রূপালী সূত্রধর, বাজারিছড়া, ৩০ অক্টোবর : হিন্দিভাষী হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূজা ছট্ পূজা। ছট্ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজা। এই রশ্মি সূর্য থেকেই পৃথিবীর বুকে আসে। সুতরাং এই পূজা আসলে সূর্যদেবের পূজা।
প্রত্যক্ষভাবে ‘ছট; এর পূজা হলেও এই পূজার সঙ্গে জড়িত আছেন স্বয়ং সূর্যদেব, আছেন মা গঙ্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণা।
পাথারকান্দি চা বাগান ও হিন্দীভাষী বহু এলাকায় ও অত্যন্ত আনন্দ ও উল্লাসের সহিত এবার ও ছট পূজা অনুষ্ঠিত হল।
প্রাথমিক ভাবে শনিবার হতেই পূজো আরম্ভ হলেও মূল পূজো রবিবার বিকেলে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া হয়।
সোমবার সকালে উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য প্রদান করবেন উপবাসকারী ব্রতচারীরা।
তাই ওই অর্ঘ্যানূষ্ঠানকে ঘিরে ইচাবিল-লোয়াইরপোয়া, হাতিখিরা, সলগই, বৈঠাখাল প্রভৃতি এলাকায় লঙ্গাইনদীর তীরে অবস্থিত ছটঘাট গুলিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ইচাবিল এবং লোয়াইরপোয়াঘাটে লঙ্গাইনদীর তীরে শো শো ধর্মপ্রাণ মানুষ সমবেত হন। মূলত বিহারী হিন্দীভাষীরাই এই পূজোর আয়োজন করলেও জাতি বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক ভাষাভাষীরই ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতিতে লঙ্গাইনদীর তীর এক পূণ্যভূমিতে পরিণত হয়ে পড়ে।
রবিবার অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করতে লোয়াইরপোয়া ঘাটে উপস্হিত হন পাথারকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। তিনি ধূপ ও প্রদীপ দিয়ে অস্তগামী সূর্যদেবতাকে প্রণাম নিবেদন করেন।
বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল সবাইকে ছটপূজার শুভেচ্ছা জানান।
ইচাবিল ও লোয়াইরপোয়া এলাকাবাসী সবাইকে ছটপূজার শুভেচ্ছা জানান মধুসুদন লোহার, রামেশ্বর ছেত্রী, বিশ্বজিৎ কূর্মি, শ্যাম আকুড়া, সোনালী চৌধুরি, বিশ্বজিৎ গোয়ালা প্রমুখ।
পৌরাণিক কাহিনিতে রয়েছে, বর্ষার আগমন ঘটেছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হয়নি। চাষিদের মাথায় হাত। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে।
মা অন্নপূর্ণা ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকেন। সকল দেবতা মা অন্নপূর্ণার এহেন দুর্দশায় ব্যথিত। ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে। সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়।
সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন এবং বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন।
সূর্যদেব আরও বলেন, অস্তগমনকালে গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে এবং সপ্তমীর উদয়কালে মা অন্নপূর্ণা গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা ১২টি নাম উচ্চারণ করলে আমার স্মরণকারীকে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পূর্ণ হতে থাকবে।
মা অন্নপূর্ণা আবার তাঁর শ্রী ফিরে পান। তাই ছট্পূজা বা ব্রত একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পূজা। বিজ্ঞানসম্মত বলা যায়।
গঙ্গার জলে সেচ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে অনাবৃষ্টিতেও খেত-খামার অন্নে পূর্ণ হয় এবং স্বাভাবিকভাবে মনুষ্যসমাজে খাওয়া-পরার অভাব থাকে না। এই ব্রত পালনে সূর্যদেবের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি আমাদের জীবনে যেমন বিঘ্ননাশক, দুঃখনাশক, তেমনি সুখদায়ক ও অর্থ-বৈভবদায়ক।