গণ আওয়াজ গৌহাটি প্রতিবেদক, ১৮ আগস্ট,বৃহস্পতিবার : আসাম সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ফের জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের দিন আসামের লখিমপুর জেলার বগিনদী রেলস্টেশনে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা তাদের পতাকা লাগিয়ে এই আশংকা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তার প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশে উলফার তিনটি বড় ধরনের হামলায় আহত হয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন জওয়ান।
আসাম, মনিপুর, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে স্বাধীনতা দিবস বর্জনের ডাক দেয় উলফা (আই) এবং নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন খাফলাং গোষ্ঠী।
স্বাধীনতা দিবস পালনের প্রস্তুতির মধ্যে মায়ানমার সীমান্তবর্তী নাগাল্যান্ডের মন জেলায় ১৯ নম্বর আসাম রাইফেলসের শিবিরে হামলা চালায় উলফা (আই) এবং এনএসসিএন খাফলাং। এতে আসাম রাইফেলসের দুই জওয়ান গুরতর আহত হন।
আসাম রাইফেলস এই আক্রমণের সত্যতা স্বীকারও করেছে। স্বাধীনতা দিবসের এক সপ্তাহ আগে আসাম রাইফেলসের ওপর আরও অন্তত দুটি বড় ধরনের হামলা করেছে উলফা (আই) ও এনএসসিএন কে।
প্রথম আক্রমণটি করা হয় ভারত–মায়ানমার সীমান্তে অরুণাচল প্রদেশের পাংশু গিরিখাতে। এই গেরিলা আক্রমণে সেনাবাহিনীর একজন তরুণ জওয়ান আহত হন। দ্বিতীয় আক্রমণটি হয় মায়ানমার সীমান্তের নকলাক এলাকায়।
দীর্ঘ ৪৩-৪৪ বছরের ইতিহাসে উলফা (আই) শুধু গত বছর স্বাধীনতা দিবস বর্জনের ডাক দেয়নি। কিন্তু এ বছর তারা স্বাধীনতা দিবসে মানুষকে রাস্তায় বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
উলফার যে অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে এই অংশটির নাম হচ্ছে আলফা। আলফা প্রধান অরবিন্দ রাজখোয়া জুলাই মাসে একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশা করে বলেছিলেন ১৫ আগস্টের মধ্যে আলফা এবং কেন্দ্রের মধ্যে চূড়ান্ত শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর হবে।
তার আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও নেতৃত্বাধীন উলফার মধ্যে ত্রিপআক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি পর্যন্ত আলফা এবং নিরাপত্তাবাহিনী কেউ কারো উপর আক্রমণ করবে না।
কিন্তু এই চুক্তির ১১ বছর পরও চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ায় ২০২২ শের এপ্রিল মাস পর্যন্ত নতুন করে অন্তত ২৩০ জন অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়ে উলফার জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
এদের মধ্যে কয়েকজন পরে আত্মসমর্পণও করেছে এবং কেউ কেউ বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু অধিকাংশ ছেলমেয়েরা বাড়ি ফিরে আসেনি।
বিষয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য উদ্বেগের বড় কারণ। তার মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসে উত্তর লখিমপুর জেলার এক রেলস্টেশনের আলফার (আই) পতাকা উড়তে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে আসাম পুলিশ। আসাম ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলতে যে জঙ্গি তৎপরতা মাথা ঝাড়া উঠছে তা স্বীকার করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।