জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১০ফেব্রুয়ারি : চলে গেলেন করিমগঞ্জ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা উত্তম মজুমদার।
বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নয় মিনিটে শিলচর ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
উত্তম মজুমদারের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর শিলচর রোডস্থিত বাসভবন সহ শোকযাত্রা এবং শ্মশানে হাজির হন অগুণতি মানুষ।
ছাত্রাবস্থা থেকেই কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন প্রয়াত উত্তম মজুমদার। জেলা এনএসইউআইর উপসভাপতি, যুব কংগ্রেস সভাপতিও ছিলেন।
দীর্ঘ বছর জেলা কংগ্রেসের উপ সভাপতি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বেশ কয়েকবার ভারপ্রাপ্ত জেলা কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
করিমগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপ-সভাপতি ছিলেন।
পুর কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুইবার নির্বাচিত হন।
করিমগঞ্জে ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠন হওয়ার পর তিনিই প্রথম চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হন এবং পরপর দুইবার একই পদে ছিলেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রয়াত মজুমদার।
মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী, দুই পুত্র, ভাই, বোন সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধ। তাঁর একমাত্র ভ্রাতুষ্পুত্র দিব্যজ্যোতি মজুমদার দন্ত চিকিৎসক।
সহজ, সরল প্রকৃতির উত্তম মজুমদার বিভিন্ন মহলে সমাদ্রিত ছিলেন।
ছোট থেকে বড় সকলের সঙ্গে সহজভাবে মিশে যেতে পারতেন তিনি। কংগ্রেস রাজনীতিতে থাকলেও বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল।
কয়েক মাস আগে তার শরীরে মারণ ব্যাধি কর্কট রোগ ধরা পড়ে, তখন নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের টাটা হাসপাতালে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা চলে।
তখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কল্যাণ চক্রবর্তী। ডা: রবি কান্নানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল।
গত শনিবার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বাড়িতে এসে চিকিৎসা করেন ডা: তাপস পাল। তখন অবস্থার সাময়িক উন্নতি হলেও রাতে ফের অবনতি হয়।
রবিবার ভোরে নিয়ে যাওয়া হয় করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে, কিন্তু অবস্থা সংকটজনক থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শে শিলচরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে দুইদিন থাকার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকদের প্রয়াস ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নয় মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় করিমগঞ্জের বাড়িতে।
এদিকে, উত্তম মজুমদারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ শিলচর রোডের বাড়ির সামনে থেকে স্বর্গরথে করে শোকযাত্রা শুরু হয়।
প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হয় ইয়ুথ ইউনিটি ক্লাবের সামনে। এই ক্লাবের সভাপতি ছিলেন তিনি। ক্লাবের কর্মকর্তারা শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সহচরির সামনে শ্রদ্ধা জানান চেয়ারম্যান সুব্রত দেব, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক নির্মল বণিক সহ অন্যান্যরা।
কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে মরদেহে দলীয় পতাকা এবং মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি রজত চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা।
তারপর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের সামনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চেয়ারম্যান দেবব্রত সাহা সহ কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মচারীরা।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে মরদেহের উপরে ডিএসএ-র পতাকা জড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কর্মকর্তারা। তখন উপস্থিত ছিলেন ডিএসএ সচিব সুদীপ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য পদাধিকারিরা।
তারপর শবযাত্রাবাহী মিছিল গিয়ে পৌঁছে সুভাষনগর শ্মশানে। সেখানে মুখাগ্নি করেন প্রয়াতের দুই পুত্র জয়দীপ মজুমদার এবং রত্নদীপ মজুমদার।