জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ২৬ অক্টোবর : কালীপূজায় সহযোগিতা করছেন মুসলমানরা।চাঁদা কাটা, বাজার করা সহ অন্যান্য সামগ্রী জোগাড় দেওয়া সবকিছুই করেছেন।করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে এভাবেই কালীপূজা সম্পন্ন হয়েছে ভিন সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সহযোগিতায়।
করিমগঞ্জ জেলা কারাগার সুপারিনটেনডেন্ট মৃন্ময়কুমার ডাউকার পরিচালনায় সুষ্ঠু পরিবেশে ভিন সম্প্রদায়ের জনগণকে নিয়ে কালীপূজা হয়েছে।
কারাগার সুপারিনটেনডেন্টের এই রকমের মনোভাবের প্রশংসা করেছেন পূজা দেখতে যাওয়া জনগণ। কালীপূজায় সামিল হয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। ডাউকা ‘গণ আওয়াজ’কে বলেন, সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
করিমগঞ্জ জেলা কারাগার ১০০ বছরেরও অধিক পুরোনো। কারাগার স্থাপন হওয়ার পর থেকেই কালীপূজা হয়ে আসছে এখানে।
এবারও যথারীতি পূজা সম্পন্ন হয় কারাগারের প্রাঙ্গনে। পূজার প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত কয়েক বছর থেকে যিনি চাঁদা সংগ্রহ সহ পূজার বিভিন্ন কিছু বন্দোবস্ত করেছেন সেই শাহাজাদ মজুমদারকে এবছর পূজা কমিটির সম্পাদক রাখা হবে।
পরে সেটাই বাস্তবায়িত হয়। কোষাধ্যক্ষ করা হয় আব্দুল মান্নানকে। শাহজাদ এবং মান্নান দুইজন করিমগঞ্জ কারাগারের সিপাহী। পূজা কমিটির সভাপতি ছিলেন কারাগারের জেলার মনোজ খাকলারি।
পূজার বাজেট ছিল ৭০ হাজার টাকা। চাঁদা সংগ্রহের মূল ভার ছিল শাহজাদের উপর। বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করে পূজা আয়োজন করার জন্য অর্থের বন্দোবস্ত করেছেন শাহজাদ।
এছাড়া অনেকেই নিজের ইচ্ছায় কারাগারের কালীপূজার জন্য অর্থ দিয়েছেন। দুইজন হিতাকাঙ্খীর মধ্যে একজন সবজি এবং আরেকজন রেশন সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছেন।
কালীপূজা কমিটির সম্পাদক হওয়ায় এবং পূজায় ওতপ্রোতভাবে সামিল হওয়ায় খুবই আনন্দিত শাহজাদ। তিনি বলেছেন, করিমগঞ্জ কারাগারে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর গত তিন বছর থেকেই কালীপূজায় নিজেকে সামিল করেছি।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায়িত্ব ছিল না। এবছর পূজা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে পূজা ভালোভাবে সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব এসে পড়ে। এর জন্য কারাগারের সুপারিনটেনডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শাহজাদ।
সুপারিনটেনডেন্ট মৃন্ময়কুমার ডাউকা বলেছেন, সম্প্রীতি বজায় রাখতেই শাহজাদ এবং মান্নানকে কালীপূজায় জড়িত করা হয়েছে। এতে সমাজে ভালো মেসেজ যাবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগণ যাতে মিলেমিশে থাকেন, এই আর্জি জানান তিনি। সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার সকালে অনেক ভক্ত ফলমুল সহ খিচুড়ি প্রসাদ গ্রহণ করেন।
সোমবার পূজা শেষ হতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে কয়েদিদের মধ্যে প্রসাদ দেওয়া হয়। এদিন ঘট বিসর্জন করা হয় কারাগারের পুকুরে। বুধবার কালীপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কারাগারের সুপারিনটেনডেন্ট।