নুন খেয়ে নিমক-হারামি না করার অবস্থানে কাছাড় পুলিশ!
নিউজ ডেক্স, গণআওয়াজ : শেষ রক্ষা করতে পারলেন না শিলচর তারাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজু দে এবং কাছাড়ের পুলিশ সুপার নোমাল মাহাত্তা।
অবশেষে প্রকাশ্যে এল সিঙ্গানিয়া ফিনটেক ক্যাপিটেল সোলিউশন নামের এই ভুঁইফোঁড় সংস্থার প্রতারণা।
গ্রেফতারও হলেন বেশ কিছু প্রতারক।
কয়েক মাস আগে আমাদের গণআওয়াজের সম্পাদক সুজিত কুমার চন্দ এই প্রতারক সংস্থার প্রতারণা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছিলেন।
সেই সময় ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন এই দুই পুলিশ আধিকারিক।
ভুঁইফোঁড় এই সংস্থার প্রতারণা ফাঁস করতে গিয়ে তাদের পোষা প্রমীলা বাহিনী এবং গুন্ডা বাহিনীর হাতে হেনস্থাও হতে হয়েছে সাংবাদিক সুজিতকে।
যদিও সেই সময় পুলিশ সুপারকে ফোন করার পর তারাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজু দে এদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেন।
কিন্তু পরে এই সাংবাদিক, এজাহার নিয়ে তারাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে ইনচার্জ রাজু দে তাঁর এজাহার ফিরিয়ে দেন।
এরপর সাংবাদিক সুজিত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে তাঁর নির্দেশে ডকেটে এজাহার জমা দেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আজ পর্যন্ত তাঁর এজাহার রেজিস্টার হয়নি।
অথচ যারা সাধারণ মানুষকে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছে, তাদের এজাহার রেজিস্টার করে আমাদের এই সাংবাদিককে থানায় ডেকে নিয়ে ধমকানো হয়।
ইনচার্জ রাজু দে ভয় দেখাতে গিয়ে করিমগঞ্জের কোথাও এনকাউন্টার করার কথা শোনাতেও ছাড়েননি।
পরে সাংবাদিক সুজিতকে কোর্টে কমপ্লেইন কেইস করতে হয়েছে।
কোর্ট আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে পুলিশের কাছে ফাইল তলব করেছে।
দুই পুলিশ আধিকারিক যে মোটা অংকের উৎকোচ এবং উপহারের বিনিময়ে এই দুর্নীতিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তা এই ঘটনায় প্রমান করে।
তবে আমাদের সাংবাদিকের এই প্রচেষ্টায় ভুঁইফোঁড় কোম্পানির প্রতারণার ব্যবসা মুখথুবড়ে পড়েছিল।
ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা ফেরৎ চেয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
এরপর বাধ্য হয়ে তাদেরকে তারাপুর ইএনডি কলোনি থেকে অফিস তুলে নিয়ে যেতে হয়েছে অম্বিকাপট্টিতে।
সেই সময় এই প্রতারক চক্রকে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শাসক দলীয় একাংশ দাদা, সাংবাদিক নামধারী একাংশ এবং ব্লগাররা (স্বঘোষিত সাংবাদিক)।
ভুঁইফোঁড় সংস্থার অম্বিকাপট্টিতে অফিস উদ্বোধনে দেখা গেছে এরকম বেশ কিছু মুখ।
এদের মধ্যে ছিলেন- বিজেপির কাছাড় জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়, শিলচর প্রেসক্লাবের সম্পাদক শঙ্কর দে এবং অগপ জেলা সভাপতি কবির আহমদ বরভুইয়া।
এই ছবি ও ভিডিও প্রচার করে প্রতারকরা গ্রামেগঞ্জে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজেদেরকে ধুঁয়া তুলসী পাতা প্রমান করে ফের তাদের প্রতারণার জাল বিস্তার করে।
এছাড়া তাদেরকে এই প্রতারণায় সহযোগিতা করে একাংশ ব্লগার (স্বঘোষিত সাংবাদিক)।
সাধারণ মানুষকে লুণ্ঠনের টাকায় লুণ্ঠনকারীদের একান্ত সাক্ষাৎকার প্রচার করে জনগণকে বিশ্বাস দিয়েছিল, এই সংস্থা সঠিক এবং সরকার অনুমোদিত।
কিন্তু আজ প্রমান হল এই সংস্থা ভুঁইফোঁড় এবং প্রতারক।
সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বরাক থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই প্রতারক কোম্পানির বরাক উপত্যকার কো- অর্ডিনেটর বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার হাইলাকান্দি জেলা সভাপতি আমজাদুল হোসেন সহ বেশ কিছু প্রতারককে গ্রেফতার করে অফিস সিল করে দিয়েছে।
কিন্তু শিলচরে এখন পর্যন্ত পুলিশি অভিযানের বা ধরপাকড়ের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
শিলচরের পুলিশ সুপার নোমাল মাহাতো এবং তারাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজু দে এখনও নুন খেয়ে নিমক-হারামি না করার অবস্থানে রয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা মানুষকে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছে তারা যদি দোষী হয়, তবে তাদেরকে যারা এই প্রতারণায় মদত যোগিয়েছে তারা কি দোষী নয়?
যারা মানুষকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছে তাদেরকে যদি গ্রেফতার করা হয়, তাহলে প্রতারণায় যারা তাদেরকে মদত যোগিয়েছে তাদেরকে কেন গ্রেফতার করা হবে না?
ভিতরে ভিতরে এই ভয়ই হয়তো তাড়া করছে পুলিশ সুপার নোমাল মাহাতো এবং তারাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজু দে-কে।
তাই শিলচরে তারা এই ভুঁইফোঁড় সংস্থার প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান বা ধরপাকড় করে নিজেদেরকে বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না। এখন দেখার বিষয়, জনগণ এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ এ সমস্ত দুর্নীতিবাজ পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেন।