সিপিআইএম যুবনেতাকে পিটিয়ে হত্যা, বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিসে এজাহার
আগরতলা, ১৭ অক্টোবর : ত্রিপুরা ফের পুরনো ছন্দে ফিরে যাচ্ছে! নব্বইয়ের দশকে কংগ্রেস ক্ষমতায় বসার পর সিপিআইএম কর্মীরা কংগ্রেস তাণ্ডবে বরাক উপত্যকা সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আত্মগোপন করতে হয়েছিল।
পরবর্তী পাঁচ বছর পর ফের যখন সিপিআইএম ত্রিপুরার ক্ষমতায় আসে তখন কংগ্রেস কর্মীরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন।
এরপর দীর্ঘমেয়াদি তারা ধিরে ধিরে নিজ গৃহে ফিরে যান। সেই সময়ও কিছুটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি শান্তি এবং উন্নয়নের বার্তা ছড়িয়ে ভোট চাইলে ত্রিপুরার মানুষ দু’হাত ভরে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী করে ক্ষমতায় আনেন।
সাড়ে চার বছর মোটামোটি শান্তিতে কাটলেও ভোট আসতেই সেই পুরানো দিনের দিকে ক্রমশ ফিরে যাচ্ছে ত্রিপুরা।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরপূর্বের রাজ্য ত্রিপুরার গোমতী জেলায় বিরোধী সিপিআইএম-এর এক যুব নেতাকে কতিপয় দুষ্কৃতকারী পিটিয়ে হত্যা করার খবর পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় সিপিআইএম রাজ্যের শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। সোমবার যুব নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদে সিপিআইএম একটি বিক্ষোভও বের করে। এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে হুংকার দেওয়া হয় রাজ্যে প্রতি হিংসার রাজনীতি বন্ধ না হলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ করে দেওয়ার।
সিপিআইএম ত্রিপুরা পুলিশের কাছে অবিলম্বে তাদের যুবনেতাকে পিটিয়ে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
সিপিআইএম অভিযোগ করেছে, তাদের গোমতী জেলার যুব নেতা তাপস রায় এলাকার কালিপূজায় চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় বিজেপির গুন্ডা বাহিনী তাঁকে এবং তাঁর মাকে ব্যাপক মারপিট করেছে। তাদের বাড়ীঘরে ভাংচুরও করেছে।
পরে পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। যুবনেতা তাপস রায়ের অবস্থা আশংকাজনক থাকায় তাঁকে আগরতলা সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত তাপস রায়ের পরিবার থেকেও বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে এফআইআরও দায়ের করেছে, সিপিআইএম অভিযোগ করেছে ত্রিপুরা পুলিশ এখনও অপরাধের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে শনিবার রাতে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেসের মধ্যে সহিংস ঘটনায় উত্তর ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার কৈলাশহরের সীমান্তবর্তী রাঙ্গাউটি গ্রামে সোমবার গতকাল পর্যন্ত উত্তেজনা অব্যাহত। এই ঘটনায় বিজেপির কমপক্ষে দুইজন কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিজেপি অভিযোগ করেছে যে তাদের কর্মীরা যখন রাঙ্গাউটি বাজারে দলীয় কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিল, তখন কংগ্রেস সমর্থিত দুষ্কৃতীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে। এতে বিজেপি কর্মী মালিক উল্লা, পুলব দত্ত এবং মতাসির আলীকে গুরুতর আহত হয়েছেন।
এঘটনার পর থেকে মতসির আলী নিখোঁজ। এখনও তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে বিজেপি কর্মীরা হঠাৎ তাদের পার্টি অফিস ভবনে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। নির্বাচন আসতেই সহিংস ঘটনা মাথাঝারা দিয়ে ওঠায় ত্রিপুরার মানুষকে সেই বিভীষিকার পুরনো দিনগুলো তাড়া করতে শুরু করেছে।