জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১৪ অক্টোবর : বর্তমান সমাজে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে এর মূলে রয়েছে নেশা। নেশাই অবক্ষয়ের মূল কারণ। ফলে এর বিরুদ্ধে সমাজকে জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন। এ কথা বলেছেন বদ্রিনারায়ণ দশাবতার সেবা সমিতির কেন্দ্রীয় সন্ত প্রমুখ তথা করিমগঞ্জ ইসকনের প্রধান নৃসিংহনন্দজি মহারাজ। নেশার বিরুদ্ধে সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে নৃসিংহনন্দজি মহারাজ বলেছেন, নেশার করাল গ্রাসে পড়েছে যুবসমাজ। নেশায় আসক্তির সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। নেশার কবলে পড়ে স্বামী মারধর করেন স্ত্রীকে। পরিবারে অশান্তি আসে। ফলে অনেক সময় সংসার ভেঙে যায়। নেশাগ্রস্থদের আয়ু অনেক কমে যায়। একমাত্র নেশার কবলে পড়ে অকালে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে অনেককে।
করিমগঞ্জেও এরকমের অনেক উদাহরণ রয়েছে। পরিবারকে মোটেই বিপদে ফেলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, দুর্গাপূজার সময় নেশায় আসক্ত হয়ে চলাফেরা করেছেন উঠতি প্রজন্মের একাংশ যুবক-যুবতীরা। পরিস্থিতি যেদিকে অগ্রসর হচ্ছে তাতে নিকট ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
তিনি আরো বলেছেন, নেশা মুক্তি সমাজ গড়লে সুষ্ঠুভাবে বাঁচা সম্ভব। ছোট থেকে সঠিকভাবে শিক্ষা দিলে নেশায় আসক্ত হতে হবে না। এর জন্য পরিবার, অভিভাবকদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। নেশার বিরুদ্ধে জাগ্রত হয়ে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নৃসিংহনন্দজি। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়ে সুষ্ঠ সমাজ গঠনের জন্য সকলকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নৃসিংহনন্দজি বলেছেন, বদ্রিনারায়ণ দশাবতার সেবা সমিতির পক্ষ থেকে নেশা বিরোধী সমাজ গঠনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ড্রাগসের বিরুদ্ধে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেজন্য সরকারের প্রশংসা করেন তিনি। সরকার ড্রাগসের বিরুদ্ধে সচেতন হয়েছে। আমাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন এবং জাগ্রত হতে হবে। তবেই দেশকে নেশার গ্রাস থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
রবীন্দ্র সদন কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড০ তনুশ্রী ঘোষ বলেছেন, ভারতবর্ষ সনাতন সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতায় প্রতিষ্ঠিত। তা ভেঙে দিতে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি চক্রান্ত করে অত্যন্ত সুকৌশলে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে।
এছাড়া পারিবারিক উপযুক্ত শিক্ষার অভাব এবং বেকারত্ব থেকেই নেশায় আসক্তির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চরিত্র গঠনের আন্দোলন ছাড়া তা রোধ করা অসম্ভব। তিনি বলেছেন, কালীপূজায় অন্যতম হচ্ছে মদ্য সাধনা। এর মূল অর্থ হচ্ছে, এর মাধ্যমে পূজারীদের ব্রহ্মরস জাগ্রত করা। কিন্তু এর বিকৃত করা হয়েছে।
অধ্যাপিকা তনুশ্রী ঘোষ আরো বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে প্রতিনিয়ত ড্রাগসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সনাতন ধর্মকে নষ্ট করতে সচেষ্ট একটি চক্র। ফলে সনাতন ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বদ্রি নারায়ণ দশাবতার সেবা সমিতির জেলা সভাপতি কমলাক্ষ্য চৌধুরী বলেছেন, নেশায় আসক্ত হয়ে অনেকে অকালে মারা যাচ্ছে। সন্তান পিতৃহারা হচ্ছে। সরকার নেশার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলেও তা যথেষ্ট নয়। শুধু পুলিশের উপর নির্ভর না করে সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান করেছেন তিনি।