আগরতলা, ৩ অক্টোবর : বাংলাদেশে হিন্দুদের পূজাপার্বণে মুসলিমরা বাধার সৃষ্টি করলেও ভারতের কিছু কিছু এলাকায় মুসলিমরা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
গত বছর দুর্গাপূজার সময় উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার একটি পূজামণ্ডপে কুরান রেখে পরিকল্পিত ভাবে দেশজোড়ে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালায়।
সেই ঘটনায় সারা বিশ্বে নিন্দিত হয় বাংলাদেশ, প্রভাব পড়ে ভারতে, উত্তরপূর্বাঞ্চলের ছোট রাজ্য ত্রিপুরাতেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু এবার ত্রিপুরার তুলারমাঠ, মোল্লাপাড়ার দুর্গাপূজা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরন সৃষ্টি করেছে। পূজা কমিটিতে রয়েছেন মুসলিমরাও, ৫২ বছর বয়সী হানিফ আলী রয়েছেন উপদেষ্টা কমিটিতে।
উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হানিফ তাঁর এই পূজাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেতু হিসাবে সব কাজেই সক্রিয় ভাবে ঝাপিয়ে পড়েছেন। অতিরিক্ত হিসাবে তিনি এলাকায় প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিজের কাঁদে নিয়েছেন।
হানিফ আলিকে তাঁর বন্ধু শাহ আলম মিয়াও সহযোগিতা করেছেন। উল্লেখ্য যে, হানিফ আলি পেশায় একজন ছোট মাপের ঠিকাদার।
গনয়াওয়াজ হানিফ জানান, ২০০৩ সালে এলাকার হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিত ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন হিসাবে এই পূজার প্রথম আয়োজন করা হয়।
এবছর এই পূজার নিরবিগ্নে বিশ বছর পূর্ণ করায় এলাকার হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রয়ায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পূজা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য স্বপন দাস বলেন, এই দুর্গাপূজা এলাকার হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০৩ সালে আমরা এই পুজো শুরু করি, এর আগে আমরা বিভিন্ন ক্লাব এবং অন্যান্য সংগঠকের অধীনে ছিলাম। কিন্তু সেসব পূজা আমাদের এলাকা থেকে অনেক দূরে থাকায় এখানকার ছয়টি এলাকার প্রবীণরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্কুলের মাঠে পুজোর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
স্বপন বলেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ক্লাবগুলি আপত্তি জানিয়েছিল তাদের এলাকা ভাগ না করার জন্য কিন্তু তাদের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করেন এলাকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা। সেই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আমরা আমাদের নিজস্ব জায়গায় একটি পূজার আয়োজন করব।
চাঁদা সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের এলাকার বাইরে যাওয়া হবে না বলে একটি চুক্তির সাথে সবাই একমত হয়েছিলেন, আর সেই থেকে বিগত ২০ বছর ধরে এলাকার হিন্দু-মুসলিম ভাই-বোনেরা মিলে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছে।
এলাকার জাহাঙ্গীর মিয়া নামের অপর একব্যাক্তি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, মুসলিম পরিবারগুলি হিন্দুদের সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের সমর্থন দেখায় এবং হিন্দুরাও আমাদের ধর্মের উৎসবে অংশ নেয়।
পূজার সাথে জড়িত শাহ আলম মিয়া বলেন, তাদের এলাকা কখনো এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো ধরনের মুখোমুখি সংঘর্ষ বা বিবাদ দেখেনি। আমাদের এলাকা অন্য জায়গা থেকে আলাদা।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজার মতো ঈদে এলাকার হিন্দুরা পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এই পূজা ছাড়াও, সিপাহিজলা জেলার অধীনে সোনামুড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়, যেখানে মুসলিম পূজা কমিটির প্রধান হন এবং শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা করেন।