জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১ অক্টোবর : করিমগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা কায়স্থগ্রামে জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠা গৌতম ভট্টাচার্য করিমগঞ্জ তথা রাজ্যের শিল্প উদ্যোগের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন চিন্তাধারা এবং পরিকল্পনা নিয়েছিলেন।
তাঁর বিশেষ উদ্যোগেই আজ রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অনেক শিল্পোদ্যোগ। করিমগঞ্জের সুতারকান্দি ট্রেড সেন্টার বর্তমানে যে এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, এরজন্যও অনেক অবদান রয়েছে, প্রয়াত ভট্টাচার্যের।
তাঁকে ঘিরে অনেক ঘটনাবলি রয়েছে। সেগুলিই উঠে এসেছে ‘গৌতমক মনেরি বিচারি’ গ্রন্থে। সহধর্মিনী ড. সুলেখা চক্রবর্তী ভট্টাচার্য সম্পাদিত এই গ্রন্থ যেমন গুরুত্ব পেয়েছে বিভিন্ন মহলে তেমনি সমাদৃতও হয়েছে।
জনতা ভবনে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার হাতে বইটির উন্মোচন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে এর বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী টুইটার এবং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজেই এই বিষয়টি শেয়ার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এআইডিসির প্রধান পরিচালক হিসেবে অনেক শিল্প স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন প্রয়াত ভট্টাচার্য।
বই উন্মোচনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুলেখা চক্রবর্তী ভট্টাচার্য, চন্দ্রমৌলি চক্রবর্তী, গায়ত্রী চক্রবর্তী, দিলীপ চক্রবর্তী। প্রয়াত গৌতম ভট্টাচার্যকে নিয়ে বই প্রকাশ করার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গৌতম ভট্টাচার্যের জন্ম করিমগঞ্জের প্রত্যন্ত কায়স্থগ্রামে। গ্রামের বাড়িতে মা বাসন্তি ভট্টাচার্য, ভাই সহ পরিবারের অন্য সদস্য এখনো রয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার পর গৌতম ভট্টাচার্য উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে রাজ্য সরকারের চাকরিতে যোগ দেন। এআইডিসির কারিগরি আধিকারিক এবং পরিচালন সঞ্চালক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। এই পদে থেকেই চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর গুয়াহাটিতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
নিজের কর্ম পদ্ধতির ধরনে বিভিন্ন মহলে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর কৌশলী চিন্তাধারা এবং দক্ষতার গুনে রাজ্যের অনেক শিল্প চালু এবং বিকাশ ঘটে।
চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরও বসে না থেকে এ নিয়ে বিভিন্নভাবে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গুয়াহাটির বাড়িতে অসাবধানতায় পড়ে গিয়ে মাত্র ৬৯ বছরে অকালে মারা যান গৌতম ভট্টাচার্য।
এদিকে, স্বামীর প্রয়াণের পর তার কাজের বিভিন্ন দিক স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করার উদ্যোগ হাতে নেন স্ত্রী ড. সুলেখা চক্রবর্তী ভট্টাচার্য। কাকতালীয়ভাবে করিমগঞ্জের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন স্ত্রী সুলেখা।
করিমগঞ্জে বিদ্যালয়ের সমূহের পরিদর্শক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন তিনি। তখন সামাজিকভাবেও তিনি জড়িত হয়ে পড়েন। তার অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
স্বামীর কর্মপদ্ধতিকে ঘিরে বই প্রকাশ করার আগে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করে পড়ে তা সম্পাদিত করে প্রকাশ করেন সুলেখা।
মোট ৫৪৪ পৃষ্ঠার এই বইয়ে বাংলা, অসমীয়া, ইংরেজি ভাষায় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি গৌতম ভট্টাচার্যের জীবনাবলী নিয়ে লিখেছেন। বরাক উপত্যকার অনেকের লিখা রয়েছে বইটিতে। বইটি প্রকাশ করে ভবানী প্রিন্টার্স। সুলেখা ভট্টাচার্য গুয়াহাটি থেকে ফোনে এই প্রতিবেদককে শুক্রবার বলেছেন, ‘বইটি স্মৃতি হিসেবে থাকবে। প্রথম গৌতম ভট্টাচার্য তার কাজের ধরন নিয়েই জনগণের মনে বেঁচে থাকবেন।’