নয়াদিল্লী, ২৩ নভেম্বর : সিন্ধু প্রদেশে হিন্দু সাধক শিব অবতারী সতগুরু সন্ত শাদারাম সাহেবের ৩১৪ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে যোগ দিতে ২২ নভেম্বর ভারত থেকে ১০০ তীর্থযাত্রী পাকিস্তানে পৌঁছেছেন।
একদিন আগে পাকিস্তান ঘোষণা করেছিল যে তারা হায়াত পিতাফির শাদানি দরবারে যেতে চাওয়া ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের ১০০টি ভিসা দিয়েছে।
তীর্থযাত্রীরা, যারা ২২ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানে থাকবেন- তারা শুক্কুর, ঢেরকি এবং নানকানা সাহেবের অন্যান্য পবিত্র স্থানগুলিও দেখতে যাবেন।
ইভাকুই ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ডের (ইটিপিবি) মুখপাত্র আমির হাশমি পিটিআইতে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে তারা যাত্রার জন্য সিন্ধু প্রদেশের শাদানি দরবার, হায়াত পাতাফি, মিরপুর খাসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে আমির হাশমি জানিয়েছেন।
১৯৭৪ সালের ধর্মীয় উপাসনালয় পরিদর্শন সংক্রান্ত পাকিস্তান-ভারত প্রোটোকলের অধীনে উভয় দেশের তীর্থযাত্রীদের প্রতিবছর সীমান্তের ওপারে নির্দিষ্ট কিছু মন্দিরে যাওয়ার জন্য ভিসা দেওয়া হয়।
পাকিস্তানে শাদানী দরবার কি এবং এর তাৎপর্য কি? এবং ১৯৭৪ সালের ধর্মীয় উপাসনালয় পরিদর্শনে পাকিস্তান-ভারত প্রোটোকলের অধীনে কোন মাজারগুলি পরিদর্শন করা যেতে পারে?
শাদানী দরবার ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো। শাদানি দরবার পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির। ঘোটকি জেলার একটি ছোট শহর হায়াত পিটাফিতে অবস্থিত, ১৭৮৬ সালে সন্ত শাদারাম সাহেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৭০৮ সালে লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন শাদারাম, তিনি একজন হিন্দু সাধক ছিলেন। তিনি ভগবান রামের পুত্র লবের বংশধর বলে মনে করা হয়।
সাধুকে ভগবান শিবের অবতার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়, শাদানি দরবারের ওয়েবসাইট-এ এরকমই রয়েছে।
শাদারাম মানুষের আধ্যাত্মিক কল্যাণে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি ২০ বছর বয়সে হরিদ্বার, যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী, অমরনাথ, প্রয়াগ, অযোধ্যা, কাশী এবং নেপালের পশুপতিনাথ মন্দির সহ ভারতের পবিত্র স্থানগুলিতে ভ্রমণ করেছিলেন।
১৭৬৮ সালে রাজা নন্দের রাজত্বকালে সিন্ধুর রাজধানী মাথেলোতে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি একটি শিব মন্দিরও তৈরি করেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি তার ভক্তদের সাথে মাথেলো গ্রামের মন্দির ত্যাগ করেন এবং হায়াত পিটাফির নিকটবর্তী আরেকটি পবিত্র গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
সেখানে তিনি একটি কূপ খনন করেন এবং পবিত্র আগুন দিয়ে আলোকিত করেছিলেন। মানুষের বিশ্বাস যে ধুনি সাহেবের আশীর্বাদ গ্রহণ করে কূপের পবিত্র জল পান করলে সমস্ত দুঃখকষ্ট ও দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পাওয়াযায়।
শাদানী দরবারে বার্ষিক উদযাপনের সময় অগ্নি পূজার (আগুনের পূজা) আয়োজন করা হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনুসারে, গণ বিবাহও অনুষ্ঠিত হয়। সচ্ছল ভক্তরা আর্থিকভাবে দুর্বল দম্পতিদের উপহার প্রদান করেন।
এই বছর উদযাপনের সময় ভগবদ গীতা এবং গুরু গ্রন্থ সাহেবের পাঠও হবে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআইর এক রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
কাকা কৈলাশ জোত সেখানে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে তার পরিবার চার প্রজন্ম ধরে শাদানি দরবারের শিষ্য। তিনি বলেন আমার জন্ম হায়াত পিতাফীতে। আমার বাবা দরবারের ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন। এই মন্দিরটি সর্বদাই মুসলমান সহ বিপুল সংখ্যক ভক্তকে আকৃষ্ট করেছে।