মাছ ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতির ডন, হাজার কোটি টাকার মালিক : অনুব্রত মণ্ডল

Spread the love

গণ আওয়াজ অনলাইন ডেক্স ১২ আগস্ট, ২০২২ সাধারণ : একজন মাছ ব্যবসায়ি থেকে রাজনীতির ডন হয়ে উঠেন গরু পাচার মামলায় সিবিআইর হাতে গ্রেফতার হওয়া পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অনুব্রত মণ্ডল।

তিনি নির্বাচনের সময় তাঁর বিরোধীদের ভোট না দিতে রীতিমতো শাসাতেন মানুষকে। বিরোধী প্রার্থীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে প্রকাশ্যে বলেছেন।

কংগ্রেস দলের ‘কবজি কেটে নেওয়ার’ তার আহ্বানও ছিল প্রকাশ্যেই। নির্বাচনের সময় প্রতিপক্ষকের প্রার্থীদের ‘বিষ দিয়ে মেরে ফেলার’ কথা হয়তো কেউ ভুলবে না।

কেবল কথায়ই নয় কাজেও ছিল প্রমাণ। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে জেলা পরিষদের ৪২টি আসনই ছিনিয়ে নেন অনুব্রত।

দিনের আলোয় তাঁর অনুসারীরা দা–বল্লম–তরবারি উঁচিয়ে মিছিল করতেন। তিনি বলতেন, এসব অস্ত্রে শাণ দেওয়া হচ্ছিল মাত্র।

আসলে তাঁর এলাকায় কোনো বিরোধিতাই সহ্য করতেন না তিনি। বিরোধীদেরকেই সহ্য করতে হতো তার নিষ্ঠুর নির্যাতন। এসব করতেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্রয়েই। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। শাসক দলের একটি জেলার নেতা হয়েও ‘কথা ও কাজের’ জন্য আলোচিত হতেন রাজ্যজুড়ে, সব সময়ই।

সেই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অনুব্রত মণ্ডলকে আজ গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। পুরো রাজ্যে এ নিয়ে তোলপাড়া। বিরোধীরা আনন্দে উদ্বেলিত, শাসক দল তৃণমূল চুপচাপ।

অনুব্রতকে ধরা হয়েছে গরু পাচার মামলায়। ক্ষুদ্র এক ব্যবসায়ী বাবার সন্তান অনুব্রত মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। সেখান থেকেই হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আলোচিত চরিত্র। তাঁর উত্থান বিস্ময়কর।

অনুব্রত মণ্ডল লেখাপড়া করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। শুরুটা কংগ্রেস দিয়ে। এরপর ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল গঠন করলে তিনি ওই দলে ঢোকেন।

একপর্যায়ে দলের জেলা কমিটির সভাপতি হন। তাঁকে পৌর নির্বাচন, বিধানসভার নির্বাচন, লোকসভার নির্বাচনে প্রার্থী করতে চাইলেও তিনি সেই পথে পা বাড়াননি। থেকে গেছেন তৃণমূলের বীরভূমের সভাপতি হিসেবে।

অনেকে বলেন, বিদ্যার দৌড় কম হলেও মাস্তানির দৌড় ছিল অনেক বড়। তাই তিনি আর সাংসদ, বিধায়ক বা পৌরসভার নির্বাচনে পা বাড়াননি।

তাঁর বিরুদ্ধে কয়লা চুরি, বালি চুরি ও পাথর চুরির মাফিয়াদের যোগাযোগের অভিযোগ আছে।

অনুব্রতর সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গতকাল বুধবার বলেন, ‘একসময় যিনি হাটে বসে মাগুর মাছ বিক্রি করতেন, আজ তিনি হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।

কাউকেই বরদাস্ত করার পাত্র ছিলেন না অনুব্রত ওরফে কেষ্টদা।

কখনো তিনি ঘোষণা দিতেন, ভোটকেন্দ্রে কাউকে আসতে হবে না। পুলিশ বাধা দিলে বোমা মারতে নিদানও দিতেন তিনি। এই অকুতোভয় নেতা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসন ছিনিয়ে নেন।

বিরোধী দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে দেননি তিনি। ৪১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে নেন। বাকি একটি আসনে গোপনে এক বামপন্থী নারী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যান।

এ খবর জানতে পেরে অনুব্রত মণ্ডল ওই প্রার্থীকে হুমকি দিয়ে মনোনয়নপত্র তুলে নিতে বাধ্য করেন। ফলে বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসনেই অনুব্রতের ৪২ প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জিতে যান।

এই প্রভাবশালী নেতাকে জালে বন্দী করার জন্য সিবিআই বা ইডি গ্রেপ্তার করার উদ্যোগ নিয়েও বার কয়েক ব্যর্থ হয়।

কয়লা পাচার–কাণ্ডে জড়িত থাকায় সিবিআই তাঁকে কলকাতার প্রধান দপ্তর নিজাম প্যালেসে দেখা করার জন্য বারবার নোটিশ দিলেও অসুস্থতার অজুহাতে বারবার তিনি এড়িয়ে যান।

এখন পর্যন্ত ১০ বার সিবিআই তাঁকে হাজির হওয়ার নোটিশ দিলেও তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন। মাত্র একবারই তিনি হাজির হয়েছিলেন এপ্রিল মাসে।

বুধবার সিবিআই তাঁকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলে সেই নির্দেশ অমান্য করে হাজিরা না দিয়ে বোলপুরের বাসভবনে অবস্থান করেন।

এরপরেই সিবিআই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে বুধবার সকালে বোলপুরের বাসভবনে ১০০ কেন্দ্রীয় বাহিনীর (সিআরপিএফ) সদস্য নিয়ে হাজির হয়। পুরো বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি শুরু করে।

অনুব্রত পালিয়ে থাকে বাড়ির ভেতরে। বাড়িতে লাগানো ১০টি তালা ভেঙে বের করে আনেন অনুব্রত মণ্ডলকে।

যদিও সিবিআই গ্রেপ্তারের আগে অনুব্রত মণ্ডলকে দেড় ঘণ্টা জেরা করেন। তাতে সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় সিবিআই অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করে।

অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজ্যের সর্বত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস করে। বিলায় গুড়বাতাসা, নকুলদানা, মিষ্টি।

বিরোধীদের হুমকি দিয়ে ‘চড়াম চড়াম’ করে ঢাক বাজানোর কথা বলতেন অনুব্রত। তাঁর গ্রেপ্তার অনেকেই ‘চড়াম চড়াম’ ধ্বনিতে ঢাক বাজায়।

অনুব্রতের পথ ধরে জলবাতাসা, নকুলদানা বিতরণ করেছে বিজেপি, বাম দল ও কংগ্রেসের সমর্থকেরাও। রাজ্যের সর্বত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েছে গুড়বাতাসা, নকুলদানা।

সিপিএম আবার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, ‘বড় চোর অনুব্রত মণ্ডল ধরা পড়েছে। চোর অনুব্রত মণ্ডল ধরা পড়েছে।

কলকাতার বিমানবন্দর, বিভিন্ন রেলস্টেশন, বাসস্টেশনেও আনুব্রতবিরোধীরা গুড়বাতাসা, নকুলদানা বিলি করেছেন।

অনুব্রতকে এদিন আসানসোল আদালতে তোলা হয়। ২০ অগস্ট পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয়  আসানসোলের বিশেষ আদালত। রাতেই কলকাতার নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসা হচ্ছে অনুব্রতকে। অনুব্রতর আইনজীবী সঞ্জীব বলেন, ‘হেফাজতে থাকাকালীন অনুব্রত অসুস্থ হলে তাঁকে কলকাতার কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা হবে।

Gana Awaz Desk

Avatar

Leave a Reply

create token < a href="https://capablemachining.com/">china cnc milling bep20 token create a usdc token create crypto token create a bep20 token create a token ethereum token stripe token create bnb token create token create a token token mint mint club token