আইজল,২৩ নভেম্বর : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে তাদেরকে মানবিক সহায়তা করতে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিজোরাম মন্ত্রিসভা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালচামলিয়ানা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে পালিয়ে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের অস্থায়ী আশ্রয়, খাদ্য এবং অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে মিজোরাম মন্ত্রীসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির। কেএনএ-র বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সামরিক অভিযানের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ২০০ টিরও বেশি কুকি-চিন মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে দক্ষিণ মিজোরামের লংটলাই জেলায় প্রবেশ করেছে।
এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী কুকি-চীন বাংলাদেশে একটি পৃথক রাষ্ট্র এবং সুরক্ষার দাবিতে লড়াই করে। লংতলাই জেলার এক কর্মকর্তা মানেসিয়া খাইমেইচো বলেছেন যে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে আর কেউ রাজ্যে প্রবেশ করেনি।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন বাংলাদেশি নাগরিকদের পুনঃগণনা করেছে এবং মোট ২৭২ জন লংতলাই জেলায় আশ্রয় নিয়েছে।

অন্য একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে বাংলাদেশি নাগরিকদের সোমবার গভীর রাতে মিজোরাম-বাংলাদেশ-মিয়ানমার ত্রি-জংশনের কাছে সিমেইনাসোরা গ্রাম থেকে পারভা-৩ গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের লংতলাই জেলার সিমেইনাসোরা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পারভা-৩ গ্রামের একটি কমিউনিটি হল, একটি স্কুল এবং একটি উপকেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
এদিকে বিষয়টির সাথে পরিচিত একজন নেতা বলেছেন, কেএনএর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের কারণে বাংলাদেশ থেকে আরও শরণার্থী মিজোরামে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
লংতলাই জেলার ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের (ওয়াইএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচিস লালতানপুইয়া বলেছেন, রবিবার অনেক শিশু তাদের বাবা-মা ছাড়া এসেছে, কিছু মা তাদের স্বামী ছাড়া এসেছে ও কিছু পিতা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ছাড়া এসেছেন।
তিনি বলেন, যারা চিন-কুকি-মিজো গোষ্ঠীর বাওম উপজাতির অন্তর্গত তাদেরকে মিজোরাম-ভিত্তিক বাওম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ), স্থানীয় এবং এনজিওগুলি খাবার সরবরাহ করছে।
ওয়াইএমএ তুইচাওং গ্রুপ কুকি-চিন শরণার্থীদের জন্য পোশাক এবং অন্যান্য ত্রাণ সংগ্রহ করবে।
উল্লেখ যোগ্য যে, বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর একটি সশস্ত্র শাখা কেএনএ-এর বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন করছে।
কেএনএফের একজন নেতা বলেছেন যে ১৬ এবং ১৭ নভেম্বর মিয়ানমারের বৃহত্তম বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) সমর্থিত কেএনএ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে থিহখিয়াং ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিকটবর্তী গ্রামগুলির কাছে তিনটির বেশি এনকাউন্টার হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেএনএ-এর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করার জন্য এএ-এর সাথে একত্রিত হয়েছে। ১৬ নভেম্বর এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন এএ ক্যাডার নিহত হন।

এই নেতা অভিযোগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং এএ সম্প্রতি একটি ১৭ বছর বয়সী মেয়ে সহ ১৪ জন বেসামরিক নাগরিককে অপহরণ করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঁচজন বেসামরিক নাগরিককে অপহরণ করেছে এবং এএও সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত জো (মিজো) অধ্যুষিত গ্রাম থেকে নয়জন বেসামরিক নাগরিককে অপহরণ করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ বছরের অক্টোবরে কেএনএর বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান শুরু করার পর চিন-কুকি-মিজো জনগণকে খাদ্য সামগ্রী এবং অন্যান্য উপকরণ ক্রয় করতে পণ্য বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে।
জো রিইউনিফিকেশন অর্গানাইজেশন মিজোরাম ভিত্তিক একটি সংস্থা, যে সংস্থা ভারত, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের চিন-কুকি-মিজো উপজাতিকে একীকরণের জন্য লড়াই করছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কুকি-চিন-মিজো সম্প্রদায়ের বেসামরিকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৩.৫ লাখ সংখ্যালঘু কুকি-চিন-মিজো সম্প্রদায়ের বসবাস।