আজ আমরা প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হয়ে সফলভাবেই চাঁদে পা রেখে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মানসিকতা কি উন্নতির শিখর ছুইছে?
গত ২৩ আগষ্ট আমরা সবাই চন্দ্রযান নিয়ে অনেক খুশি এবং গর্ব অনুভব করেছি। করবোই বা না কেন, ভারতের এতদিনের পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে যার ফলস্বরূপ চন্দ্রযান-৩ সফল ভাবে চন্দ্রে পা রেখেছে।
তাতে ভারতবর্ষের প্রযুক্তিবিদ্যা তথা বিজ্ঞান সফল হয়েছে, ভারতবর্ষ সফল হয়েছে, আমরা সফল হয়েছি, তাই গর্বিত না হওয়ার বা আনন্দিত না হওয়ার কোন কারণই নেই।
কিন্তু আজ আমরা “সফলতাকে” যেভাবে বুকে আগলে নেই ভারতের সফলতা বলে, আমাদের সফলতা বলে, আমার সফলতা বলে ঠিক সেভাবে ভারতবর্ষ বা ভারতকে গৌরাব্বিত করা কারো কোথাও ব্যর্থতা বা অসফলতার ছোঁয়া যদি গায়ে লাগে তখন কি আমরা ঠিক একই ভাবে বুকে টেনে নেই?
তখন কি আমরা ভারতের অসফলতাকে নিজের ব্যর্থতা বলি? না, আমরা সময় নেই বা জানি না বলে পাস কাটিয়ে চলে যাই। বা অনেকেই গুরুত্বহীন বলে চুপ হয়ে যাই।
কারণ আমাদের অনেকের মানসিকতা এখনো সুপ্ত অবস্থায় বিকলাঙ্গ।
কিন্তু আজ বিশ্বের দরবারে ভারত এগিয়ে চলছে, প্রযুক্তিবিদ্যা, শিক্ষা, খেলাধুলা ও অনেক কিছু। তার প্রমাণ আজকের চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে।
যা আজ পর্যন্ত কোন দেশই করতে পারেনি।
আমাদের ভারতবর্ষ বিশ্বের সমস্ত খেলাধুলায় ও এগিয়ে, তা অলিম্পিক হোক বা অন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
গোল্ড মেডেল থেকে শুরু করে সিলভার, ব্রোঞ্জ বারবার দিয়ে গেছে আমাদের ভারতীয় খেলয়াড়রা।
আজ অলিম্পিক বা চন্দ্রযান বলুন, এমনকি খেলাধুলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমাদের বর্তমান অবস্থান অনেক এগিয়ে।
যখন আমরা ভালো ফল করি তখন আমরা গর্ব করি, সেগুলোকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে চিৎকার করে বলি আমাদের ভারতবর্ষ সফল, আমরা সফল।
কিন্তু কেন? আমরা আজ পর্যন্ত কোন ব্যর্থতাকে আগলে ধরে রাখতে ইচ্ছা প্রকাশ করি না। কেন? কোন অসফলতা আসলে আমরা চুপ করে না জানার ভান করে বসে থাকি।
এটা কি আমাদের মানসিকতার অনুন্নতর পরিচয় নয়! আমাদের মানসিকতার অনুন্নতর জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ার মত অনেক অলিম্পিক খেলোয়াড়রা।
যখন গোল্ড, সিলভার, ব্রোঞ্জ এর মতো শতশত মেন্ডেল নিয়ে বিশ্বের দরবারে ওরা আমাদের ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করে সেই সময় আমরা ভারতীয়রা গর্ব অনুভব করি, তাদের গুনগান করে উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি এমনকি বিভিন্ন ভাবে পুরস্কৃতও করি।
কিন্তু ওই কুস্তিগির সাক্ষী মালিক যখন দিল্লির যন্তর মন্তরে নিজের উপরে হওয়া অত্যাচারের কথা জনসম্মুখে চিৎকার করে তুলে ধরেছিল, তখন আমার অনেকেই নিচুপ ভুমিকা পালন করেছি।
অথচ আমরা দেখেছি তাদের উপরে হওয়া যৌন নির্যাতন ও পরবর্তিতে আসা সমস্ত খেলয়ারদের সুরক্ষায় কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান বিজভুষন সিং-এর বিচার চেয়ে যন্তর মন্তরে আমরন অনশনে বসেছিলেন।
ঠিক তখনই আমারা অনেকেই কিন্তু কিছু না বলার যেন প্রতিজ্ঞা করেনিয়েছিলাম, এটাই হল আমাদের অনুন্নত মানসিকতা।
আমরা সফলতাকে ঠিক আগলে রেখে চিৎকার করে বলি মেরা দেশ মহান।
কিন্তু তার বিপরীতে দেশের বা দেশকে গৌরাব্বিত করা কোন নাগরিকের যদি ব্যর্থতা বা কোন প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দেয়, তখন আমার অনেকেই নিজের পারস্পরিক বন্ধুত্ব তথা পরিচয় বাঁচাতে উচিত কথাগুলো বলতে দ্বিধাবোধ করি।
এটাই হল অনুন্নত মানসিকতা। আজ হয়তো আমাদের নিশ্চুপ ভূমিকার জন্য অনেকের এমনকি ভারতের অনেক ক্ষতি সাধনও হয়।
তাই আমার সফলতাকে নিয়ে যে ভাবে চর্চা এবং গৌরব অনুভব করি ঠিক সেইভাবে যদি আমাদের ব্যর্থতা নিয়েও সবাই নিজের চিন্তা না করে রাষ্ট্রহীতে সমালোচনা সহ প্রতিবাদ করলে হয়তো সাক্ষী মালিক, মনিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো এত জঘন্যতম কার্যকলাপ নির্ভীক ভাবে আগামীতে কেউ করার সাহস দেখাত না।
আজ সবাই যদি একসঙ্গে রাষ্ট্র সেবা, সমাজ স্বার্থর উপরে দৃষ্টি রেখে নিজের তথা পরিচয়-বর্গের অনুচিত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ভাবে বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ তুলি তবেই আমাদের মানসিকতা উন্নতির শিখর ছুইতে পারে।
নিজ ব্যক্তিগত স্বার্থ ছেড়ে যদি আমরা রাষ্ট্রের স্বার্থে কথা বলি তখন ভারতবর্ষ বিশ্বগুরুর আসন পেতে পারে।
আমরা প্রতিবাদ করি কিন্তু প্রতিরোধ করার কোন রাস্তা বের করি না তার জন্যেই দিনের পর দিন অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা সহ অমানবিক কার্যকলাপ বেড়ে চলেছে।
আর হয়তো আমরা অনেকেই প্রতিবাদ করি কিন্তু সেই প্রতিবাদ সঠিকভাবে কতটুকু কার্যকরী হয়েছে তা বলা অসম্ভব।
কারন আমরা অনেকেই প্রতিবাদ করি কিন্তু প্রতিরোধের রাস্তা বের করি না। তার জন্য হয়তো আজ দেশের মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।
রাজু দাস-এর কলমে।