শিলচর, ২১ সেপ্টেম্বর : বরাকের জনগনকে অন্ধকারে রেখে গত ৬ সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সাক্ষরিত হল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কুশিয়ারা জল বন্টন চুক্তি।
অথচ এই চুক্তিতে কি আছে? বরাক উপত্যকায় তার কি প্রভাব পড়তে পারে? এসব প্রশ্ন নিয়ে আজও আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব বরাক উপত্যকার সব কটি রাজনৈতিক দল সহ বুদ্ধিজীবী মহল।
কিন্তু এবার এই চুক্তি নিয়ে মুখ খোলল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। ফ্রন্ট বরাক উপত্যকায় বাংলাদেশের সঙ্গে কুশিয়ারার জল বণ্ঠন চুক্তির প্রভাব জনসমক্ষে তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে সমীক্ষা করানোর দাবি জানিয়েছে।
ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, একটি নদীর সাথে জনজীবন সহ একটি অঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে। সেক্ষেত্রে কৃত্রিম উপায়ে তাকে সংশোধিত করা হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, রকম চুক্তি সম্পাদন করার আগে তার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা ও স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি।
এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে কিছু জানেননি। প্রদীপ বাবু আসামের মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, এতে আবার প্রমানিত হল এই উপত্যাকার জনগন বাচা-মরা নিয়ে বিজেপি সরকারের বিন্দুমাত্র সহানুভুতিও নেই।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন, রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া যে কোন চুক্তি হতে পারে না, তাঁর প্রমান তিস্তার জলবন্টন আটকে আছে শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে।
সামনেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, এরমধ্যে তিস্তার জল আনতে ব্যার্থ হওয়ায় শেখ হাসিনাকে সমালোচনা মুখে পড়তে হচ্ছে, তাই তড়িঘড়ি এই চুক্তি করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলছেন।
কিন্তু এতে বরাকের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে কি না তা নিয়ে কারুর মাথাব্যথা নেই। বিডিএফ এ ব্যাপারে অবিলম্বে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার স্পষ্টীকরন দাবি করেছে।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক আরো বলেন যে শোনা যাচ্ছে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সরকার শোকনোর মরসুমে কুশিয়ারার বাংলাদেশের অংশ থেকে পাম্পের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ১৫৩ কিউসেক মিটার জল উত্তোলন করার পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশ সরকার এই জল বিভিন্ন নালার মাধ্যমে নিয়ে সেচের কাজে লাগাবে এতে উপকৃত হবেন লক্ষ লক্ষ কৃষক।
তার আগে এ উদ্দেশ্যে রহিমপুরে কুশিয়ারা থেকে কৃত্রিম যে খাল খনন করা হয়েছিল, কুশিয়ারার নদীবক্ষ উঁচু হয়ে যাওয়ায় অনেক দিন ধরে এই খাল দিয়ে জল প্রবাহিত না হওয়ায় সিলেট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার এক বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজ জমি জলসেচের অভাবে পতিত রয়েছে।
প্রদীপ বাবু বলেন, শোকনোর মরসুমে এভাবে বাংলাদেশ জল টেনে নিলে এর প্রভাব বরাক নদী সহ এর বিভিন্ন শাখানদী এবং খালবিলের উপর পড়তে বাধ্য। শীতের মরশুমে এসব শুকিয়ে যেতে পারে।
যারফলে বরাকের অন্যতম কৃষিজ উৎপাদ ধান এবং সুপারি দুটিই ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বরাকের সামগ্রিক জলবায়ুর উপর এর প্রভাব পড়বে বলে জানান বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবিলম্বে এই চুক্তির বিশদ বরাক বাসীকে জানাতে বলেন এবং কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে বরাক উপত্যকার উপর এই চুক্তির কি প্রভাব পড়তে পারে তার সমীক্ষা করে রিপোর্ট শীঘ্রই জনগণকে অবগত করতে বলেন।
কারণ, এরফলে বরাকের কৃষিজীবী এবং সাধারণ মানুষকে যদি কোন ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তবে কেন্দ্রীয় সরকারকেই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও পরিশোধ করতে হবে । অন্যথা কোন ভাবেই এই চুক্তি বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন ফ্রন্টের দুই আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।