শিলচর, ১১জুলাই : বিশ্বহিন্দু পরিষদ সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতৃবর্গের সাথে অভদ্র আচরণ, পুরুষ পুলিশ কর্মীদের দিয়ে বিদ্যার্থী পরিষদের মহিলা কার্য্যকর্তার গায়ে হাত লাগানো, অনৈতিক উপায়ে ১২জন যুবককে আটক করে সাদা কাগজে হস্তাক্ষর নিয়ে মুক্ত করা। এসব বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো বিশ্বহিন্দু পরিষদের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত।
উল্লেখ্য, বরাক উপত্যকা বিশেষ করে হাইলাকান্দি জেলার হিন্দু মঠ মন্দিরে নিক্ষেপ, হিন্দু নারীদের অপরহন, ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বহিন্দু পরিষদ সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যৌথ আহ্বানে সোমবার সকালে হাইলাকান্দি জেলার চারটি স্থানে প্রতিবাদী ধর্না কার্য্যসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী ধর্নায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত সভাপতি শান্তনু নায়েক, সম্পাদক স্বপন শুক্লবৈদ্য সহ প্রান্তের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বজরং দল, দুর্গা বাহিনী, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, মাতৃ শক্তি, সহকার ভারতী, রবিদাস উন্নয়ন সংস্থা সহ সংঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখা এবং বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা এই প্রতিবাদী ধর্না কার্য্যসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
লালা, কাটলিছড়া ও আলগাপুর সার্কল অফিসের সামনে ধর্না কার্য্যসূচী নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলেও হাইলাকান্দি এসপি অফিসের সম্মুখে প্রতিবাদী ধর্নায বেশ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পুলিশ সুপার নীলা দোলের নেতৃত্বে বল প্রয়োগ করে প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করলে অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মাইক বন্ধ করেও বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক সদস্যা যুবতীর গায়ে ধাক্কা দিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তাও।
ওই যুবতী সংবাদ মাধ্যম মারফত উপযুক্ত বিচার প্রার্থনা করেছেন।
ধর্নার সময় এক প্রতিবাদকারী সামনে থাকা পুলিশকে পেয়ে পানীয় জলের কথা বললে সেই পুলিশ কর্তা বৃষ্টির জল পান করার কথা বলেন।
পুলিশের এই অমানবিক মন্তব্যে তীব্র অসন্তোষ ব্যাক্ত করেছেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
হাইলাকান্দিতে আটক করা হয় ১২ জন প্রতিবাদকারীকে ধর্ণার পর সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।
এসব নিয়ে মঙ্গলবার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্বহিন্দু পরিষদের প্রান্ত সভাপতি শান্তনু নায়েক ও সম্পাদক স্বপন শুক্লবৈদ্য।
প্রান্ত সম্পাদক স্বপন শুক্লবৈদ্য জানান, সোমবার তিনি সহ কয়েক জন হিন্দুত্ববাদী নেতা এসপি লিনা দোলের সাথে দেখা করে প্রতিবাদকারীদের ধর্না কার্য্যসূচিতে কেন বাঁধা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তাদের সাথেও অশুভ আচরন করেছেন।
হিন্দু সংগঠনের কার্যকর্তারা বলেন, হাইলাকান্দি জেলায় সংঘটিত উদ্বেগজনক ঘটনার মোকাবেলা করার জন্য এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁরা বর্ণিব্রিজে এক নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং খুন করা হলেও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারে হাইলাকান্দি পুলিশের ব্যর্থ হয়েছে বলেছেন।
এছাড়া গত ৩০ মার্চ হাইলাকান্দি বাজারের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়িতে অবৈধভাবে গো হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যেসব কর্মকাণ্ড শুধু আইনি বিধি লঙ্ঘনই নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করার সম্ভাবনার অভিযোগ করেন।
সরসপুরের একটি স্কুল চত্বরে বেআইনিভাবে গো হত্যা করে মাংস বিক্রি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান এবং প্রাণী কল্যাণ বিধি এবং সরকারি নির্দেশনাও লঙ্ঘন করা হয়।
দুর্গীমারার গণেশ মন্দিরে গরুর মাথা কেটে রাখা হলেও এই অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বর্তমান পুলিশ সুপার লিনা দোলের ভুমিকা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ভিএইচপি নেতারা।
ভিএইচপি প্রশ্ন তুলে যে হিন্দু নারী অপহরণ, ধর্ষন, হত্যা, গো হত্যা এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কি প্রতিবাদ করার অধিকার নেই আমাদের?
মঙ্গলবার এমন প্রশ্ন তুলেন শান্তনু নায়েক ও স্বপন শুক্লবৈদ্য।
ভারতে বসবাস করে ভারতেই যদি অবহেলিত হতে হয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আমাদের মা বোনদের কি কোনো সম্মান নেই!
সোমবার হাইলাকান্দি জেলায় শান্তিপূর্ণ চলা প্রতিবাদী ধর্নায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য হাইলাকান্দির জেলা পুলিশ সুপার লিনা দোলেকে তারা দায়ি করেন।
তাই জেলায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে অনতিবিলম্বে পুলিশ সুপারকে বদলির দাবি জানান নেতৃবর্গরা। অন্যথায় গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন ভিএইচপি নেতৃবর্গরা।