জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ৪ মে : সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রবীনরা জীবনের শেষ প্রান্তে বৃদ্ধাশ্রমের দিকে ঝুঁকছেন৷
তবে তাঁদের কোনোভাবেই আশ্রিত বলা যায় না, এই অভিমত বিশিষ্ট অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক জয়দীপ বিশ্বাসের।
সরকারিভাবে নির্মিত বৃদ্ধাশ্রম-এর সংখ্যা কম হলেও ব্যক্তিগতভাবে অনেক শুভানুধ্যায়ী এগিয়ে আসছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সেবা পরিচালিত বৃদ্ধাবাস ‘বেলাভূমি’র ১৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি এমন্তব্য করেন।
২০১০ সালের ১ মে সারদাপল্লীতে দানকৃত ভূমিতে যাত্রা শুরু করে বেলাভূমির। ১৪ বছরের মাথায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে।
নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে, বেড়েছে আবাসিকদের সংখ্যাও। নির্দিষ্ট বক্তা জয়দীপ বিশ্বাস নিজের বক্তব্যে বলেছেন, নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন মানুষ।
দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রবীণদের সংখ্যা ১০ কোটি, এরমধ্যে ৯০ শতাংশ রয়েছেন নিঃসঙ্গ অর্থাৎ স্ত্রী, সন্তানদের থেকে আলাদা।
কার্যত পরিবারচ্যুত হয়ে।
আর সরকারি তরফে দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা মাত্র ৭৮৬ টি, পরিসংখ্যান এ কথা বলেছে। ফলে ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে আসছেন অনেক শুভানুধ্যায়ী।
এমনকি নিজ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অভিভাবকরাই এখন যোগাযোগ করছেন বৃদ্ধাশ্রম-এর সঙ্গে।
তিনি আরো বলেছেন, প্রবীণদের বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার এখন অন্যতম কারণ হচ্ছে সন্তানদের ভবিষ্যৎ, বরাকে ভবিষ্যৎ নেই চাকরির আশায় বাইরে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা।
তাদের আটকানোর কোনো উপায়ই নেই। ফলে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শেষ জীবনে প্রবীনরা বৃদ্ধাশ্রমের দিকে ঝুঁকছেন৷
পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখাশোনার জন্য কেন্দ্র সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে এই আইন বলবৎ রয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গ্রন্থের কথাও উল্লেখ করেন তিনি, বলেন করিমগঞ্জে দীর্ঘ বছর থেকে বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের সেবার কাজ করে যাচ্ছে বেলাভূমি।
তাই এই মহান কাজে এগিয়ে আসা সকলের কর্তব্য।
স্বাগত বক্তব্যে বেলাভূমির নতুন ভবনের জন্য নির্মিত কনস্ট্রাকশন কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রবীণ সদস্য সুহাসরঞ্জন দাস বলেন, ২০১০ সালের ১ মে বেলাভূমির যাত্রা শুরু হয়।
তখন একটি ছোটো একটি ঘর ছিল, সেই থেকে বেলাভূমি বরিষ্ঠ নাগরিকদের সেবার কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্ত সরকারি কোনো অনুবাদ পায় নি এখন পর্যন্ত। ব্যক্তিগত ও কিছু সংস্থার সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছে।
গবেষক, সমাজচিন্তক, সংগীত শিল্পী, শিক্ষাবিদ চন্দ্রা মুখোপাধ্যায় বলেছেন, মায়েদের গান অন্য এক গান।
সাধারনত যে গান সবসময় শোনা হয় মায়েদের গান তা গান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি মায়েদের গান নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এর খোঁজে রয়েছেন।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, পরিবারে মহিলাদের শ্রমের কোনো মূল্য দেওয়া হয় না।
রাষ্ট্রসংঘ উল্লেখ করেছে যে, যদি পরিবারে মহিলাদের কাজের হিসেব করা হয় তাহলে জিডিপির ৪৯ শতাংশ হয়ে যেতো।
বেলাভূমি-র সম্পাদিকা অর্পনা দেব বলেছেন, দীর্ঘ বছর থেকে সবার সহযোগিতায় সেবামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামীতেও এই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ সুহাসরঞ্জন দাস, বিনোদলাল চক্রবর্তী, মিহিরকুমার দাস, রামেন্দ্র ভট্টাচার্য, চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা দেব।
উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন সুদীপ ভট্টাচার্য ও কাজরী ভট্টাচার্য। কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী প্রবীর ভট্টাচার্য ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।
বিশিষ্ট অতিথি চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়কে এদিন কালীগঞ্জের প্রশিদ্ধ শীতল পাটি উপহার দেওয়া হয়।
অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেলাভূমির সভাপতি তথা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রূপক দে-ও। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় করিমগঞ্জের জনগণের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন। এখানকার জনগণ আপন করে নিতে জানেন, বলেছেন তিনি।