জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১৬ নভেম্বর : মর্যাদাসম্পন্ন আইইটি (ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি) হাডসওয়েল ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ পেয়েছেন করিমগঞ্জের কৃতি সন্তান কৃষানু দে।
লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর হাতে স্কলারশিপের অংশ হিসেবে ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা, সার্টিফিকেট ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৬ জনকে এই স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এবছর এই ছয়জনের মধ্যে কৃষানুও ছিলেন।
কৃষানুর এই সাফল্যে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক টুইটে বলা হয়েছে, ‘যুব প্রজন্মের কাছে রোল মডেল কৃষানু।’
কৃশানুর সাফল্যে খুশি করিমগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সমন্বয়ক বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। তিনি বলেছেন, করিমগঞ্জের নাম আরো একবার গৌরবান্বিত হলো। কৃষানুকে অনেক শুভেচ্ছা।
বছর সাতাশের কৃষানু বর্তমানে লন্ডনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে সৌরশক্তি নিয়ে গবেষণা (পিএইচডি) করছেন। সেখানকার ক্যাভাণ্ডিস ল্যাবরেটরীতে গবেষণার কাজ চলছে তাঁর।
২০১৮ সালে স্কলারশিপের মাধ্যমে সেখানে গবেষণার সুযোগ পান তিনি। কেমব্রিজ ইন্ডিয়া রামানুজন স্কলারশিপ মিলেছিলো। স্কলারশিপ হিসেবে চার বছরে তিনি পাবেন মোট ২ কোটি টাকা। আগামী ৩০ নভেম্বর গবেষণা পত্র জমা দেওয়ার তারিখ।
এরপরই পোস্ট ডক্টরেট করার জন্য তিনি ছুটবেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেটা শুরু হবে। সেখানে চাকরি এবং পড়াশোনা একই সঙ্গে চলবে। এটাতেও স্কলারশিপ মিলেছে।
সম্প্রতি মোট ৬০০ জন আবেদন করেন। এরপর তিনজনকে মনোনীত করা হয়। সেখান থেকে চূড়ান্ত বাছাই করে স্কলারশিপের জন্য মনোনীত করা হয় কৃষানুকে। অক্টোবরে এটা ঠিক হয়।
কৃষানু বরাবরই মেধাবী ছাত্র। ২০১০ সালে সরস্বতী বিদ্যানিকেতন থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে রাজ্যের মধ্যে কুড়িতম স্থান দখল করেন। একই বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিকে অষ্টম স্থান দখল করেন।
২০১৬ সালে শিলচর নিট-য়ে বিটেক উত্তীর্ণ হন। স্বর্ণপদক এবং বেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট অফ দা ইয়ার হয়েছিলেন তখন। ২০১৮ সালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরে এমটেক করেন। এটাতেও স্কলারশিপ পেয়েছিলেন।
একমাত্র পুত্রের এই ধারাবাহিক সাফল্যে অত্যন্ত খুশি পিতা কালীগঞ্জ ডায়েটের এডুকেশন এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কানাইলাল দে এবং মা নিলামবাজারের পেয়ারীমোহন এমই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষিকা সর্বানী ভট্টাচার্য। পিতা কানাইলাল দে বিপিনপাল রোডের ভাড়া বাড়িতে বসে বলেছেন, পুত্রের সাফল্যে কার না গৌরব হয়। তবে নিজের প্রচেষ্টায় সবকিছু করেছে কৃষানু। বাকি সব ভগবানের ইচ্ছা।
বিটেক পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। তারপর স্কলারশিপের অর্থেই পড়াশোনা করছে। অন্যথায় আমার পক্ষে তা সম্ভব হতো না। মা সর্বাণী বলেছেন, পুত্রের মনের জোর ছিল অসম্ভব। ছোটবেলা থেকেই সে সিদ্ধিদাতা গণেশের ভক্ত। অত্যন্ত ভগবান বিশ্বাসী।
সুদুর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভাণ্ডিস ল্যাবরেটরীতে গবেষণার ফাঁকে দূরভাষে কৃষানু ভবিষ্যতে একজন অধ্যাপক হতে চান বলে জানিয়েছেন।
সাফল্যের পিছনে ভগবানকেই পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ভগবান সব সময় আমার সঙ্গে রয়েছেন। মা-বাবার পুরো অবদান রয়েছে। তাঁরা কোনো সময় আমাকে অভাববোধ করতে দেননি। ভালো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন।
এছাড়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাওনি কর অনেক সাহায্য করেছে। স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে সে অনেক সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগত শাওনি বলেছেন, আমি খুব সামনে থেকে কৃষানুর পিএইচডি জার্নি দেখেছি। নিজের মূল্যবোধের জন্য কৃষানুকে সফলতা ধরা দিচ্ছে।
সে অনেক পরিশ্রমি। যেসব পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পাচ্ছে সেটা তার প্রাপ্য। ভবিষ্যতে আমরা দুইজন দেশের জন্য কিছু করতে পারবো বলে আশা করছি।
সরস্বতী বিদ্যানিকেতনের প্রধান আচার্য অঞ্জন গোস্বামী বলেছেন, দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সরস্বতী বিদ্যানিকেতনে পড়াশোনা করেছে কৃষানু। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। পড়াশুনা ছাড়াও সব একটিভিটিতে অংশগ্রহণ করতো। ওর আত্মবিশ্বাস অনেক ছিল। ওর স্কলারশিপ পাওয়ার খবর আমার জন্য গর্বের বিষয়। খুবই ভালো লাগছে।