ধর্মনগর থেকে রত্নদীপ চক্রবর্ত্তীর রিপোর্ট : ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হলো হিন্দুদের দ্বারা পালিত একটি উৎসব, কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে উদযাপিত হয়।
পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন।
মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে ভাইবিজ বলা হয়। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভাইটিকা এবং অনেক জায়গায় যমদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত।
কিংবদন্তী অনুসারে, মৃত্যুর দেবতা যম কার্তিক শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বোন যমুনার নিমন্ত্রণ স্বীকার করে তাঁর বাড়ি যান। সে দিন যমুনার পুজো গ্রহণ করে, তাঁর গৃহে ভোজন করেন।
যমুনা আশীর্বাদ চাইলে যম বলেন, এই তিথিতে যে ভাই নিজের বোনের বাড়ি গিয়ে তাঁর পুজো স্বীকার করবে ও তাঁর হাতে তৈরি রান্না গ্রহণ করবে, তাঁর ভাগ্যে অকালমৃত্যুর ভয় থাকবে না।
তার পর থেকেই এই তিথিটি যম দ্বিতীয়া, ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া বা ভাই ফোঁটা নামে পরিচিত হয়।
মঙ্গলবার উত্তর ত্রিপুরার জেলাসদর ধর্মনগরে বিবেকানন্দ শার্ধ শতবার্ষিকী ভবনে বিজেপির ধর্মনগর মন্ডলের উদ্যোগে মহিলা কার্যকর্তারা ভাইফোঁটার এই পবিত্র উৎসব পালন করেন।
যেখানে পুর পরিষদের সভানেত্রী মিতালী রাণী দাস সেন, উপ সভানেত্রী মঞ্জু নাথ সহ অন্যান্য কাউন্সিলাররাও অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনকে ভাইফোঁটা দিয়ে ভাই বোনের বন্ধনে আবদ্ধ করেন।
তবে এই অনুষ্ঠানে সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল হিন্দু মহিলাদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মহিলারাও এই ভাইফোঁটার পবিত্র অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষকে ফোঁটা দেন।
এব্যাপারে এক মহিলা বলেন, উনি জাতপাত, ধর্মের রাজনিতীতে বিশ্বাসী নন।
উনি সকল অংশের জনগণদের সাথে নিয়ে চলতে চান এবং মানুষের পাশে থেকে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে যান।
যারা ধর্মের নামে রাজনীতিতে বিশ্বাসী তাদের পরোক্ষে সমালোচনা করেন তিনি।
পাশাপাশি হিন্দুদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করেন।
প্রসঙ্গত কিছুদিন পূর্বে উত্তর জেলার কুর্তি কদমতলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় দুটি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছিল কিছু অসাধু ব্যক্তিরা।
এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থতার একটি উদাহরণ হল ধর্মনগরের এই ভাতৃদ্বিতীয়ার অনুষ্ঠান। যেখানে এই অনুষ্ঠানে সকল সম্প্রদায়ের জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া, সব সম্প্রদায়ের জনগণ যে অধ্যক্ষের পাশে রয়েছেন তার এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হচ্ছে এই ভাতৃদ্বিতীয়ার অনুষ্ঠান।
ধর্মনগরের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের উপস্থিতিতে একটি নজিরবিহীন অনুষ্ঠানের সাক্ষী রইল গোটা উত্তর জেলাবাসী।