ধলাই, ২১ অক্টোবর : আসাম-মিজোরাম সীমান্তের লায়লাপুর ফরেস্ট ভিলেজে বসবাসকারী মানুষকে উচ্ছেদ নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে বন বিভাগ। দ্বিতীয় দিনে প্রদান করা হয়নি কোন উচ্ছেদ নোটিশ। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সাতদিনের ভিতরে দেখাতে হবে জমির দলিল, অন্যতায় ছাড়তে হবে বনভূমির দখল। বন বিভাগের নোটিশ ঘিরে ক্ষোভ ও আতঙ্ক সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মনে।
বৃহস্পতিবার সকালে বন বিভাগের পক্ষ থেকে নোটিশ পৌঁছায়, অন্তত ২০০ টি পরিবারের কাছে। এদিনই বিকাল ৩ টায় গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে সংবাদমাধ্যমের সম্মুখে জানান।
মিজোরাম অসমের হাজার হাজার হেক্টর ভূমি তাদের দখলে নিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যে যে সমস্ত ভূমি মিজোরামের দখলে রয়েছে, অসমের ভূমিতে মিজোরাম নির্মাণ করছে পাকা গৃহ। গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ গ্রাম।
মিজোরাম সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে জমির পাট্টা, সরকারি খরচে নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি।
যে ভূমি উদ্ধার করতে গত ২৬ জুলাই, ২০২১ ইংরেজি অসমের ৬ জন পুলিশকর্মীকে শহীদ হতে হয়েছিল, সে ভূমি উদ্ধার করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ অসম সরকার। অসমের বন বিভাগ যেখানে উচ্ছেদের নোটিশ ধরিয়ে দিচ্ছে, সেই ভূমি টুকুও মিজোরাম তাদের বলে দাবি করছে।
তারা উল্লেখ করেন মিজোরামের কাছ থেকে অসমের ভূমি রক্ষায় বড় ভূমিকা রয়েছে তাদের। লায়লাপুর ফরেস্ট ভিলেজটি সীমান্তের ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম হওয়ায় মিজোরাম সে ভূমি দখল করতে পারেনি এখনও।

বন বিভাগ সীমান্ত অঞ্চলে ফরেস্ট রিজার্ভে বসবাসকারী মানুষদের যদি সরিয়ে দেয়, তাহলে সেই সমস্ত ভূমির দখল চলে যাবে মিজোরামের হাতে।
তারা উল্লেখ করেন, গত ১৭অক্টোবর ২০২০ ইংরেজিতে যখন সীমান্তের খুলিছড়ায় মিজো পুলিশের চৌকি নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিবাদের সূত্রপাত ঘটে, সেদিন রাতে লায়য়লাপুর ফরেস্ট ভিলেজে ২৩টি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল উগ্র মিজোরা।
দুই বৎসর অতিক্রান্ত হলেও উগ্র জাতীয়তাবাদী মিজোদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেখানে পুনরায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস সম্ভব হয়নি এখনও।
এবার যদি বনবিভাগ তাদেরকে সরিয়ে দেয়, তাহলে এসমস্ত ভূমিও চলে যাবে মিজোরামের দখলে। তারা বলেন গ্রামে রয়েছে সরকারি স্কুল, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সুবিধা। অনেকেই পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরও।
লায়লাপুর ফরেস্ট ভিলেজে বসবাসকারী জনগণ অসমের ভূমি রক্ষায় সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন। সীমান্তে গুলি কান্ডের ঘটনার সময়ে মিজোরামের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গ্রামের মানুষ এগিয়ে গিয়েছিলেন মিজো পুলিশ ও মিজো নাগরিকের গুলি, লাঠির আঘাতে আহত হয়েছিলেন গ্রামের অনেক মানুষ।
তারা ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন অসমের ভূমি রক্ষায় ব্যর্থ সরকার চাইছে সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদেরকে উচ্ছেদ করে সীমান্তের অবশিষ্ট জমিটুকু মিজোরামকে দিয়ে দিতে।
কোনভাবে তা হতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তারা। তাদের দাবী সরকার হয় ভূমির পাট্টা দিক, না হয় তাদেরকে গুলি করে হত্যা করুক। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে বসবাস করে আসা সে সমস্ত ভূমির দখল তারা ছাড়ছেন না। এদিকে উচ্ছেদ নোটিশ নিয়ে লায়লাপুর বিট ফরেস্ট অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে উনাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় দিনে উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করা না হলেও এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ মান।