জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ৩১ অক্টোবর : করিমগঞ্জে বহু প্রতীক্ষিত মেডিকেল কলেজ রাতাবাড়িতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। ফলে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা নিয়ে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, গৌহাটি হাইকোর্টে করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজ নিয়ে দায়েরকৃত দ্বিতীয় জনস্বার্থ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৩ নভেম্বর। ওইদিন আদালতের পক্ষ থেকে সরকারকে কী নির্দেশ দেওয়া হয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তবে গত ২৬ অক্টোবরের শুনানিতে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালত সরকারকে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ তাড়াতাড়ি করার কথা বলতে পারে। এর বেশি কিছু সম্ভব নয়।
কারণ এটা সরকারের নীতির ব্যাপার। এ নিয়ে মামলাকারী আইনজীবী হিফজুর রহমান চৌধুরীকে এ বিষয়ে চিন্তা করে দেখার কথা বলে আদালত।
হিফজুর ‘গণ আওয়াজ’কে শনিবার বলেছেন, আদালত বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে। এরকমের কিছু নির্দেশ আদালত দিলে এ নিয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করা যাবে। সরকার ইচ্ছা করে করিমগঞ্জবাসীকে মেডিকেল কলেজ থেকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
করিমগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের রয়েছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী (সে সময় অর্থসহ বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে) নির্বাচনী প্রচারে এসে করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এরপর সদনে বাজেট বক্তৃতায় করিমগঞ্জ মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার ঘোষণা করে সরকার।
তবে পরে কাজ আর অগ্রসর না হওয়ায় গৌহাটি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা (৬৩/২০২০) দায়ের করেন আইনজীবী হিফজুর রহমান চৌধুরী। ২০০০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এর রায় দেয়।
তাতে উল্লেখ করা হয়, মামলাকারী স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সচিবকে আবেদন জানালে তিনি যেন সাতদিনের ভিতরে এর জবাব দেবেন। আদালতের নির্দেশ মত আবেদন করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রধান সচিব উত্তর না দেওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সচিব সমীর সিনহার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা করেন হিফজুর।
এর নাম্বার হচ্ছে (সি) ৯১/২০২১। এরপর আদালত ফের নির্দেশ দিলে মামলাকারীকে ইমেইল মারফত উত্তর দেন প্রধান সচিব। এরমধ্যে বিধানসভায় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের কপিও পাঠানো হয়।
প্রধান সচিব জানান, করিমগঞ্জে বিভিন্ন মত থাকার ফলে জমি নির্ধারণে বিলম্ব হচ্ছে। জমি নির্ধারণ হওয়ার পর ডিপিআর তৈরি করা হবে।
এরমধ্যে ২০২১ সালের ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সচিব করিমগঞ্জের তৎকালীন জেলাশাসককে চিঠি লিখে জেলা সদরে থাকা সিভিল হাসপাতাল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫০ বিঘা জমি চিহ্নিত করার জন্য বলেন।
পরে করিমগঞ্জে এসে রাতাবাড়ি সহ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন শীর্ষ স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুরাগ গোয়েল। গোয়েলের করিমগঞ্জ সফরের সময় করিমগঞ্জ জেলা মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়ন সমিতির কর্মকর্তারা তাদের দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন অতিরিক্ত আবর্ত ভবনে।
অন্যদিকে, করিমগঞ্জে মেডিকেল কলেজের অবস্থান জানতে চেয়ে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান সচিবের কাছে একটি আরটিআই করা হয়। উত্তর আসে, জমি চিহ্নিত হলে ডিপিআর তৈরি হবে।
অন্যদিকে, আরেকটি জনস্বার্থ মামলা করা হয় হাইকোর্টে (৮১/২০২১)। ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এর রায় দেয়। সরকারকে মেডিকেল কলেজের জমির স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলে।
গত ২০ জুন আদালতে লিখিত জবাব দেয় রাজ্য সরকার। ২৬ অক্টোবর শুনানি হয়। সরকার পক্ষের হয়ে এদিন লড়েন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল দেবজিত শইকিয়া।
হিফজুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, আদালত জানান মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা সরকারের কাজ। সরকার ঠিক করবে কোথায় মেডিকেল কলেজ হবে। আদালত তাড়াতাড়ি করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিতে পারে। এ ব্যাপারে চিন্তা করে দেখার জন্য আমাকে বলা হয়।
হিফজুর গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী হলেও মূলত করিমগঞ্জের বটরশি এলাকার বাসিন্দা। গুয়াহাটি থেকে ফোনে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সরকার এখনো বলছে জমি চিহ্নিত করা হয়নি।
আদালত মামলার বিষয়টি আমাকে চিন্তা করে দেখতে বলেছেন। কিন্তু এটা আমার ব্যক্তিগত মামলা নয়। এতে করিমগঞ্জবাসির স্বার্থ জড়িত রয়েছে।
ফলে এ নিয়ে করিমগঞ্জবাসির মতামত চেয়েছেন তিনি। হিফজুর আরো বলেছেন, আদালত সরকারকে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ দ্রুত করার নির্দেশ দিলে এ নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে। করিমগঞ্জ মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়ন দাবি কমিটির কর্মকর্তা তারাকিশোর বণিক বলেছেন, রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় জেলা সদর থেকে যে দূরত্বে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে করিমগঞ্জেও এভাবেই করা হোক।