জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১৫ ডিসেম্বর : গ্রামাঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় শিল্প, সংস্কৃতিকে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা ‘লোক সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর উদ্যোগে করিমগঞ্জে অষ্টম দ্বি-বার্ষিক লোকসংস্কৃতি সম্মেলন ও লোক উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
আগামী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতি ভবন ও করিমগঞ্জ আইন মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দুইদিনের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বাংলাদেশের প্রখ্যাত লোক সংগীতশিল্পী তন্বী দেব অংশগ্রহণ করবেন।
তন্বী দেব লোকসংস্কৃতি মঞ্চের উৎসবে আগেও একবার করিমগঞ্জ এসেছিলেন। উৎসব উপলক্ষে প্রস্তুতি চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। অস্থায়ী কার্যালয় শিক্ষক ভবনে ঘন ঘন সভা করছেন আয়োজকরা।
উৎসবকে সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন উপ-সমিতি গঠন করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তোরণ বসানো হয়েছে।
এক সাংবাদিক বৈঠকে দুইদিনের উৎসব উপলক্ষে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন লোকসংস্কৃতি মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং অভ্যর্থনা সমিতির কর্মকর্তারা।
২০০৫ সালে আত্মপ্রকাশ করে লোক সংস্কৃতি মঞ্চ। শুরুতে রতিরঞ্জন শর্মা, রমন রায়, রনধীর রায় তিনজন মিলে শুরু করেছিলেন। বর্তমান কমিটিতেও তাঁরা রয়েছেন। ২০০৬ সালে করিমগঞ্জ কলেজে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় লোক সংস্কৃতি সম্মেলন ও লোক উৎসব।
এরপর থেকে লাগাতার দ্বি-বার্ষিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে সেটা স্থগিত রাখা হয়। ২০২১ সালেও সম্ভব হয়নি একই কারণে।
উৎসব উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা সমিতির সম্পাদক পবিত্র দেব বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির পর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়ায় এবার উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যান্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন সেই সব ব্যক্তিদের সম্মাননা জানানো হবে। এখন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অযৌক্তিক সংস্কৃতির আমদানি ঘটায় উদ্বেগ প্রকাশ করে লোকসংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সর্বশ্রেণীর জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতি সুবীরবরণ রায় বলেছেন, পরিস্থিতি সাপেক্ষে শোভাযাত্রা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছে। একটি মঞ্চেই সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
লোকসংস্কৃতি মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতিরঞ্জন শর্মা বলেছেন, গ্রামাঞ্চলকে নিয়েই ২০০৫ সালে মঞ্চের কাজকর্ম শুরু করা হয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় দশটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়।
লুপ্তপ্রায় শিল্পকে তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য মঞ্চের। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। কারণ এখনো গ্রামাঞ্চলে অনেক প্রতিভা রয়েছে, যারা সঠিক মঞ্চ পান না। সংস্কৃতিকে উপস্থাপনা করতে পারেন না তাঁরা।
মূলত তাঁদের জন্যই লোক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ। সাংস্কৃতিক উপ-সমিতির আহ্বায়ক রণধীর রায় বলেছেন, দুইদিনের উৎসবে প্রতিদিন দুই পর্যায়ে মোট ৪০টি সংগঠন অংশগ্রহণ করবে।
প্রায় ৫০০ জন শিল্পী বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। বর্তমান ডামাডোল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে লোক সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সাহিত্য ও আলোচনা সভা উপ-সমিতির আহবায়ক নারায়ণ মোদক বলেছেন, রবিবারের সাহিত্য আড্ডার পরিচালনায় লোক উৎসবে সাহিত্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে।
১৭ ডিসেম্বর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুইদিনের অনুষ্ঠানের শুরু হবে। অমর পাল স্মৃতি মঞ্চ উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট লোক সংগীত শিল্পী রঞ্জিত পুরকায়স্থ। এরপর সকাল ১১ টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। ১৮ ডিসেম্বর সাহিত্য আসর দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
‘ভট্ট সংগীত : বরাক-ত্রিপুরার এক লুপ্ত সাংগীতিক ধারা’ শীর্ষক বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখবেন ত্রিপুরার লোক সাহিত্য গবেষক মন্টু দাস। এরপর স্মরণিকা উন্মোচন সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান রয়েছে। দুইদিন রাত আটটা থেকে সংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট লোক সংগীতশিল্পী তন্বী দেব।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিপ্রেমী জনগণকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন লোকসংস্কৃতি মঞ্চের পদাধিকারীরা। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ উপ সমিতির সভাপতি সুনীতরঞ্জন দত্ত, সাংস্কৃতিক উপ সমিতির সভাপতি রমন রায়। উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপদ নাগ, অরূপরতন দাস, ঝর্না ভট্টাচার্য, বিপুল চৌধুরী, সঞ্জয় শীল, বিভাস বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা।