ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার : বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের নির্মূল করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার জাতিয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ দেখাল হিন্দু মহাজোট।
হিন্দু মহাজোটের অভিযোগ প্রশাসন এই আইনের অপব্যবহার করে হিন্দু নির্যাতনের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিকালে মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরায় নির্মীয়মাণ দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর এবং বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, হত্যা, জরবদখল, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, জোর করে ধর্মান্তরিত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে হিন্দু মহাজোট আয়োজন করে তারা।
মানববন্ধনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় গ্রামগঞ্জে ইসলাম ধর্মীয় বক্তারা কীভাবে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করছেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন তখন কী আমাদের হিন্দু ধর্মের অবমাননা হয় না? প্রশাসন কোথায় থাকে, তাঁদের কেন আইনের আওতায় আনা হয় না?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু কি হিন্দুদের, ৫৭ ধারা শুধু কি আমাদের জন্যই? তিনি আইসিটি আইন পরিহার করারও আহ্বান জানাই।
তাঁর অভিযোগ এই আইসিটি আইন বেশির ভাগই ব্যবহার হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্মূল করার জন্য।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি আবার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককেই এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, দুর্গাপূজার আর এক মাসও বাকি নেই, কিন্তু ইতিমধ্যেই সারা দেশে নির্মীয়মাণ প্রতিমা ভাঙচুর করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ দেশের হিন্দুরা সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত, এখন ডিজিটালভাবেও নির্যাতিত ও নিপীড়িত।
৫৭ নামে যে ডিজিটাল আইন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার বলি হচ্ছে হিন্দুরা।
কীভাবে হিন্দুদের কণ্ঠরোধ ও বন্ধ রাখা যায়, সেই অভিপ্রায়ে কারণে-অকারণে ৫৭ ধারাকে অপব্যবহার করে নির্যাতনের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের জাতীয় হিন্দু মহাজোটের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিঠু রঞ্জন দেব। মানববন্ধনের শেষে হিন্দু মহাজোটের একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পরিক্রমা করে।
একই সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের আরেকটি অংশ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতিয় হিন্দু মুহাজোট দুর্গাপূজায় প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দিরে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজাকালীন নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছে।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা সহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য সমান প্রয়োগ না হলে এই আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে বলে দাবি জানায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণ করা না হলে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার কথাও ঘোষণা করেন তাঁরা।