জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ৬ নভেম্বর : শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সুসম্পর্কের উপর জোর দিলেন রাধিকারঞ্জন চক্রবর্তী। এছাড়া বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণী কক্ষের পাঠ ছাড়ার পর প্রাইভেট টিউশনে দৌড়ানোর প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন তিনি।
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? আগের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে এই প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা করিমগঞ্জ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. রাধিকারঞ্জন চক্রবর্তী।
রবিবার রামকৃষ্ণ মিশন রোডে বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতিভবন সারা অসম মধ্যবঙ্গ শিক্ষক সংস্থার প্রকাশ্য সভায় যোগ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেন তিনি।
শিক্ষকদের নিজেদের কাজে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাধিকারঞ্জন।
রাধিকারঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে একজন ছাত্রের সফলতা আসে। এটা হচ্ছে ত্রিবেণী সঙ্গম।
ত্রিবেণী সঙ্গম না হলে ছাত্রদের সফলতা আসে না। শ্রেণীকক্ষের পাঠ ছাড়ার পর কেন প্রাইভেট টিউশনে যেতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের, এই প্রশ্ন তুলেন তিনি।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি পাবলিক উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক প্রয়াত অর্ধেন্দু রায়, নীরদবরণ গোস্বামী প্রমুখের নাম উল্লেখ করে তাঁদের পড়াশোনার পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন।
চক্রবর্তী আরো বলেছেন, আগে শিক্ষকদের অনেকে বাড়িতে এসে ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে নিতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতেন।
বর্তমানে সে রকমের পদ্ধতি করতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। যদিও নিজের বক্তব্যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য তিনি কাউকে দোষারাপ করতে নারাজ।
বলেছেন, মা-ই হচ্ছেন প্রথম শিক্ষক। সন্তান কীভাবে পড়াশোনা করছে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কারণ মোবাইলেরও অনেক কুফল রয়েছে। ফলে সন্তানদের পড়াশোনায় সব সময় খেয়াল রাখার জন্য মা-দের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিভিন্ন দাবি থাকতেই পারে। সেগুলি আদায় করার জন্য বিভিন্ন রাস্তায় যাওয়ার তাঁদের অধিকার রয়েছে।
তবে নিজেদের কাজেও সচেতন থাকার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শ দিয়েছেন করিমগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর দৈনিক উপস্থিতি কম থাকার ফলে অনেক শিক্ষক ছুটির সময়ের অনেক আগেই বাড়িতে চলে আসেন।
এই কথার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, অসময়ে অনেক শিক্ষককেই আমি বাইরে দেখতে পাই। এর কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিদ্যালয়ে নাকি ছাত্র নেই।
কিন্তু যারাই আছে তাদেরকে সঠিকভাবে শিক্ষাদান করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শ দেন তিনি।
সারা অসম মধ্যমঙ্গ শিক্ষক সংস্থার রাজ্যিক সভাপতি রঞ্জিত বরঠাকুরের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন এএসটিসির চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক বিপুল দাস, সংগঠনের উপদেষ্টা কুশল বরা, উপ-পুরপতি সুখেন্দু দাস, অসিতবরণ পাল, নূর উদ্দিন, আতিকুর রহমান প্রমুখ।
সকালে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রকাশ্য সভার সূচনা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি রঞ্জিত বরঠাকুর। অস্থায়ী শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন উপস্থিত অতিথিরা।
পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৭০ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মধ্যভঙ্গ শিক্ষক সংস্থা প্রদেশ কমিটির কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে নতুন পেনশন নীতি বাতিল করে পুরনো পেনশন নীতি চালু করা সহ অন্যান্য বিভিন্ন দাবিতে প্রস্তাব নেওয়া হয়।
অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক অশোক দত্ত বলেছেন, আগামী ২৪ এবং ২৫ মার্চ মধ্যবঙ্গ শিক্ষক সংস্থার রাজ্যিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে নলবাড়িতে। করিমগঞ্জে প্রদেশ কমিটির কার্যকরী সভা এবং শিক্ষক সম্মেলন সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষক নেতা অশোক দত্ত।