নিউজ ডেক্স, গণআওয়াজ : গর্ভধারিণী মায়ের কোল থেকে সদ্যজাত কন্যাশিশুকে কেড়ে নিলেন এক দম্পতি।
শুধু তাই নয়, মেডিক্যালের সার্টিফিকেটে গর্ভধারিণী মাতা হিসাবে নিজের নামও লিখিয়ে নিয়েছেন ওই দম্পতি।
দেশ জুড়া চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা এই ঘটনাটি ঘটেছে আসামের শিলচরে।
স্বামী ছাড়া সন্তানের জন্মধাত্রী অসহায় এই মহিলার নাম রত্না দাস।
রত্না জানিয়েছেন, অসহায় হয়ে গর্ভবতী অবস্থায় তিনি মা মনসা এনজিও-র সম্পাদক সোমা শর্মার ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
১৬ মার্চ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সোমার পরিচিত অম্বিকাপট্টির জবা দাস নামের দুধের শিশুকে কেড়ে নেওয়া ওই মহিলা।
তিনি রত্নাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে ভর্তি করেন।
সেখানে রত্না এক ফুট ফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
কিন্তু জবার এই সাহায্যের পেছনে যে সদ্যজাত শিশুকে কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তা আগে বুঝতে পারেননি রত্না।
তবে ২১ মার্চ মেডিক্যাল থেকে ডিসচার্জ দেওয়ার পর জবা যখন অসুস্থ অবস্থায় তাকে সোমার ঘরে পৌঁছে দিয়ে সন্তানকে নিয়ে চলে যান তখন তার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আসে।
রত্না বুঝতে পারেন সাহায্যের নামে তাঁর সন্তানকে বুক থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় তিনি কি করবেন?
এদিকে মায়ের বুকের দুধ এমনিতেই ঝরছে, অথচ সদ্যজাত শিশুর মুখে তার প্রাপ্য বুকের এক ফুটা দুধও তুলে দিতে পারছেন না রত্না।
পরেরদিন রত্না অসুস্থতার মধ্যেই গর্ভজাত সন্তানকে আনতে ছুটে যান জবার অম্বিকাপট্টির ঘরে।
কিন্তু তার হাতে জবা মেডিক্যালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের জেরক্স কপি ধরিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।
মেডিক্যালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের জেরক্স কপিতে শিশুর জন্মধাত্রী মা হিসাবে জবার নাম লেখা রয়েছে।
সেখান থেকে অসুস্থ রত্না কেঁদে কেঁদে সোমার ঘরে ফিরে আসেন, পরে ওয়ান স্টপকে ফোনে বিষয়টি জানালে তারা ঘুংঘুর ফাঁড়ির পুলিশকে অবগত করেন।
কিন্তু অবাক হওয়ার মত ঘটনা হল পুলিশ সদ্যজাত শিশুটিকে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করার কোন উদ্যোগ না নিয়ে রত্না এবং সোমা দুজনকে ডেকে নিয়ে যায় থানায়।
এমনকি রত্নাকে দোষী সাব্যস্থ করে ভয় দেখিয়ে পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়।
সেই সময় থানায় উপস্থিত ছিলেন আমাদের দুজন সাংবাদিক।
তারা পুলিশের কাছে এব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে জানতে চাইলে তাদের শুধু বলা হয় তদন্ত চলছে।
এমনকি থানার কক্ষের ভিতরে এবং বাহিরে ভিডিও করতে আপত্তি করা হয়।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন দেখা দেয়, একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কেন? অন্য গণতান্ত্রিক কর্মীদের ফটো এবং ভিডিও করতে নিষেদ করছে।
এই ধারা শুধু ঘুংঘুর থানায়ই সিমাবদ্ধ নয়, গোঠা বরাক উপত্যকায় বজায় রাখা হয়েছে।
শিলচর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে হলেও সাধারণ মানুষ এমনকি সাংবাদিকদেরকেও মোবাইল বাহিরে জমা দিয়ে ভীতরে যেতে হয়।
অথচ রাজনৈতিক দাদাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরন দেখা যায়, কাউকে মোবাইল রেখে যেতে হচ্ছেনা, নাম লিখে ভেতরে স্লিপও দিতে হয়না।
এতে স্বআভাবিক কারনেই প্রশ্ন উঠে সরকারী দপ্তরগুলোর ভেতরে কি চলছে? সাধারণ মানুষ এবং সাংবাদিকদেরকেও বাহিরে মোবাইল জমা রেখে ভিতরে যেতে হয়!
তবে আমাদের নাছোড়বান্ধা সাংবাদিকরা তাদের কর্তব্য পালনে অটল।
তাদের গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপস সংগ্রহ করেছেন।
যেখানে দেখাগেছে থানার সেকেন্ড অফিসার শিশুটির মায়ের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।
তিনি শিশুটির অসুস্থ মা রত্না দাসকে বলছেন এতদিন আসলে না কেন? আসল দোষী তুমি!
অথচ রত্না এখনও অসুস্থ, সে বলছে আমি অসুস্থ আসতে পারিনি।
পুলিশের এই আচরণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পুলিশ নামের সরকারী এই সুরক্ষা বাহিনিকে কেন লম্বা মাসোয়ারা দিয়ে রাখা হয়েছে?
সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য? না সমাজদ্রোহীদের সুরক্ষার জন্য? কেন পুলিশ স্টেশনের ভেতরে এবং বাহিরে সাংবাদিকদের ফটো এবং ভিডিও করতে নিষেধ করা হয়?
সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হয়ে সুবিচার পাওয়ার আশায় পুলিশের দ্বারস্থ হন, তাদের দায়িত্ব যথা সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।
এভাবে অভিযোগকারীকে ধমকানো নয়, এবং অভিযুক্তদের আড়াল করার জন্য লম্বা মাসোয়ারা দেওয়া হয়না।
এদিকে সোমা শর্মাও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি। তবে তারও বেশ কিছু কথা আমাদের সাংবাদিকরা গোপন ক্যামেরায় সংগ্রহ করেছেন।
সব কিছুই তদন্তক্রমে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।
তবে সন্দেহ করা হচ্ছে এসব ঘটনার পেছনে শহর শিলচরে শিশু পাচারের একটি চক্র কাজ করছে, যা সঠিক তদন্তই পারে আসল রহস্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই তদন্তটা করবে? কারন পুলিশের উপর এখন মানুষের আগের মত আস্থা নেই।
অন্যদিকে এই খবর লেখা পর্যন্ত পুলিশ সদ্যজাত শিশুটিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানাগেছে।