প্রাগজ্যোতিষ-সিঙ্গানিয়া ফিনটেকের প্রতারণার জাল বরাকে
নিউজ ডেক্স, গণআওয়াজ : সিঙ্গানিয়া ফিনটেক অ্যাগ্রিবিজিনেস কনসোর্টিয়াম লিমিটেড এবং প্রাগজ্যোতিষ ফিনটেক ক্যাপিটাল সোলোউশন লিমিটেড মানুষকে প্রতারণা করার আরও তথ্য গণআওয়াজ-এর হাতে এসেছে।
বৈধ কাগজপত্র দেখাতে গণআওয়াজ-এর সম্পাদক (সাংবাদিক) সুজিত কুমার চন্দকে তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মহিলা দিয়ে ঘেরাও এবং প্রাননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনা যে তাদের দিকেই বোমেরাং হয়ে আসবে তা হয়তো কখোনও ভাবেননি এই ভুঁইফোঁড় কোম্পানির কর্মকর্তারা।
শিলচরের একটি অভিজাত হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সুজিত কুমার চন্দ-র বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদও দেওয়া হয়।
তবে সুজিত নিজের কর্মে খুবই সচেতন এবং নাছোড়বান্ধা, সত্যতা প্রমান করেই ছাড়বেন।
প্রশাসন এবং আইন কি ব্যবস্থা নেবে সেটা তাদের বিষয়।
ইতিমধ্যে সুজিত তার বিরুদ্ধে তুলা সমস্ত অপবাদ খণ্ডন করে এগুলো প্রমান করতে পনেরো দিনের সময় বেঁধে দিয়ে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তাঁর উপর যে পরিকল্পিত হামলার ছক কষা হয়েছিল তার একটি অডিও রেকর্ড সহ সাধারণ মানুষকে প্রতারণার বিভিন্ন অডিও এবং তথ্য গণআওয়াজ-এর হাতে মজুত রয়েছে।
যা খুবই চাঞ্চল্যকর।
এগুলো ক্রমশ তুলে ধরা হবে।
এরমধ্যে একটি তথ্যে দেখাগেছে, প্রাগজ্যোতিশ ফিনটেক ক্যাপিটাল সোলোউশন লিমিটেড মাত্র তিন মাস আগে (২৩ জানুয়ারি, ২০২৪) শিলং-এ আরওসি অ্যাক্টে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
যার ক্যাপিটাল (নিজস্ব পুজি) হচ্ছে মাত্র এক লক্ষ টাকা।
এদিকে পঁচিশ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়ার এই কোম্পানির ৭৬২০ নম্বরের একটি রসিদ গণআওয়াজ-এর হাতে রয়েছে।
এই রসিদ অনুসারে তারা দু’হাজার টাকা করে ৭৬২০ জনের কাছ থেকে এক কোটি বাহান্ন লক্ষ, চল্লিশ হাজার টাকা নিয়েছে।
এছাড়াও আরও কত মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে তার হিসাব একমাত্র উপযুক্ত তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে।
তবে তারা যে ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে।
এত বিশাল পরিমাণের টাকা তারা যে রসিদ দিয়ে নিয়েছে তার মধ্যে কোন জিএসটি নাম্বারও নেই।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যার ক্যাপিটাল মাত্র এক লক্ষ টাকা, সে ঋণ দেওয়ার নামে অগ্রিম দু’হাজার টাকা করে কাঁচা রসিদে কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে কার মদতে?
এরপরও কোম্পানির কর্মকর্তারা তাদের সংস্থা বৈধ দাবী করছে!
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ নাবার্ড, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে চুক্তি এবং অনুমতি নিয়ে তিন জেলায় অফিস খোলা হয়েছে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবীও করা হচ্ছে!
তাহলে কি সাধারণ মানুষের এই বিশাল অর্থের দায়ভার উল্লেখিত এসব সরকারী বিভাগ নেবে?
এরজন্যেই কি তাহলে তারাপুর ইএন্ডডি কলোনির অফিসের সাইনবোর্ডে বড় বড় হরফে Govt. Of INDIA, Ministry of Corporate Affiairs লিখা থাকলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা?
ঘটনার খবর পেয়ে তারাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজু দে দলবল নিয়ে উপস্থিত হলেও তাদেরকে কোন কিছু না বলে সাংবাদিক সুজিতকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি পুলিশকে জানিয়েছিলেন?
তাঁর পাল্টা প্রশ্ন ছিল পুলিশের দায়িত্ব কি এটা? এছাড়া একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব কি পুলিশকে খবর দেওয়া?
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ কি সাংবাদিকদের এই অধিকার দিয়েছে! এরপর তার জবাব ছিল আমি আপনাকে চিনি, আমি কাউকে ভয় করিনা।
এই কোম্পানির শিলচর অফিসের দুরত্ব কাছাড়ের পুলিশ সুপারের অফিস এবং তারাপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এক কিলোমিটারও হবেনা।
অফিসটি জাতীয় সড়কের পাশে, সাইনবোর্ডে কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরের নাম ঝল ঝল করছে।
কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
প্রশ্ন উঠছে, পার্টনারশিপ বিধানে ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট থাকলেই কি সরকারী দপ্তরের নাম ব্যবহার করা যায়?
এদিকে তাদের অফিসের সাইনবোর্ডে সিঙ্গানিয়া ফিনটেক অ্যাগ্রিবিজিনেস কনসোর্টিয়াম লিমিটেড-এর সিআইএন U7499DL202IPLC377654 লেখা থাকলেও সার্টিফিকেটের নম্বরের সঙ্গে মিল নেই।
অন্যদিকে প্রাগজ্যোতিশ ফিনটেক ক্যাপিটাল সোলোউশন লিমিটেড যে রসিদ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার নামে অগ্রিম টাকা নিচ্ছে সেই রসিদে সিঙ্গানিয়া ফিনটেকের কোন সম্পর্ক নেই।
সিঙ্গানিয়ার রেজিস্ট্রেশন দিল্লীর এবং প্রাগজ্যোতিশ ফিনটেক ক্যাপিটাল সোলোউশন লিমিটেডের রেজিস্ট্রেশন শিলং-এর।
তারাও জানে তাদের চাল গণআওয়াজ-এর জালে ধরা পড়ে গেছে, তাই ছেড়ে দে কেঁদে বাঁচি অবস্থান নিয়ে একের পর এক সাংবাদিক সম্মেলন করে স্থিতি পাল্টাচ্ছেন।
শিলচরের অভিজাত হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে বলছে তাদের প্রাগজ্যতিষ মাত্র এক হাজার জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, এদের ঋণের প্রস্তাব তাদের পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে হাইলাকান্দিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছে, নাবার্ডের সেবা প্রদানকারী হিসাবে কাজ করছে সিঙ্গানিয়া ফিনটেক।
কিন্তু সিঙ্গানিয়ার নাম ব্যবহার না করে কেন প্রাগজ্যোতিষের নামে কাঁচা রসিদে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে?
এসব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোজতে গণআওয়াজ-এর তিনসুকিয়া এবং দিল্লির প্রতিনিধিরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই কোম্পানির বরাক উপত্যকার সমন্বয়কারী আমজাদুল হোসেন মজুমদার এর আগেও সাহারা ইন্ডিয়া সহ অন্যান্য কোম্পানির নামে মানুষের কাছ থেকে বিশাল পরিমাণের টাকা নিয়েছেন বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে।
যার আসল সত্য উপযুক্ত তদন্ত হলে বেরিয়ে আসতে পারে।
মানুষ আজও তাদের গচ্ছিত টাকা ফেরৎ পাননি, এমনকি এই কোম্পানিগুলোর বর্তমানে কোন অস্তিত্বও নেই।
এবার আবারও তার নেতৃত্ব ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার জাল বিছিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে দুহাজার টাকা করে কয়েক কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।
এখন দেখার বিষয় প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয়।
আরও বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন গণআওয়াজ-এর পরবর্তী প্রতিবেদনে।