গৌহাটি প্রতিনিধি : বাংলাভাষী মুসলমানদের রাজ্যের ‘খিলঞ্জিয়া’ আদিবাসী হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহের প্রথা ত্যাগ করতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
শর্মা এর আগে রাজ্যের বাংলাভাষী মুসলিমদের যাদের বেশিরভাগেরই শিকড় বাংলাদেশে রয়েছে তাদেরকে এই সামাজিক কুফলের জন্য দায়ী করেন।
শনিবার তিনি বলেন, ‘মিয়ারা’ (বাংলাভাষী মুসলমান) আদিবাসী কিনা সেটা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু ‘আদিবাসী’ হওয়ার চেষ্টা করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
তবে এরজন্য তাদের বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ ত্যাগ করতে হবে এবং নারী শিক্ষাকে উত্সাহিত করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য যে ‘মিয়া’ মূলত আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য ব্যবহৃত একটি নিন্দনীয় শব্দ এবং অ-বাংলাভাষী লোকেরা সাধারণত তাদেরকে বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে।
তিনি বলেন যে অসমিয়া জনগণের একটি সংস্কৃতি রয়েছে, যেখানে মেয়েদের ‘শক্তি’ (দেবী) এর সাথে তুলনা করা হয় এবং দুই-তিনবার বিয়ে করা অসমিয়া সংস্কৃতি নয়।
শর্মা বলেন আমি তাদের সব সময় বলি, ‘মিয়াদের’ আদিবাসী হওয়াতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তাদের দুই-তিনটি স্ত্রী থাকতে পারে না।
বাংলাভাষী মুসলমানরা যদি অসমিয়া রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারে তবে তারাও ‘আদিবাসী’ বলে বিবেচিত হবে, যোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আর বলেন, রাজ্য সরকার গত বছর দুটি পর্যায়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল, দেখা গেছে অনেক বয়স্ক পুরুষ একাধিকবার বিয়ে করেছে।
তাদের স্ত্রীরা বেশিরভাগই অল্পবয়সী মেয়ে, যারা সমাজের দরিদ্র শ্রেনির অন্তর্গত।
প্রথম দফায় ৩,৪৮৩ জনকে গ্রেফতার করে ৪,৫১৫টি মামলা নথিভুক্ত করা হয় এবং দ্বিতীয় দফায় ৯১৫ জনকে গ্রেফতার করে ৭১০টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়।
তিনি জোর বলেছিলেন, যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের সময় ২০২৬ সালের মধ্যে রাজ্য থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহের প্রথা নির্মূল করা হবে।
বাল্যবিবাহ বন্ধ করার লক্ষ্যে রাজ্য মন্ত্রিসভা গত মাসে আসাম মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন ১৯৩৫ বাতিল করার সিদ্ধান্তও অনুমোদন করেছে।
আইনে বর ও কনের বৈধ বয়স যথাক্রমে ১৮ এবং ২১ বছর না পৌঁছালেও বিবাহ নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়ার বিধান রয়েছে।
বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তকে লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটারদের মেরুকরণের পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করেছিল এবং বলেছিল এটি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জন্য মৃত্যুঘণ্টা বাজাবে।
মুখ্যমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, রাজ্য সরকার বিধানসভার শেষ বাজেট অধিবেশনে বহুবিবাহ অবসানের জন্য একটি বিল আনার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু তা করেনি।
শর্মা রাজ্যে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) এর পক্ষেও সমর্থন জানিয়েছিলেন। বিরোধী দলগুলি বহুবিবাহের উপর আইন প্রণয়ন করার সরকারের সিদ্ধান্তকে সাম্প্রদায়িক হিসাবে নিন্দা করেছিল।