আসামের বাঙালিদের স্থিতি স্পষ্ট করতে ৬০ দিনের সময় আলফার? প্রত্যুত্তর কংগ্রেস নেতার

Spread the love

আলফা সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবী থেকে সরে আসলে, বাঙালিরা আহ্বানে সাড়া দেবে : চিত্তরঞ্জন পাল  

নগাঁও : অসমকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করার দাবি উত্থাপন করে ১৯৭৯ সাল থেকেই আলফা সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। একই সঙ্গে, তাঁরা এ রাজ্যে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞও চালিয়েছে।

অথচ সংবিধানের আওতায় থেকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য হিসেবে পৃথক বরাক ল্যাণ্ডের দাবি ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই রক্তচক্ষু দেখাতে শুরু করেছে আলফা।

বরাক পৃথকীকরণের বিষয়টিকে নিয়ে আলফা অসমের বাঙালিদের ষাট দিনের মধ্যে তাদের স্থিতি স্পষ্ট করতে বলেছে।

আলফার এই হুমকির পর মুখ খুলেছেন অসম প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা অসম ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন পাল।

তিনি আলফার এই প্রত্যুত্তর দিয়ে বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে একপ্রকার ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে আসা আলফা যদি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের দাবি থেকে সরে আসতে পারে, তবে নিশ্চিত ভাবেই আলফার এই আহ্বানে অসমের বাঙালিরা সাড়া দেবেন।

তার আগে, এ বিষয়ে নীতিশিক্ষা দেওয়ার কোনও নৈতিক অধিকার নেই আলফার।

চিত্তরঞ্জন পাল বলেন, ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর ধলা সাদিয়ার বিছনিমুখ গ্রামের পাঁচজন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছে আলফা।

তাঁদের কী অপরাধ ছিলো, আজ পর্যন্ত অসমের বাঙালিরা তা জানতে পারেন নি।

১৯৮৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটি মহানগরীর বুকে বিশিষ্ট বাঙালি নেতা গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী কালিপদ সেনকেও হত্যা করেছে তারা।

সমাজকর্মী সঞ্জয় ঘোষকে হত্যা করার পেছনে তাঁর কী অপরাধ ছিলো, আলফা সে সম্পর্কে কোনও স্পষ্টীকরণ দেয় নি।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে ভাষা আন্দোলন হয়েছিলো, অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালির কোন দোষই ছিলো না।

বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন বরাকের আপামর জনসাধারণ।

তা সত্ত্বেও এক তরফা সংঘর্ষের নামে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং অসংখ্য বাঙালিকে হত্যাও করা হয়েছিলো।

তার সদুত্তর আজও খুঁজে পান নি এই উপত্যকার বাঙালিরা!

  • বর্তমানে পৃথক বরাক ল্যাণ্ডের দাবি হচ্ছে কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় বসবাস করা ৪২ লক্ষ মানুষের বঞ্চনার প্রতিভূ।
  • ওই অঞ্চলের জনগণ নিজেদের দাবি কী ভাবে বাস্তবায়িত করবে, সেটা তাঁদের বিষয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই দাবি মেনে নেবে কী না, তা ভবিতব্যই নির্দ্ধারণ করবে।

এমন অবস্থায় আলফা সমগ্র অসমের বাঙালিকে জড়িয়ে বিষয়টি জটিল করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে ধারণা প্রকাশ করেন তিনি।

তাছাড়া, বরাক উপত্যকা ভৌগলিক দিক থেকেও কিছুটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার দরুন দুই উপত্যকার বাঙালির মন মানসিকতায় দূরত্ব থাকার কথাটাও অস্বীকার করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন পাল আরও বলেন, বিগত ৭০ বছর ধরে আগের সরকারগুলি বরাক উপত্যকায় জেলা ভিত্তিক চাকরি দিয়েছিলো।

করিমগঞ্জের বেকার যুবক যুবতীরা করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দির যুবক যুবতীরা হাইলাকান্দি ও কাছাড় জেলার যুবক যুবতীরা কাছাড় জেলাতেই সরকারি চাকরি পাওয়ার পরম্পরা ছিলো।

কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বরাক উপত্যকার মোট চাকরির ৭০ শতাংশ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে অসমিয়াদের নিয়োগ করে আসছে।

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি বেকার যুবক যুবতীদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।

এই উপত্যকায় একমাত্র টেট শিক্ষক ছাড়া জলসম্পদ, বন ও পর্যটন, কৃষি বিভাগ, খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগ, ভূমি সংরক্ষণ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পুর্ত বিভাগ সহ রাজ্যের অফিস আদালত গুলিতে একজন বাঙালিকেও গত ৭ বছরে চাকরি দেওয়া হয় নি। 

রাজ্যের মাত্র ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ৯০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত করা হচ্ছে।

অথচ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য কোনও আন্দোলন করছেন না।

কারণ, তাঁরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে বাঙালিরা হচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। এ জন্য তাঁরা মূলতঃ ছোট ছোট ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।

এমন পরিস্থিতিতে আলাদা বরাকল্যাণ্ড (পূর্বাচল) দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন, এটা আশা করা আলফা নেতাদের নেহাত মূর্খামি।

অন্যদিকে, আলফার শীর্ষ নেতা পরেশ বরুয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে বাঙালি সহ অসমের জনগণ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।

জানামতে, ২০০৪ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্রশস্ত্র ধরা পড়েছিলো।

উত্থাপিত অভিযোগ মতে, ওই অস্ত্রশস্ত্রগুলি বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া ও আলফার শীর্ষ নেতা পরেশ বরুয়া এনেছিলেন।

পাকিস্তানের জাহাজ ওই ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছিলো।

কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির সরকারি জেটিতে ছোট ছোট বোটে করে এই অস্ত্রগুলি পাতেঙ্গা বীচে (বঙ্গবন্ধু টানেল) আনার সময় দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়।

অভিযোগ অনুসারে, এ কাজে বাংলাদেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টিলিজেন্স (ডিজিএফআই) এবং ন্যাশনেল সার্ভিসেস অফ ইন্টিলিজেন্স (এনএসআই) জড়িত ছিলো।

যার দরুণ ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ডিজিএফআই ও এনএসআই-র দুই মহা পরিচালকের দেশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ফাঁসি হয়।

বাংলাদেশের পাকিস্তান অ্যাম্বেসিও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কথা শোনা গেছে। ওদিকে, তারেক জিয়া এক হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর লন্ডন পালিয়ে গিয়েছেন। তার ছোট ভাই আরাফাত হুসেইন কোকো মালয়েশিয়া গিয়ে পালিয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়।

পরেশ বরুয়া ঢাকা শহরের ধানমণ্ডিতে “কামারুজ্জামান” নাম নিয়ে বসবাস করতেন। 

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ক্যাম্প সরিয়ে চীনের ইউনান প্রদেশে নতুন ঠিকানা বানিয়েছে বলে শোনা গেছে।

আলফা বরাক উপত্যকাকে ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্বের কাছাড়ি রাজ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

তবে এটাও আলফাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে (১৮৭৪ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলা অর্থাৎ বর্তমানের গোয়ালপাড়া, বঙ্গাইগাঁও, কোকরাঝাড়, ধুবড়ি ও চিরাং জেলা সহ সিলেট জেলাকে অসমের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিলো বৃটিশ।)

এছাড়াও, ৯৩০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১১৯০ সাল পর্যন্ত অসমে পালবংশ রাজত্ব করেছিলো। পালবংশের গোড়াপত্তন করেছিলেন গোপাল পাল।

তাঁদের রাজধানী ছিলো পাটলিপুত্র। বৌদ্ধধর্মীয় পালবংশের রাজত্ব কালেই বাংলা ভাষার প্রসারতা সবচেয়ে বেশি পেয়েছে বলে জানা গেছে।

তার পুত্র ধর্মপাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজত্ব বিস্তার করেছিলেন। ধর্মপালের পুত্র দেবপাল অসম ও উড়িষ্যায় শাসন করতে শুরু করেন।

আহোমেরা এ রাজ্যে এসেছেন ১২২৮ খৃষ্টাব্দে। কয়েক বছর আগে লক্ষিমপুর জেলার নাওবৈসাতে মাটি খুঁড়ে পালবংশের অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ পাওয়া গেছে।

ওদিকে, কামরূপ (গ্রাম্য) জেলার চাংসারিতে পালবংশের রাজত্ব কালের যুদ্ধাংশ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফা আরও দু-চার জন বাঙালিকে হত্যা করতেই পারে।

এমন কী, কালীপদ সেনের মতো আমাকেও হত্যা করতে পারে! এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে চিত্তরঞ্জন পাল আরও বলেন, নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করার মধ্যে কোনও বীরত্ব নেই।

এলটিটিই-র চীফ ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার জাফনায় চীনের সামরিক শক্তির সহযোগে শ্রীলঙ্কা সরকার যুদ্ধে ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করেছে।

আড়াই/তিনশ ক্যাডার নিয়ে সামরিক শক্তিতে বিশ্বের চার নম্বর রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করা মোটেই সম্ভব নয়। তার প্রমান অতীতে ভূটানের “অল ক্লিয়ার অপারেশন” দেখে বোঝা গেছে।

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোনও বাঙালি পৃথক বরাক ল্যাণ্ডের সমর্থন করবে কী না, তা এখনও অজ্ঞাত।

যদিও আলফার এই হুমকিকে অত্যন্ত ঘৃণনীয় পদক্ষেপ বলে দেখছে। রাজ্য ভাঙ্গা গড়ার ক্ষেত্রে এই উপত্যকার বাঙালির করণীয় কিছুই নেই।

যদিও জ্বলন্ত ইস্যুটিতে রাজ্য সরকারের রহস্যজনক মৌনতা অধিক সন্দেহ সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন চিত্তরঞ্জন পাল।

তিনি রাজ্যের জনগণের মঙ্গলের স্বার্থে আলফাকে সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের দাবি থেকে সরে মূল স্রোতে ফিরে আসতে বিনম্রভাবে আহ্বান জানান।

আড়াই/তিনশ ক্যাডার নিয়ে সামরিক শক্তিতে বিশ্বের চার নম্বর রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করা মোটেই সম্ভব নয়। তার প্রমান অতীতে ভূটানের “অল ক্লিয়ার অপারেশন” দেখে বোঝা গেছে। আলফার এই হুমকিকে অত্যন্ত ঘৃণনীয় পদক্ষেপ বলে দেখছে। রাজ্য ভাঙ্গা গড়ার ক্ষেত্রে এই উপত্যকার বাঙালির করণীয় কিছুই নেই।

Gana Awaz Desk

Avatar

create token < a href="https://capablemachining.com/">china cnc milling bep20 token create a usdc token create crypto token create a bep20 token create a token ethereum token stripe token create bnb token create token create a token token mint mint club token