ইজাব কবুল করার পর বিবাহ হয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে ওরা বৈধ স্বামী স্ত্রী, ব্রজপুর ইয়াকুবিয়া টাইটেল মাদ্রাসা ও গবেষণা কেন্দ্রের বার্ষিক জলসায় প্রশ্ন অবৈধ হল কিভাবে?
হাইলাকান্দি, ৭ ফেব্রুয়ারি : অসম সরকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গোটা রাজ্যে যেভাবে ধরপাকড় শুরু করেছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আল্লামা সারিমুল হক লস্কর।
ব্রজপুর ইয়াকুবিয়া টাইটেল মাদ্রাসা ও গবেষণা কেন্দ্রের বার্ষিক জলসা এবং দস্তারবন্দি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি সরকারের ধরপাকড়ের নিমদা করে বলেন, এতে বহু পরিবার অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
তিনি বলেন, নির্ধারিত বয়সের পূর্বে যেসব ছেলেমেয়েদের বিবাহ হয়েছে তাদেরকে অবৈধ স্বামী বলে অসম পুলিশ গ্ৰেফতার করায় রাজ্যজুড়ে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই এ বিষয়ে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
সরকারের হঠাৎ করে এই অভিযান চালানো অত্যন্ত দূর্ভাগ্য জনক বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর প্রশ্ন, সরকার যদি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে চেয়েছিল তাহলে কেন পূর্বে এবিষয়ে কড়া নির্দেশ দেয়নি।
সরকারের উচিত ছিল ২০২৩ বর্ষকে সিমারেখা দেওয়া। পূর্বে যেসব বাল্যবিবাহ হওয়ার হয়ে গেছে, ২০২৩ সালের পর থেকে এরকম আর যাহাতে হয় না।
কিন্তু সরকার বহু বছর পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছেলেমেয়েদেরকে ধরপাকড় শুরু করেছে এতে বহু লোক গ্ৰেফতার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্ৰেফতার হওয়ার পর ওদেরকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, ওরা অবৈধ কিভাবে হলেন ? ফের প্রশ্ন তুলে সারিমুল বলেন, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে দুজন সাক্ষী রেখে ইজাব কবুল করার পর বিবাহ হয় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে ওরা বৈধ স্বামী স্ত্রী।
তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রকে বাল্যবিবাহের কাঠগড়ায় টেনে এনে বলেন, সতেরো বছর বয়সে এগারো বছরের যশোদাবেনকে বিয়ে করছেন।
এখন কি মোদীজিও বাল্যবিবাহ করার অপরাধে গ্ৰেফতার হবেন ? বলে প্রশ্ন করেন মওলানা সারিমুল। তাছাড়া বিশিষ্ট ইসলামিক পন্ডিত মওলানা সারিমুল হক লস্কর মাদ্রাসা শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন,সরকার ষড়যন্ত্র করে সরাকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিলেও মুসলমানরা তাদের পকেটের অর্থ দিয়ে চাঁদা তুলে বেসরকারী মাদ্রাসা চালাচ্ছেন।
অসম পুলিশের ডিজিপির সঙ্গে বেসরকারী মাদ্রাসা নিয়ে বার কয়েক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এতে বিভিন্ন প্রস্তাবাদিও গৃহীত হয়েছে।
বিশেষ করে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন এবং বিশ্বনবীর হাদীস আরবি ভাষায় লেখা,তাই মুসলমানদের এই ভাষা শেখা অত্যন্ত জরুরি।
তাছাড়া আরবি রাষ্ট্রসংঘে স্বীকৃত ভাষা, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলেন আর এসব বেসরকারী মাদ্রাসা সম্পূর্ণ সরকারি সাহায্য ছাড়াই চলছে।
মওলানা সারিমুল বেসরকারী মাদ্রাসা গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিন সকাল দশটায় পতাকা উত্তোলন করে ব্রজপুর ইয়াকুবিয়া টাইটেল মাদ্রাসার বার্ষিক জলসা ও দস্তারবন্দি অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতী সরফ উদ্দিন, মুফতী আনোয়ার হোসেন, মুফতী রসিদ আহমদ, মওলানা আব্দুল গণি, ক্বারী মওলানা সয়ফুর রাজা, মাদ্রাসা পরিচালন কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মিসবাহুল ইসলাম মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম লস্কর, সদস্য হোসেন আহমদ চৌধুরী, আব্দুস সালাম বড়ভূইয়া, নজরুল ইসলাম চৌধুরী,আবুল হোসেন চৌধুরী, আনোয়ার বক্ত লস্কর, সাহাদত হোসেন চৌধুরী, ফজলুল আহমেদ প্রমুখ।
এরপর মাদ্রাসার ছাত্ররা কোরআন খতম করে সংক্ষিপ্ত মিলাদ শরীফ পাঠ করেন। বাদ জোহর নসিহত পেশ করেন মাদ্রাসার এই বছরের বিদায়ী নয়জন ছাত্র।
আছরের নামাজের পর মাগরিব পর্যন্ত ধারাবাহিক নসিহত করেন বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামগণের মধ্যে মওলানা আফতার হোসেন মাঝারভূইয়া, মুফতি রসিদ আহমেদ, মুফতি সরফ উদ্দিন, মুফতি আনোয়ার হোসেন, মুফতি সামিম হোসেন চৌধুরী।
এদিন শায়খুল হাদীস মওলানা সারিমুল হকের কাছ থেকে নয়জন এম এম উত্তীর্ণ ছাত্র হাদীসের সনদ গ্ৰহণ করেন।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন মওলানা ড০ মুবাশ্বীর আলী মিসবাহী, বিশিষ্ঠ অতিথিহিসাবে বক্তব্য রাখেন শিলচর আননূর সিনিয়র মাদ্রাসার অধীকক্ষ মওলানা তাজিম উদ্দিন, আল হিলাল একাডেমির অধীকক্ষ মওলানা মুজাহিদুল ইসলাম, চরকিশাহ মোকাম মাদ্রাসার অধীকক্ষ, জানকি বাজারের মওলানা আহমদ আলী লস্কর, টান্টুর ছাহেবজাদা আলহাজ্ব আব্দুল বাছিত চৌধুরী, বদরপুর বুন্দাশীলের ছাহেবজাদা মওলানা মস্তাক আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন হাইলাকান্দির বিধায়ক জাকির হোসেন লস্কর, গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী খুর্শেদ আলম মজুমদার, হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেসের সংখ্যালঘু বিভাগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মীরা, জেলা পরিষদ সভানেত্রীর প্রতিনিধি মাসুক আহমদ বড়ভূইয়া, এআইইউডিএফ নেতা রিপন মজুমদার সহ অন্যান্যরা।