শিলচর। ৬ সেপ্টেম্বর : বন্যা বিধ্বস্ত বরাকের পুজো কমিটিগুলোকে সরকারি সাহায্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে অযৌক্তিক বলে দাবী করেন।
মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপূজার সময় করিমগঞ্জ এসে বলেছেন, দুর্গাপূজায় সরকারি সাহায্য দিলে ঈদেও দিতে হবে। এতেই বেজায় চটেছেন প্রদীপ দত্তরায়। তিনি বলেন মুখ্যমন্ত্রী শুধু হিন্দু নয় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদেরও অপমান করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হিমন্ত বিশ্বশর্মার জানা উচিত যে ঈদে কোন চাঁদা তোলা হয়না, একমাসের তীব্র কৃচ্ছসাধনের শেষে ঈদের পবিত্র দিনে প্রতিজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী আল্লাহর কাছে মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন এবং তাঁরা নিজেরা সাধ্যানুযায়ী দান খয়রাত করে থাকেন।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, বরাকের পুজোকমিটি গুলোকে সরকারি অনুদানের অনুরোধ করা হয়েছিল বন্যায় বরাক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাঁদা দেওয়ার অধিকাংশের পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শুধু অগ্রাহ্যই করেননি, অনর্থক ধর্মীয় প্রসঙ্গ এনে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টিকে গুলিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজা যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গন্ডী ছাড়িয়ে সামগ্রিক উৎসব হিসেবেই পরিচিত এবং শুধু বাঙালি নয়, অসমিয়া, ডিমাসা, মনিপুরী, নেপালি সহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজো করেন।
বিহু প্রসঙ্গে বলেন, বিহুও অবশ্যই সাংস্কৃতিক উৎসব, যদি বিহু উদযাপনের জন্য কমিটিগুলোকে সরকারি অনুদান দেওয়া যায় তবে দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি পাবেনা কেন?
অসম সাহিত্য সভা, বড়ো, মিশিং, ডিমাসা ইত্যাদি সমস্ত সাহিত্য সভাকে সরকারি অনুদান দেওয়া হলেও বাঙালি সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠনকে দেওয়া হল না কেন? এ সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রীর।
দত্তরায় রাজ্যের বর্তমান বিজেপি সরকারকে শুধু বাঙালি বিরোধী নয় বাঙালির আবেগও মূল্যহীন।
মুখ্যমন্ত্রীর চাঁদা সংস্কৃতি বন্ধের আহ্বানের সমালোচনা করে বিডিএফ নেতা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্য বিজেপি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির কাছ থেকে যে ২৭ কোটি টাকা তুলেছিল তা কি জুলুম করে চাঁদা তোলা নয়?
করিমগঞ্জের মেডিক্যাল কলেজ প্রসঙ্গে প্রদীপ দত্তরায় বলেন, দুর্গাপূজায় সরকারি সাহায্য নাইবা দেওয়া হল কিন্তু প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজ সম্পর্কে তো মুখ্যমন্ত্রী কোন আশ্বাসবানী শোনাতে পারতেন।
গত তিন বছর ধরে শুধু সরকারি অবহেলায় এই প্রকল্প ঝুলে রয়েছে। অথচ দিনেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায় বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকলেও বরাক উপত্যকায় কিছুই নেই।
ইস্ট ওয়েস্ট করিডোরের বাকি কাজ, মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্কেরও কোন খবর নেই। অথচ অনেক পরে শুরু হয়ে ত্রিপুরার সাভ্রুমে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিলচরের উড়ালপুল, আইটি পার্ক এসব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব! বরাক উপত্যকার দুই সাংসদ এবং চৌদ্দ জন বিধায়ক একমাত্র কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ ছাড়া সবাই বরাকের উন্নয়ন নিয়ে নিরব থেকে দিশপুরের তাবেদারী করার অভিযোগ করেন বিডিএফ আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।