দীর্ঘ গবেষণা করেও কী রহস্য আজও ভেদ করতে পারেননি অসমের মুখ্যমন্ত্রী?
গুয়াহাটি, ২৯ জানুয়ারি : সুন্দরী মেয়েগুলো সুন্দর সুন্দর সেলফি ওঠে, মন ছুঁয়ে যাওয়া আলাপ করে। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পরই এরাই বদলে যায়।
এদের ব্যবহার খুব খারাপ হয়ে যায়। সরকারি নার্সদের একাংশের ব্যবহার প্রসঙ্গে এমন কথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
তবে অসমের নার্সরা সিঙ্গাপুর জাপানের মতো দেশেও যাবেন, এমন আশার কথাও শোনালেন তিনি।
শনিবার গুয়াহাটিতে ১২০৮ জন চাকরিপ্ৰাৰ্থীকে নিযুক্তিপত্ৰ প্ৰদান করা হয়, এরমধ্যে ১১৩৬টি পদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে এবং ৭২টি পদ স্বরাষ্ট্র বিভাগে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত এক লক্ষ চাকরি প্রদান প্ৰক্ৰিয়ারই অঙ্গ ছিল এদিনের এই নিযুক্তি। শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে এই নিযুক্তিপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে অসমের নার্সদের দিয়ে বড় আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্ৰী হিসাবে তিনি ২০০৬ -এ দায়িত্ব নিয়েছিলেন, মাঝে এক বছর বাদ দিয়ে ২০২১ পর্যন্ত তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্ৰীর দায়িত্বে ছিলেন।
বর্তমানে মুখ্যমন্ত্ৰী হয়েও স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর যতটুকু সম্ভব দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগে খুব বড় এবং গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করেন স্টাফ নার্সরা।
২০০৬-এ অসমে প্ৰায় ১০ হাজার স্টাফ নার্স চাকরি পাননি তখন রাজ্যে নার্সিং হোমও তেমন একটা ছিল না, সে সময় তাঁরা একসঙ্গে জাজেস ময়দানে ২৬০০ তরুণীকে জিএনএম নার্সের নিযুক্তি পত্ৰ দিয়েছিলেন।
এর পর অসমে রাষ্ট্ৰীয় স্বাস্থ্য অভিযান ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে অন্তত ১৫ হাজার মহিলাকে স্টাফ নার্সের চাকরি দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে জিএনএম শিক্ষা ব্যাপক করে তোলার জন্য জিএনএম স্কুল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারও জিএনএম স্কুল খোলার কারণে জিএনএম পড়া মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এরপরও আজ প্ৰত্যেক জিএনএম পাস করা মেয়ে হয় রাজ্য সরকার, না-হয় ন্যাশনাল হেল্থ মিশন অথবা প্ৰাইভেট নার্সিং হোমে চাকরি পেতে সক্ষম হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা জিএনএম কোর্সে কিছুটা বদল আনতে চাইছি, যেখানে ইংরেজি ও কম্পিউটারও শেখানো হবে নার্সিং ছাত্রীদের।
যারা ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে, কম্পিউটার জানা থাকবে এবং ব্যবহারও ভালো তাদের স্কিলড মেনপাওয়ার বলা হয়।
তিনি যোগ করেন, সিঙ্গাপুর ও জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে অসমের মেয়েদের সিঙ্গাপুর ও জাপানে জিএনএম নার্স হিসাবে পাঠাতে পারি কি না।
এবার সিঙ্গাপুর সরকার ২০০ জন মেয়েকে উত্তর-পূর্ব থেকে নেওয়ার চেষ্টা করছে, আমরা যদি এক্ষেত্ৰে সফল হই তবে ভবিষ্যতে অসমের ছাত্ৰী সমাজের জন্য দারুণ বিষয় হবে।
এখানকার মেয়েদের জন্য বছরে দু-তিন হাজার চাকরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে দেবে। এই সূত্রে ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রের মেয়েদের বহু এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বলেন মুখ্যমন্ত্ৰী
এদিন নিযুক্তি পাওয়া নার্সদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, যে-সকল মেয়েরা নার্সিং পড়ে তারা সাধারণত দুস্থ-দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে।
তাঁর প্রশ্ন, আমাদের মেডিকেলে কারা আসেন? জবাবে বলেন, দুস্থদরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষই আসেন সরকারি হাসপাতালে।
তিনি নিযুক্তিপ্রাপ্তদের আত্মসমালোচনা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদের বাবা-মা যখন অসুস্থ হন বা আমাদের বাবা-মা কত কষ্ট করে আমাদের নার্সিং পড়িয়েছেন এসব কষ্ট আমাদের থেকে ভাল কে বুঝতে পারবে?
কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর আমাদের ব্যবহার কেন হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়ে? পায়ের নীচের মাটি, আমরা কোন সমাজ থেকে এসেছি, সেকথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ৷
তিনি রসিকতার ছলে যোগ করেন, এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে, দেখা হলে দারুণ সব সেলফি ওঠে, মায়াবি আলাপ করে অথচ এরাই চাকরি পাওয়ার পর বদলে যায়। তাদের ব্যবহার খারাপ হয়ে যায়।
এর কারণ দীর্ঘ গবেষণার পরও জানতে পারেননি তিনি, বলেন হাসপাতালে নবজাতকদের নম্বর হিসেবে উল্লেখ করে। এমন ব্যবহার পরিত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে হিমন্ত বলেন মানুষের ব্যবহার যখন খারাপ হয়, তখন আত্মাও নোংরা হয়ে পড়ে।
কাপড় পরিষ্কার করার মাধ্যম হল সাবান আর আত্মাকে পরিষ্কার করার মাধ্যম হল পবিত্ৰ কাজকর্ম। একথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী কারও সঙ্গে যাতে নার্সরা দুর্ব্যবহার না করেন সেই আবেদন রাখেন। হাসিমুখে মানুষের সেবায় কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগে সবসময় সম্প্ৰসারাণ চলছে, আগামী দু-একদিনের মধ্যেই আমাদের তিনটি মেডিকেল কলেজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। সেখানেও শতাধিক জিএনএম চাকরি পাবেন।
আগামী বছর গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় মেডিকেল কলেজের কাজ শুরু হবে, তিনসুকিয়ায়, চরাইদেও এবং বিশ্বনাথে হবে। ক্রমশ বঙাইগাঁও, গোলাঘাট, মরিগাঁও, ধেমাজি ইত্যাদি স্থানে মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হবে।
এনএইচএমেও চাকরি মিলবে এবং এনএইচএম থেকে রাজ্য সরকারের চাকরিতেও আসা যাবে। তাই ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নার্সিং পড়ুয়াদের উদ্দেশে এমন আশ্বাসবাণী শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সব সময় শিখে যেতে হবে যাতে আমরা নিজেদের উপযুক্ত মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তুলতে পারি।
ড০ শৰ্মা বলেন, সবাই জানেন যে আমরা এক লক্ষ চাকরি দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, স্বাস্থ্য বিভাগে ইতিমধ্যে বহু নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর।
এই প্রচেষ্টা থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগ প্ৰায় ১২ হাজার নিযুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে, বলেন তিনি। এদিন স্বরাষ্ট্র বিভাগে ৭২জনকে নিযুক্তি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী কেশব মহন্ত, রাজ্যসভার সাংসদ পবিত্র মার্ঘেরিটা, ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত, রাজ্য পুলিশের সঞ্চালক প্রধান (বিশেষ) জি পি সিং শীর্ষ আধিকারিকরা।