মুঘলের বিরুদ্ধে শরাইঘাট যুদ্ধের নায়ক ছিলেন অসম সাহসী যোদ্ধা লাচিত বরফুকন, করিমগঞ্জ প্রেসক্লাবে : ড. শর্মিষ্ঠা খাজাঞ্চি

Spread the love

জুলি দাস

করিমগঞ্জ, ২৬ নভেম্বর : আমাদের ইতিহাস শিক্ষণীয়। এতদিন যে ইতিহাস পড়ছি তা মিথ্যা গুণ গান। বর্তমান সরকার আমাদের ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনছে।

আমরা সেই ইতিহাস চাই যে ইতিহাস আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়, যে ইতিহাস আমাদের সৃষ্টির সৃজনশীল গড়ে তোলে, যে ইতিহাস আমাদের ভাতৃত্বের সন্ধান দিয়ে থাকে, আমরা সেই ইতিহাস চাই।

আমরা ফিরে পেতে চাই মোগলদের বিরুদ্ধে শরাইঘাটের যুদ্ধের লাচিতের ইতিহাস।

বীর যোদ্ধা লাচিত বরফুকনের ৪০০ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রেসক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথাগুলো বলেন করিমগঞ্জ রবীন্দ্রসদন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ড. শর্মিষ্ঠা খাজাঞ্চি।

প্রেসক্লাব করিমগঞ্জ-এর সভাপতি মিহির দেবনাথের পৌরহিত্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, অসম তথা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম কঠিন আর ভয়ংকর লড়াই হিন্দুরা লড়েছিল মুঘলদের সঙ্গে ১৬৭১ সালে, যা ইতিহাসে শরাইঘাটের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

এই যুদ্ধের নায়ক ছিলেন এক অসম সাহসী যোদ্ধা লাচিত বরফুকন। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দু উপজাতিদের গৌরবগাথাগুলি স্থান পায়নি ইতিহাসে। এসব লুকিয়ে রাখা হয়েছে ভারতকে ধমনিরপেক্ষ সাজাতে।

   বলেন, ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সেনাপতি লাচিত বরফুকন জানতেন মুঘল ও কোচসেনাকে যদি পাহাড়বেষ্টিত অসমে ঢুকতে হয় তবে শরাইঘাট-এর এক কিলোমিটার চওড়া ব্রহ্মপুত্র নদীপথেই ঢুকতে হবে।

কারণ আশপাশ ছিল পাহাড়বেষ্টিত। তাছাড়া মুঘলরা নৌযুদ্ধে পারদর্শী ছিল না, তাই তিনি সেখানেই মুঘলসেনাকে আটকাতে স্থলে গেরিলা ও নদীবক্ষে নৌ সমরসজ্জায় মনোনিবেশ করেন।

১৬৬৯ সালের এপ্রিলে মুঘলসেনা মানস নদী দিয়ে অসমে প্রবেশ করে। শুরুতে স্থল যুদ্ধে পারদর্শী মুঘল সেনা লাচিত-এর অহম সেনার প্রথম প্রতিরোধ ভেঙ্গে দেয়। লাচিত সেনাকে পিছিয়ে এসে গুয়াহাটি রক্ষা করার নির্দেশ দেন।

কারণ গুয়াহাটির পেছনেই শরাইঘাটে তিনি শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অসমবাসীর শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত গুয়াহাটি ও কামরূপ মুসলিমদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না বলে হুঙ্কার ছাড়েন তিনি।

গুয়াহাটি অধিকার করতে মুঘল এবং কোচ সেনা চারটি দলে ভাগ হয়ে চারদিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। অহম সেনা দু’টি দলে ভাগ হয়ে লাচিত এবং আতন-এর নেতৃত্বে লড়াই করছিল।

১৬৬৯-এর জুন নাগাদ মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া, গারো উপজাতি এবং দরং-এর রানী-ও অহম সেনার সঙ্গে যোগ দেন। ছয় মাস ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করেও মুঘল সেনা গুয়াহাটি দখল করতে পারে নি, এ খবর পেয়ে আগস্টে ঔরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকে রাম সিংকে সাহায্য করার জন্য সেনাসহ পাঠান।

 তিনি অহম সেনাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে অহম শিবিরে খবর পাঠান, লাচিতকে তিনি একলক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। লাচিত বরফুকন গুয়াহাটি তাঁর হাতে তুলে দেবে। রাজা চক্রধ্বজ বিশ্বাস করলেও, প্রধানমন্ত্রী আতন বড়গোহাঁই রাজাকে বুঝিয়েছিলেন এটা মুঘলদের রণকৌশল।

লাচিত বরফুকনের মতো মহান দেশপ্রেমিক ক’জন হয়! ইতিমধ্যে অহমের রাজসিংহাসনে পালাবদল হয়েছিল। রাজসিংহাসনে বসলেন উদয়াদিত্য সিং। এর পরবর্তী অধ্যায় তুলে ধরে তিনি।

   শর্মিষ্টা খাজাঞ্চি আরো বলেন, ১৬৭১-এর মধ্যরাতে ছোট ছোট নৌকা নিয়েই মশালের আলোয় অহম সেনার আক্রমণ শুরু হয়, এক বীভৎস লড়াই চলে প্রায় ৩ দিন-রাত।

এই লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লাচিত বরফুকন। ব্রহ্মপুত্র নদের জলস্রোত এবং বায়ুপ্রবাহ হাতের তালুর মতই চিনতেন তিনি। ঝটিকা আক্রমণ করে আগুন লাগিয়ে, গোলা দেগে, হাজারে হাজারে তীর ছুঁড়েই ঝটিকা পলায়ন। কখনও ছোট ছোট দ্রুতগামী নৌকা নিয়ে টাঙ্গি, বর্শা, তলোয়ার নিয়ে মুঘল জাহাজগুলি আক্রমণ হয়।

   সভাপতি মিহির দেবনাথ বলেন, তৎকালীন ভারতবর্ষ এবং বর্তমান ভারতবর্ষের মধ্যে অনেক তফাৎ । তিনি বলেন, বীর লাচিত-এর যুদ্ধ সম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে চলবে না।

কারণ ভারতবর্ষে যে সকল মুসলমান রাজা আক্রমণ করেছিলেন তারা সবাই বিদেশী। আমাদের দেশের মুসলমানরা কখনোই বিদেশি মুসলমানদের পক্ষে ছিলেন না। যার অনেক প্রমাণও আছে। তাই লাচিতের যুদ্ধে কোনো অবস্থায় সাম্প্রদায়িকতার স্থান দেওয়া যাবে না।

বীরযোদ্ধা লাচিত বরফুকনের শরাইঘাটের যুদ্ধ প্রসঙ্গে মিহিরবাবু বলেন, নদীবক্ষে অহম সৈন্য ত্রিভুজাকারে ঘিরে রাখায় খাদ্য ও গোলাবারুদের অভাবে হার শিকার করে মুঘলরা।

তাঁদের ২১ টি জাহাজ ধ্বংস হয় এবং ৪ হাজার সৈন্য মারা যায়। এডমিরাল মুনাব্বর খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বাকি জাহাজগুলি নিয়ে পালাতে শুরু করে তারা।

কিন্তু লাচিত শত শত দ্রুতগামী ছোট নৌকা নিয়ে পিছু ধাওয়া করেন ব্রহ্মপুত্র থেকে মানস নদী পর্যন্ত। শেষে রাম সিং ৭ এপ্রিল ১৬৭১ সালে হেরে গিয়ে বাকি মুঘল সেনা নিয়ে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে অসম ছাড়েন।

মাত্র ২ হাজারের অহম নৌবাহিনীর নিয়ে শুধুমাত্র বীরত্ব আর কৌশলকে সম্বল করে বিশাল ৯ হাজারের মুঘল নৌবাহিনীকে পরাস্ত করেন বীরলাচিত বরফুকন।    এদিনের আলোচনা ও শ্রদ্ধাঞ্জলীতে অংশ নেন ঝুমা দাস, তারাকিশোর বনিক, প্রেস ক্লাবের সম্পাদক অরূপ রায়, শংকর রায় লস্কর, সুদীপ দাস, এসএম জাহির আব্বাস, বিভাসচন্দ্র দাস, সুজয় শ্যাম, প্রেসক্লাব করিমগঞ্জ আয়োজিত আলোচনা সভা প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সূচনা হয়।

Gana Awaz Desk

Avatar

Leave a Reply

create token < a href="https://capablemachining.com/">china cnc milling bep20 token create a usdc token create crypto token create a bep20 token create a token ethereum token stripe token create bnb token create token create a token token mint mint club token