মুখ্যমন্ত্রীর হাতে গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস খেতাব তুলে দিলেন অ্যডজুডিকেটর আনিপুরের ঋষি নাথ
জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১৯ এপ্রিল : বিশ্ব রেকর্ড করেছে অসমের বিহু নৃত্য। গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম সন্নিবিষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে অসমের পরম্পরাগত বিহু নৃত্য।
মুখ্যমন্ত্রী ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মার পরিকল্পনায় এই কাজ সম্ভব হয়েছে। বিহু নৃত্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ায় গোটা রাজ্যবাসী আনন্দিত।
তবে এর সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়েছে করিমগঞ্জেরও।
মুখ্যমন্ত্রীর হাতে বিশ্ব রেকর্ড করার সার্টিফিকেট তুলে দেন গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর অ্যডজুডিকেটর ঋষি নাথ।
করিমগঞ্জের আনিপুরে (পড়া ভালো পুরনো আনিপুর) এখনো পৈত্রিক ভিটে রয়েছে ঋষি নাথদের।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিহু নৃত্যের অনুষ্ঠানের পর কয়েকদিন গুয়াহাটিতে ছিলেন ঋষি নাথ। গত সোমবার নিজের কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি।
এদিকে, গর্বের মুহূর্তে প্রত্যন্ত আনিপুরের নাম জড়িয়ে পড়ায় খুশিতে আত্মহারা এলাকার জনগণ।
আনিপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম, শিক্ষা দীক্ষায় এক সময় অনেক নামডাক ছিল এলাকার। এলাকার বাসিন্দা অনেকে অনেক বড় পদে কর্মরত রয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়।
ঋষি নাথের পৈত্রিক বাড়িও আনিপুর নাথবস্তিতে।
তাঁর বাবা প্রয়াত ডাঃ নগেন্দ্রচন্দ্র নাথ রামকৃষ্ণনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক ছিলেন। সেটা সম্ভবত ১৯৬১-৬২ সাল।
পরে তিনি ইউকে-তে চলে যান। সেখানে এমআরসিপি এবং এফআরসিপি করেন।
লন্ডন থেকে ফিরে তিনি শিলং চলে আসেন। সেখানে নিজস্ব একটি ক্লিনিক গড়ে তুলেন।
প্রয়াত চিকিৎসকের দ্বিতীয় পুত্র হচ্ছেন ঋষি নাথ। জন্ম শিলংয়ে। শিলং সহ বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করেন তিনি।
বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গে পাকাপাকিভাবে বাস করেন। ঋষি নাথের দাদু মহেন্দ্রচন্দ্র নাথ (এমসি নাথ) লালা হাইস্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন।
আনিপুরে তাঁদের পরিবারের অনেক খ্যাতি এবং নামডাক রয়েছে।
আনিপুর সংস্কৃত অধ্যুষিত গ্রাম। জানা গেছে, বরাক উপত্যকায় সংস্কৃতের সূত্রপাত হয় এখান থেকে।
ভারতবর্ষের দশটি সংস্কৃত গ্রামের মধ্যে আনিপুর একটি।
এখানের অধিকাংশ মানুষ এখনো সংস্কৃত ভাষায় কথা বলে থাকেন। এই গ্রাম থেকেই পড়াশোনা করে এখন বিভিন্ন জায়গায় উঁচু পদে কাজ করছেন অনেকে।
ঋষি নাথের মুখ্যমন্ত্রী ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মার হাতে গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার বিষয়টি আনিপুরের কারোর জানা ছিল না।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ‘আমাদের গ্রাম’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে।
ওই গ্রুপে রয়েছেন ঋষি নাথের জেঠতুতো ভাই গৌহাটি হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মানবেন্দ্র নাথ।
তিনিই ছোট ভাইয়ের বিষয়টি ওই গ্রুপে প্রথমে জানান। তারপর থেকে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন আনুমানিক বছর ৪৩-এর ঋষি নাথ। সামাজিক মাধ্যমেও বিষয়টি চর্চা লাভ করেছে।
এদিকে, ঋষি নাথের কৃতিত্বে গর্ববোধ করছেন এলাকার জনগণ। বিশিষ্ট সমাজসেবী মৃগাঙ্ক দত্ত চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে নাম সন্নিবিষ্ট থাকলো আনিপুরের।
আমরা এর জন্য গর্ববোধ করছি। আনিপুর অত্যন্ত অজপাড়া গা। এই গ্রাম অনেক শিক্ষাবিদ তৈরি করেছে।
ভারতবর্ষে আনিপুরের নাম উজ্জ্বল করলেন ঋষি।
বিজেপি নেতা সৈকত দত্ত চৌধুরী ঋষি নাথকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, গর্বের মুহূর্ত।
ডিএসএ-এর পদাধিকারী সুবিনয় নাথ বলেছেন, জয় হো সিলেটি।
গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর মর্যাদাপূর্ণ পদে ঋষি নাথের দায়িত্বে থাকা সিলেটিদের জন্য নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়।
ছোট ভাইয়ের জন্য গর্বিত গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী মানবেন্দ্র নাথ ফোনে বলেছেন, আনিপুরের বাসাটি এখন তালাবন্দি। মন থাকলেও কাজের ব্যস্ততায় পরিবারের কারোর আসা হয় না। তবে গত বছর তিনি এখানে এসে গেছেন বলে জানান।