গন আওয়াজ অনলাইন ডেক্স, ২৫ অগাস্ট, বৃহস্পতিবার : বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের পাশে দাড়ালো স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা।
মজুরি ৩০০ টাকাতে বৃদ্ধি করার দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘটে নামলেও সরকার তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আজ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন করেন।
আজ সকালে স্থানীয় বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে উপজেলার খেজুরিছড়া চা-বাগানের দুর্গামন্দিরের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে তাদের দাবি তুলে ধরে। এই শিক্ষার্থীদের মা-বাবারাও চা-বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়, চা-শ্রমিকেরা অনেক কষ্ট করে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা করান। সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য চা-শ্রমিকদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকরা যাতে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে না পারেন সে জন্য বৈষম্যের করে আসছেন।
বাগান কর্তৃপক্ষ চান শ্রমিকদের পরবর্তী প্রজন্মও যাতে সারা জীবন চা-বাগানের ‘দাস’ হয়ে জীবন কাটায় এটাই চায় বলে দাবি করে শিক্ষার্থীরা।
এক শিক্ষার্থী প্রীতি পট্ট নায়েক বলেন, আমাদের মা-বাবা নিজেরা না খেয়ে আমাদের খাওয়ান, পড়াশোনা করানোর জন্য তাঁরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
অত্যদিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে এখন সংসার চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে, এ অবস্থায় আমাদের পড়াশোনা নিয়ে তাঁরা খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
অপর এক শিক্ষার্থী সঞ্জিত তাঁতী বলে, আমরাও এই দেশের নাগরিক, কিন্তু এ দেশে আমাদের মা-বাবা দাসের জীবনযাপন করছেন। আমরাও তা-ই করছি।
ওই শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলে কেন এই বৈষম্য? আমরা সুন্দর বাংলাদেশের চিন্তা করি। আমাদের চা-শ্রমিক মা–বাবারা এত কষ্ট করবেন, কিন্তু ন্যায্য মজুরি পাবেন না সেটা আমরা মেনে নিতে পারব না।
যদি দাবি মানা না হয়, তাহলে আমরাও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এদিকে ধর্মঘটের ১৩তম দিনেও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সব কটি চা-বাগানে কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
আজ সকালেও উপজেলার খেজুরিছড়া চা-বাগান, কালীঘাট চা-বাগান, রাজঘাট চা-বাগানসহ বিভিন্ন বাগানে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদেরকে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
খেজুরিছড়া চা–বাগানের শ্রমিক সাজু বেগম বলেন, আমরা আজ ১৭ দিন থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ঘরে খাবার নেই, না খেয়ে রয়েছি।
তিনি বলেন আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, তা দিয়ে সবকিছু করা যায় না। সংসারের খরচ অনেক, জিনিসের দাম বেড়েছে। আমরা এত পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছি না।
খেজুরিছড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মহেশ্বর দাস বলেন, এখন আমরা কাউকেই নেতা মানছেন না। শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটিই হোক আর জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তা সবাই এক হয়ে আমাদের এই ন্যায্য দাবির আন্দোলন বানচাল করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
সাধারণ চা-শ্রমিকদের দুঃখের কথা তাঁরা বুঝতেই চান না। তাই আমরা তাঁদের কাউকেই এখন আর বিশ্বাস করি না। আমরা অপেক্ষায় আছি, প্রধানমন্ত্রী নিজ মুখে সিদ্ধান্ত দিলেই আমরা কাজে ফেরত যাব।
শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছেন।
প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না সাধারণ শ্রমিকেরা। বাগানে বাগানে ঘুরে শ্রমিকদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধও জানাচ্ছেন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা।