শিলচর, ১৫ নভেম্বর : বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের ডাকা আগামী ১৮ নভেম্বরের বরাক বনধকে সফল করেতে বিভিন্ন দল, সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শিলচর পেনসনার্স ভবনে একটি যৌথ সভার আয়োজন করা হয়।
সিপিআই দলের বর্ষীয়ান নেতা রফিক আহমেদের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত এদিনের সভায় বিডিএফ আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য প্রস্তাবিত বনধের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বরাকের কর্মপ্রার্থীদের বঞ্চনা ও মেঘালয়ে অনুপজাতিদের নির্যাতনের প্রতিবাদ এই বনধের মুল উদ্দেশ্য হলেও বরাকের সুপারি ব্যাবসায়ীদের হেনস্থার বিষয়টিও এই বন্ধের দাবির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান।
আসাম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অরিন্দম দেব এই প্রস্তাবিত বনধের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এবং তিনি বলেন, আজকাল গনতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে প্রসাশনিক যে দমন পীড়ন চালানো হচ্ছে তা গনতন্ত্রের পক্ষে অশনিসংকেত।
তিনি এই ইস্যকেও বনধের দাবিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন।
ফোরাম ফর স্যোসাল হারমনির পক্ষ থেকে প্রদীপ নাথও তাঁর বক্তব্যে এই প্রসাশনিক দমন পীড়ন ইস্যুকে গুরুত্ব দেবার আবেদন জানান।
কংগ্রেসের পক্ষে শিলচর শহর কমিটির সভাপতি অতনু ভট্টাচার্য ১৮ নভেম্বরের বনধকে সফল করে তুলতে তাঁর দল সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন।
তিনি রাজ্যের হিমন্ত বিশ্বশর্মা নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বাক স্বাধীনতার কন্ঠরোধ করার পদক্ষেপের নিন্দা ও ধিক্কা জানান। এক্ষেত্রে বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে তিনি জোটবদ্ধ হয়ে লড়ার আহ্বান জানান।
বাঙালি নব নির্মান সেনার পক্ষ থেকে রাজু দাস তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে বরাকের চাকুরিপ্রার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চনা করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই ইস্যুতে ১৮ নভেম্বরের প্রস্তাবিত বনধকে সফল করে তুলতে তার দল সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে জানান।
আমরা বাঙালি দলের আসাম রাজ্য কমিটির সভাপতি সাধন পুরকায়স্থ বরাকের প্রতি দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি ১৯৬১-র ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, সেই সময় শাসকদলের হয়েও বরাকের কংগ্রেস বিধায়করা মাতৃভুমির অধিকার রক্ষায় গর্জে উঠেছিলেন, পদত্যাগ করেছিলেন।
আবার সেই লড়াই লড়তে হবে। তাই এই বনধ বিডিএফ ডাকলেও আসলে এটি সবার যৌথ লড়াই, উপস্থিত সব দল সংগঠনের আশা প্রকাশ করে বলেন এই বনধকে সফল করে তুলতে দায়বদ্ধ থাকবেন।
মার্চ ফর সায়েন্সের প্রতিনিধি কৃশানু ভট্টাচার্য বলেন যে এই বনধ কর্মসূচিকে বানচাল করতে ইতিমধ্যেই এক স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয় হয়েছে। নবনির্মিত একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এবং বরাকের কর্মপ্রার্থীদের নিজেদের স্বার্থে এই কর্মসূচিকে সফল করতে প্রয়াস নেবার আহবান জানান।
বিডিএফ এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, তিনি নিশ্চিত যে বরাকবাসী এই বনধ কর্মসূচিকে স্বতস্ফুর্ত সমর্থন করবেন।
গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কন্ঠরোধ করতে আজকাল যেভাবে প্রসাশনিক আতিশহ্য চলছে তার প্রতিবাদও এই বনধের দাবিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিনের সভার সভাপতি সিপিআই দলের রফিক আহমেদ বলেন, বরাকে নিযুক্তি নেই বলে অনেকদিন ধরে ‘ব্রেনড্রেন’ চলছে এবং এতে বরাক ক্রমশঃ মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন বরাকের নিযুক্তি বঞ্চনার বিরুদ্ধে এই বনধকে তার দল পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে এবং সফল করে তুলতে তারা সাধ্যানুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ১৮ নভেম্বরের প্রস্তাবিত বনধ যারা ডেকেছেন এবং যারা সমর্থন করছেন তারা সবাই গনতান্ত্রিক মুল্যবোধে বিশ্বাসী। তাই এই কর্মসূচিতে কোন ধরনের প্ররোচনা বা হিংসার কেউ যাতে শিকার না হন সেই ব্যাপারে সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।