নিউইয়র্ক : কর্ণাটক নির্বাচনে জয়ের পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তেলেঙ্গানা এবং অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপিকে পতন করতে আত্ম বিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন।
তিনি অত্যান্ত উৎসাহের সঙ্গে বলেছে যে কেবল কংগ্রেস দল নয়, ভারতের জনগণ বিজেপির ঘৃণা-ভরা আদর্শকে পরাজিত করতে চলেছে।
গান্ধী ওয়াশিংটন এবং সান ফ্রান্সিসকো পরিদর্শন করে নিউইয়র্কে পৌঁছেন এবং রবিবার ম্যানহাটনের জাভিটস সেন্টারে একটি কমিউনিটি সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
তিনি বলেন আমরা কর্ণাটকে দেখিয়েছি যে বিজেপিকে ধ্বংস করতে পারি, তাদের পরাজিত করিনি কর্ণাটকে ভেঙে দিয়েছি।
শনিবার ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেস-ইউএসএ আয়োজিত একটি নৈশভোজে গান্ধী একথা বলেন।
তিনি বলেছেন কর্ণাটক নির্বাচনে বিজেপি সবধরনের চেষ্টা করেছে, তাদের কাছে পুরো মিডিয়া ছিল, আমাদের থেকে ১০ গুণ টাকা বেশী ছিল এমন কি তাদের সরকার এবং এজেন্সি ছিল।
তারপরেও আমরা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি বলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
তিনি সমাবেশে উচ্চস্বরের উল্লাস ও করতালির মধ্যে বক্তব্য দিতে গেয়ে বলেন, আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই যে আগামীতে তেলেঙ্গানায়ও বিজেপিকে ধ্বংস করতে যাচ্ছি।
এই নির্বাচনের পর তেলেঙ্গানায় বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এবছরের শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
কমিউনিটি ইভেন্টে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসও সহ কংগ্রেস সমর্থক, কর্মকর্তা, দলের সদস্য এবং প্রবাসী সদস্যরা বিপুল সংখ্যক জড়ো হয়েছিলেন।
রাহুল বলেছেন তেলেঙ্গানা নির্বাচন ছাড়াও রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের নির্ধারিত নির্বাচনে কর্ণাটকের মত বিজেপিকে ভেঙ্গে দিতে দল কাজ করবে।
তিনি বলেন শুধু কংগ্রেসই যে বিজেপিকে হারাতে চলেছে তা নয়, ভারতের মানুষ, মধ্যপ্রদেশের মানুষ, তেলেঙ্গানার মানুষ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের মানুষ যারা বিজেপিকে পরাজিত করতে চলেছে।
গান্ধী বলেন, এর কারণ হল ভারত বুঝতে পেরেছে বিজেপি সমাজে যে ধরনের বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না।
তাই আগামী দিনে কয়েকটি রাজ্যে সেটাই হতে চলেছে।
শুধু তাই নয় ২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপিকে কর্ণাটকের মত পর্যুদস্ত করে ক্ষমতা দখল করতে কংগ্রেস সহ সমস্ত বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান।
তিনি বলেন এটা একটা আদর্শিক লড়াই।
একদিকে বিজেপির বিভেদমূলক মতাদর্শ, বিজেপির বিদ্বেষে ভরা আদর্শ, অন্যদিকে কংগ্রেস দলের স্নেহময়, প্রেমময় আদর্শ রয়েছে তিনি বলেন।
রাহুল বলেন, কর্ণাটকে বিজেপি নির্বাচনকে মেরুকরণ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে রাগ ও ঘৃণা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এটা কি কাজ করেছে? শ্রোতাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তরে জানায় না।
ভারত জোড়ো যাত্রার সময় তৈরি করা তাঁর একটি স্লোগানকে উল্লেখ করেন এবং বলেন তিনি সেই সময় বলেছিলেন নফরত কি বাজার মে মহব্বত কি দুকান খোলেঙ্গে।
অ্যাডামস বলেন, আমেরিকার নয়া দিল্লী এখানেই নিউ ইয়র্ক সিটিতে।
এই সম্প্রদায় সবচেয়ে উচ্চ-শিক্ষিত, সবচেয়ে উচ্চ ব্যবসায় পরিচালিত এবং মালিকানাধীনদের মধ্যে একটি।
উপস্থিত জনতার করতালি এবং উল্লাসের মধ্যে তিনি বলেন, আমরা আপনাকে বলছি যে আপনি আপনার গৃহীত জমিকে আলিঙ্গন করার সাথে সাথে আপনার জন্মভূমি ছেড়ে দেবেন না।
এনওয়াইসি মেয়র বলেন আপনি ভারতীয়-(ড্যাশ) আমেরিকান, আপনি আমেরিকাকে আলিঙ্গন করার সাথে সাথে ভারতীয় অংশটি সরিয়ে ফেলবেন না।
তিনি যোগ করেন যে ভারত ঐতিহাসিকভাবে শুধুমাত্র আপনার দেশের ভৌগলিক সীমানাকেই নয় বরং ভারতীয় সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বকে যা দিয়েছে তা কেবল অসাধারণ
কিন্তু ঐতিহাসিক অনুপাত এখনও প্রতিফলিত হতে পারেনি।
তিনি বলেন, মহান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সকলেই মূলত আপনার সমাজের সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে ধার নিয়েছেন, তারা প্রাচীন বেদ এবং প্রাথমিক লেখা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন।
আগের দিন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের বাড়িতে, রুজভেল্ট হাউসে নিউইয়র্কের নেতৃস্থানীয় চিন্তাবিদদের সাথে গান্ধী একটি চিন্তা-উদ্দীপক ফায়ারসাইড চ্যাট করেছিলেন।
সেখানে গান্ধী বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী সদস্যরা আমাদের রাষ্ট্রদূত, আমেরিকা বিশ্বকে দেখিয়েছে ভারতীয় হওয়ার অর্থ কী।
তিনি বলেন যে বিজেপিতে আমাদের বন্ধুদের সাথে লড়াই করছি, কারণ তাদের আমাদের দেশ সম্পর্কে খুব সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
শ্রোতা ও প্রবাসীদের উদ্দেশে গান্ধী বলেছেন আপনারা অন্যান্য ধর্মকে সম্মান করেন, অন্য সংস্কৃতিকে সম্মান করেন, অন্য লোকেদের সম্মান করেন, মহিলাদের সম্মান করেন।
বিজেপির সাথে লড়াই করার এটাই সর্বোত্তম উপায়, লড়াইটা কঠিন নয় আমরা যে আদর্শে বিশ্বাস করি সে অনুযায়ী জীবনযাপন করা তিনি বলেন।