারকন্দি শিক্ষাখণ্ড তথা রাজ্যের মধ্যে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তমূলক স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ডিপিও বিদ্যাঞ্জলী পোর্টেল, সম্প্রীতিভোজ ইত্যাদি প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়নে আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেই (ডিএমও) পঙ্কজ নাথ, মন্ডল সমন্বয়ক অর্ধেন্দু পাল, একাউণ্টেণ্ট গৌরব রায়, রত্নদীপ ধর, সেল্ফ ডিফেন্স একাডেমির মোস্তাক আহমেদ, সমাজসেবী এমাদ উদ্দিন, লুবাব উদ্দিন, অনন্ত নাথ, মকলিছুর রহমান, বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির সদস্য-সদস্যা, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সহ অন্যান্যরা।
সম্প্রদায় উৎসবে যেসব বিদ্যালয় অংশগ্রহণ করেছে সে গুলি হল- ৯৯ নং দত্তপাড়া এলপি স্কুল, ৬৭৪ নং খাটালগুল এলপি স্কুল, ৮৪১ নং কাকরিপার এলপি স্কুল, ১০৭৫ নং দক্ষিণ তেঘরিয়া এলপি স্কুল, ১২৩৮ নং গণিমিয়া এলপি স্কুল, গাংপার বরুইরটুক এলপি স্কুল, বাদেজমা সালেপুর এমই স্কুল।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক আশিস দাশ চৌধুরী, সঞ্জীব দাশ, জামিল হোসেন, সালিকুর রহমান, অসিত দেব, প্ৰসেনজিত নাথ, পূজা মালাকার, বাবলী চৌধুরী, বিক্রমজিত রাজকুমার, শিশির নাথ, দেবাঞ্জলি দত্ত, মোহর দাম, মনোজ ভট্টাচাৰ্য প্রমুখ।
সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সূচন্দনা দেব সরকার।