কাশ্মীর, ৩১ ডিসেম্বর : কাশ্মীরে হালকা থেকে মাঝারি তুষারপাত দীর্ঘদিনের শুষ্কতার অবসান করে উপত্যকাকে তীব্র ঠাণ্ডা পরিস্থিতি থেকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এমনকি এদিন শ্রীনগর বিমানবন্দরে ফ্লাইট অপারেশনগুলিও প্রভাবিত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
উপত্যকার সমভূমিতে মরসুমের প্রথম এই তুষারপাত, তবে শ্রীনগর-লেহ জাতীয় মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
কাশ্মীরের সমভূমিতে হালকা তুষারপাত হলেও, উঁচুতে মাঝারি তুষারপাত হয়েছে। এই তুষারপাত শুধু কাশ্মীর উপত্যকার দীর্ঘায়িত শুষ্ক স্পেল ভেঙে দেয়নি, এটি পর্যটকদের আনন্দও এনে দিয়েছে।
মধ্য কাশ্মীরের গন্ডারবাল জেলার সোনমার্গ পর্যটন রিসর্টে প্রায় ২০ ইঞ্চি তুষারপাত রেকর্ড করা হয়েছে, উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার গুলমার্গের বিখ্যাত স্কিইং গন্তব্যে প্রায় সাত ইঞ্চি জমেছে।
শ্রীনগরে প্রায় ১.৫ ইঞ্চি, কাজিগুন্ডে ছয় ইঞ্চি, পাহলগামে পাঁচ ইঞ্চি, কুপওয়াড়ায় আট ইঞ্চি এবং কোকেরনাগে দুই ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বান্দিপোরার সমতল ভূমিতে রেকর্ড করা হয়েছে ২-৫ ইঞ্চি এবং এর উপরের এলাকায় ৫-৮ ইঞ্চি, সীমান্ত গুরেজ সেক্টরে প্রায় ১২ ইঞ্চি, তাছাড়া রাজদান পাস প্রায় ১৮ ইঞ্চি হয়েছে।
শ্রীনগর-লেহ মহাসড়কের জোজিলা পাসেও প্রায় ২০ ইঞ্চি তুষারপাত হওয়ায় কাশ্মীর-লাদাখের সংযোগকারী মহাসড়কটি বন্ধ হয়ে পড়ে।
তারা জানান, তুষার জমে মুঘল রোডও যান চলাচলের জন্য বন্ধ রয়েছে। তবে শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল করছে।
কুয়াশার একটি ঘন স্তর উপত্যকার অনেক অংশকে গ্রাস করেছে, ফলে শ্রীনগর বিমানবন্দরের দৃশ্যমানতা হ্রাস পেয়েছে যা ভোরে বিমান চলাচলকে প্রভাবিত করেছে।
তারা জানান, দৃশ্যমানতা কম থাকায় সকালে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। তবে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দৃশ্যমানতার উন্নতি হয় এবং ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়।
তুষারপাত গুলমার্গ এবং পাহলগাম ছাড়া উপত্যকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার উন্নতি হওয়ায় উপত্যকাযর পর্যটকদের মধ্যে আনন্দ এনে দেয়।
মহারাষ্ট্রের এক পর্যটক বলেছে, অবশেষে তুষারপাতের অভিজ্ঞতা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আমরা পূর্বাভাস দেখেছি এবং কিছু তুষারপাতের আশা করছিলাম। ঈশ্বর আমাদের শুনেছেন এবং আমরা উপভোগ করছি।
মধ্যপ্রদেশের আরেক পর্যটক বলেছেন, তুষারপাতের অভিজ্ঞতায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের একজন আধিকারিক বলেছেন যে শ্রীনগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির হয়েছে এবং পাহালগাম যেখানে অমরনাথ যাত্রার বেস ক্যাম্প হিসাবেও কাজ করে সেখানে সর্বনিম্ন মাইনাস ৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
গুলমার্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সীমান্ত কুপওয়ারা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির হয়েছে, সেই সময় উপত্যকার প্রবেশদ্বার শহর কাজিগুন্ডে মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কোকেরনাগেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কাশ্মীর বর্তমানে ‘চিল্লা-ই-কালান’-এর কবলে রয়েছে, ৪০ দিনের সবচেয়ে কঠোর আবহাওয়ার সময় যখন তুষারপাতের সম্ভাবনা সর্বাধিক ঘন হয়।
‘চিল্লা-ই-কালান’ ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩০ জানুয়ারী শেষ হয়। এর পরেও ২০ দিনব্যাপী ‘চিল্লাই-খুর্দ’ (ছোট ঠান্ডা) এবং ১০ দিন-ব্যাপী ‘চিল্লাই-‘ সহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার আবহাওয়া মেঘলা থাকবে এবং উচ্চ সীমানায় হালকা তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে শনিবার থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমার আশা করা হচ্ছে, দিনগুলি আরও উষ্ণ হবে এবং রাতগুলি আরও ঠান্ডা হবে আবহাওয়া দপ্তর বলেছে।