শিলচর, ২৯ অক্টোবর : অবৈধ বার্মিজ সুপারির কারনে স্থানীয় সুপারি মার খাচ্ছে, অথচ দিব্যি চলছে বার্মিজ সুপারির ব্যবসা।
প্রতিদিন শতাধিক বার্মিজ সুপারির গাড়ি আসাম-মিজোরাম সীমান্তবর্তী লাইলাপুর দিয়ে প্রবেশ করে ধলাই-সোনাই পুলিশ থানা পার হয়ে বাইপাস এবং শিলচরের বুক দিয়ে কালাইন হয়ে মেঘালয়ের উমকিয়াং যাচ্ছে।
সেখানে রয়েছে তাদের অবৈধ গো-ডাউন।
পুলিশকে গাড়ির নাম্বার সহ ইনফরমেশন দেওয়ার পরও পাকড়াও করতে ব্যর্থ। তবে বার্মিজ সুপারির ব্যবসায়িরাও এখন অনেকটাই চালাক।
প্রতি গাড়িতে তারা ৫০ বস্তা থেকে ১৫০ বস্তার উপরে বার্মিজ সুপারি টানার রিক্স নিচ্ছে না। এরজন্য তারা চালকের সিটের পেছনের বডির সঙ্গে এক থেকে দেড় ফুট গ্যাপে একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।
গাড়ির পুরোটাই তেরপাল দিয়ে ঢাকা থাকে। পেছন দিকে তেরপাল তুলে দেখলে পুরোটাই খালি থাকে, যারকারনে সামনের দিকে তেরপাল খুলে না দেখেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু এ নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ রয়েছে। পুলিশকে নানা ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তবে সঠিক ইনফরমেশন দেওয়ার পরও কেন পুলিশ বার্মিজ সুপারির গাড়ি পাকড়াও করতে পারছে না? এর পেছনে কি পুলিশের গোপন কোন হাত রয়েছে, না ব্যর্থ?
গত কয়েকদিন আগে সন্ধ্যে বেলা তারাপুর পুলিশকে একটি গাড়ির নাম্বার দিয়ে বলা হয়েছিল এই গাড়িতে বার্মিজ সুপারি রয়েছে, পাকড়াও করুণ।
পুলিশ আইএসবিটির সামনে গাড়ি চেক করে, কিন্তু বার বার বলা সত্বেও সামনের দিকের তেরপাল না খুলেই রং ইনফরমেশনের অযুহাতে বার্মিজ সুপারির গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।
এতে সাধারণ জনমনে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। এরপর কিছু সংখ্যক জনমনে জেদ হয়, নিজেরাই বার্মিজ সুপারির গাড়ি পাকড়াও করে প্রশাসনকে প্রমান করে দেবেন স্থানীয় সুপারি বিক্রি বন্ধ করা হলেও বার্মিজ সুপারি বন্ধ করার সাধ্য পুলিশের নেই।
সে অনুযায়ী আজ ২৯ অক্টোবর সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটা নাগাদ পূর্ব ইনফরমেশন অনুযায়ী কিছু জনসাধারণ সোনাবাড়ী ঘাটের বাইপাসের মুখ থেকে একটি গাড়ির পিছুধাওয়া করেন এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে গণ আওয়াজকেও খবর দেন।
এনআইটির পয়েন্টে থামানোর জন্য সিগন্যাল দিলে গাড়ি থামালে এ প্রতিবেদকও হাজির হন সেখানে। কিন্তু চালককে সামনের দিকের তেরপাল খুলে দেখানোর কথা বলতেই পালাতে থাকে।
এ প্রতিবেদকও জনসাধারণের সঙ্গে গাড়ির পিছুধাওয়া করেন এবং শ্রীকোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন।
কিন্তু গাড়িটি আইএসবিটি থেকে শিলচরের দিকে আসে, সেকেন্ড রেলওয়ে গেইট ক্রস করার সময় এ প্রতিবেদক ইএন্ড ডি কলোনি পয়েন্টে ছুটে আসেন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে গাড়ি আটকানোর জন্য, কিন্তু গাড়িটি সারদামনি ফিলিং স্টেশনে ঘুরিয়ে দ্রুত বেগে শ্রীকোণার দিকে ছুটে যায়।
শ্রীকোনা পুলিশ গাড়ি আটকাতে ব্যর্থ হলে ফের দুষ চাপানো হয় রং ইনফরমেশনের।
এদিকে হাইলাকান্দি জেলার বিলাইপুর-রামনাথপুর এবং করিমগঞ্জের কানমুন দিয়েও প্রতিদিন স্থানীয় পুলিশকে মেনেজ করে শত শত গাড়িতে একই পদ্ধতিতে বার্মিজ সুপারি পাচার হচ্ছে বলে একটি সুত্রের খবরে জানা গেছে।
অন্যদিকে স্থানীয় সুপারি বন্ধ থাকলেও বার্মিজ সুপারির এই অবৈধ রমরমা ব্যবসায় বেজায় চটেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার মনোভাব নিয়ে গঠিত অ-রাজনৈতিক সংগঠন ‘প্রহরী’।
প্রহরী আসামের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্বশর্মার ভূয়সী প্রশংশা করে জনসাধারণকে বার্মিজ সুপারির অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে স্থানে স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তুলার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়াও সংগঠনটি বিষয়টি আসামের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত সাহ, প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা দপ্তরের দৃষ্টিতে তুলেধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।