করিমগঞ্জে নো ম্যানস ল্যান্ডে অলৌকিক দুর্গাবাড়িতে দেবী আরাধনা চলছে দেড়শো বছর ধরে

Spread the love

জুলি দাস

করিমগঞ্জ, ২৫ সেপ্টেম্বর : ঠিক কত বছর আগে থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাকরশালের মানিকপুরে নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা দূর্গাবাড়িতে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে সেই হিসাব গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ কারোর কাছেই নেই।

তবে অনুমান করা হচ্ছে কমেও দেড়শ বছর পুরোনো হবে এখানকার দুর্গাপূজা। এবারও সাত্ত্বিকতা মেনে পূজার প্রস্তুতি চলছে। মন্দিরে নতুন রং দেওয়া হয়েছে। আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত গ্রামেরই পুরুষ-মহিলারা। মহালয়ার সকালে পূজার্চনা করেছেন পুরোহিত।

পুজোয় রাজষিকতা কিছুই নেই, তবে সব নিয়ম নীতি মেনে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে যখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে, তখন ঠিক উল্টোদিকে অস্থায়ী তাঁবুতে বন্দুক হাতে কড়া পাহারায় নিয়োজিত বিএসএফ জওয়ান। কারণ মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের উপর। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছে ৭ ব্যাটেলিয়ন বিএসএফ।

   মানিকপুর গ্রামের জমিদার প্রয়াত নরিন্দ্র মালাকারের কয়েকপুরুষ আগের পূর্বসূরিরা এই পূজা শুরু করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর সেই দায়িত্ব এসে পড়ে ভাই হৃদয়রঞ্জন মালাকারের উপর।

তবে হৃদয়রঞ্জনের প্রয়াণের পর গ্রামের দুই পরিবারের মধ্যে জমি বিবাদের ফলে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকে এই পূজা। ২০১২ সালে নবমীর রাতে কর্তব্যে থাকা অবস্থায় ওই দুর্গাবাড়ির সামনে দিয়ে এক বিএসএফ জওয়ান যাওয়ার পথে অন্ধকারে আরতি দেখতে পান।

কিন্তু টর্চ জ্বালানোর পর কিছুই আর নজরে পড়েনি তাঁর। তখন তিনি বিষয়টি জবাইনপুর ক্যাম্পের কমান্ডেন্টকে বিষয়টি জানান। আসেন কমান্ডেন্ট নিজে। অন্ধকারে তাঁরও আরতির ছবি চোখের সামনে ভাসে। প্রদীপ জ্বালানো অবস্থায় দেখতে পান।

কিন্তু টর্চ জ্বালানোর পর ফের অদৃশ্য! পরের দিন সকালে অদ্ভুতুড়ে এই ঘটনা তখনকার পঞ্চায়েত সদস্য অপু মালাকারকে জানান বিএসএফ আধিকারিক। এখানে কী রয়েছে তা জানতে চান বিএসএফ আধিকারিক।

তখনই পুরনো সবকিছু জানান অপু। সবকিছু জেনে এখানের দুর্গাবাড়িতে পুনরায় পূজা চালু করার প্রয়াস নেন ওই আধিকারিক। জঙ্গল পরিষ্কার করে দুর্গাবাড়িতে ওই বছর কালীপূজার দিন পুনরায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর থেকেই মানিকপুর দুর্গাবাড়িতে পুনরায় শুরু হয় দুর্গাপূজা।

দুর্গাবাড়ির স্থায়ী পুরোহিত অঞ্জন চক্রবর্তী। মানিকপুর সর্বজনীন দুর্গাবাড়ি কমিটি থাকলেও পূজার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়। পূজা কমিটির কর্মকর্তাদের ছবিসহকারে ফেস্টুন টাঙ্গানো রয়েছে মন্দিরস্থলে। ২০১২ সালে পুনরায় দুর্গাপূজা শুরু হলে প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন শ্যামাকান্ত দাস, সম্পাদক অপু মালাকার।

   মানিকপুর সর্বজনীন দুর্গাবাড়ি কমিটির সভাপতি অপু মালাকার দুর্গাবাড়ির ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে আরো বলেছেন, প্রতিবছর পুরনো দুর্গামূর্তি দশমীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। নতুন মূর্তি এক বছর পর বিসর্জন করা হয়। পূজার কয়েক দিন এখানে খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

 সীমান্ত সড়কে বসে প্রায় ১০ হাজার ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করেন। বিভিন্ন দানের উপর পূজা সম্পন্ন হয়। যা চাঁদা সংগ্রহ হয় তা দিয়ে সাজসজ্জা, রান্নার ব্যয় ইত্যাদি করা হয়। সীমান্ত সড়কের পাড়ে থাকা  দান বাক্স থেকে এবছর ৭ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে। সাধারণত কাঁটাতারের বেড়ার পাশে থাকা গেট দিয়ে যাতায়াতের যে সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে, পূজার পাঁচ দিন সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত তা বাড়ানো হয় বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে।

   কথিত আছে, ভক্তি এবং নিষ্ঠা নিয়ে মায়ের মন্দিরে কেউ আসলে মা কাউকে নিরাশা করেন না। অনেকে মানত করে ফল পান। পরে ফিরে এসে মাকে প্রণাম জানান। এমন অনেক বাস্তব

ঘটনার সাক্ষী গ্রামের উভয় সম্প্রদায়ের নাগরিক। করিমগঞ্জ শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরবর্তী করিমগঞ্জ বাইপাস পয়েন্টের নিউ করিমগঞ্জ স্টেশনের বিপরীতে থাকা সড়কপথ দিয়ে যাওয়া যায় মানিকপুর দুর্গা বাড়ি।

   অপু মালাকার বলেছেন, মানিকপুর দুর্গা মন্দিরে ফের দুর্গাপূজা চালু করার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে বিএসএফের। কারণ তারা উদ্যোগ না নিলে আজও মন্দির জঙ্গলে ঘেরা থাকতো। তিনি জানান, নিয়ম মেনে পূজা চারদিন হলেও মহালয়া থেকে বেল ষষ্ঠী পর্যন্ত চন্ডীপাঠ হয়। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। দুর্গাপূজায় বিএসএফ জওয়ানরাও অর্থ সাহায্য করেন বলে তিনি জানান। মানিকপুরের দুর্গা বাড়িতে পূজায় সামিল হতে ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মানিকপুর সর্বজনীন দুর্গাবাড়ি কমিটির সভাপতি।

Gana Awaz Desk

Avatar

Leave a Reply

create token < a href="https://capablemachining.com/">china cnc milling bep20 token create a usdc token create crypto token create a bep20 token create a token ethereum token stripe token create bnb token create token create a token token mint mint club token