গণআওয়াজ প্রতিনিধ : চা জনগোষ্ঠী এবং বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে শিলচর থানায় দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করল বিডিএফ।
অভিযুক্ত এই দুজন হলেন রোজকান্দি চা বাগানের ম্যানেজার ঈশ্বর ভাই উবাদিয়া ও দিলীপ কুমার।
বরাক উপত্যকা অবৈধ বাংলাদেশীতে ভরে গেছে এবং চা বাগানের জমি জবরদখল করছে এই মন্তব্য করে বিডিএফ-এর রোষে পড়েন উবাদিয়া।
যদিও এই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তিনি ইতিমধ্যে লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়েছেন।
কিন্তু রাস্ট্রভাষী চা উন্নয়ন পরিষদ নামের এক ভুঁইফোড় সংগঠনের কর্মকর্তা জনৈক দিলীপ কুমার এই মন্তব্যকে সমর্থন করে বরাকবাসীকে বাংলাদেশীদের সমর্থক বলে উল্লেখ করেছেন।
এমনকি প্রয়োজনে পথে নামার হুমকি দিয়েছেন, এতে ফের চটেছে বিডিএফ।
আজ ঈশর ভাই উবাদিয়া এবং দিলীপ কুমারের বিরুদ্ধে শিলচর সদর থানায় এজাহার দাখিল করেছে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এজাহার দাখিল করার পর বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন, তাঁরা মনে করেন এসবের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে বরাকের চা জনগোষ্ঠী ও বাংলাভাষীদের মধ্যে শত্রুতা ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন যে তাঁরা আশাবাদী যে পুলিশ প্রশাসন তাঁদের এই এজাহারের ভিত্তিতে অবিলম্বে বিহিত ব্যাবস্থা নেবেন এবং তাদের অবহিত করবেন।
তিনি বলেন যদি তা না হয় তাহলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে।
হৃষীকেশ বলেন, তাঁরা হিন্দি বা অসমিয়া কোন ভাষিক গোষ্ঠী এবং ভাষাভাষী মানুষের বিপক্ষে নন।
কারণ ভূমিপুত্র বলে কিছু হয়না, যারা এই ভূমিকে প্রকৃত ভালোবাসেন তাঁরাই ভূমিপুত্র। তিনি বলেন বিহার, উত্তরপ্রদেশে থেকে আগত প্রচুর হিন্দিভাষী নাগরিক বরাকে রয়েছেন।
এই উপত্যকাকে তারা অন্যান্যদের মতো আপন করে নিয়েছেন, তাঁদের অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে এই উপত্যকা। কিন্তু বিডিএফ ভাষিক আগ্রাসনবাদের বিরোধী।
তিনি বলেন এই উপত্যকা শান্তির দ্বীপ, এখানে চা শ্রমিক এবং স্থানীয় বাংলাভাষী সহ সব জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্প্রীতির দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে।
তাই কেউ যদি নিজ স্বার্থে তা বিনষ্ট করার কোন উদ্যোগ নেয় তবে সেটা বিডিএফ কোন অবস্থায় মেনে নেবে না, প্রয়োজনে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরো বলেন যে বিডিএফ পৃথকীকরণের পক্ষে যে আন্দোলন করছে তা বাঙালি প্রধান রাজ্য গঠনের আন্দোলন নয়।
বরাকের সমস্ত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও কৃষ্টি সংস্কৃতির সমোন্নয়নই তাঁদের অভীষ্ট।
অনুন্নয়ন, বেকারত্ব, নাগরিক পরিষেবার দুরবস্থা, যোগাযোগের অপ্রতুলতা, নাগরিকত্ব ইত্যাদি সমস্যার জন্য পৃথকীকরণের ডাক দেওয়া হয়েছে।
তারজন্য ভুক্তভোগী এখানকার চা শ্রমিক সহ বরাকের সমস্ত জনগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকরা।
তাই এই দাবির সপক্ষে ইতিমধ্যে চা বাগান থেকে অনেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন।
হৃষীকেশ বলেন বরাকের চা শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্যে, চা বাগানগুলির দুরবস্থা, ডলু বাগানের চা গাছ ও শ্রমিকদের উচ্ছেদ নিয়ে এর আগে বারবার সরব হয়েছে বিডিএফ।
কিন্তু স্বঘোষিত শ্রমিক প্রেমী নেতাদের এসব নিয়ে কখনো কথা শোনা যায়নি। তাই তাঁরা প্রশাসনকে অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার আহবান জানাচ্ছেন।