করিমগঞ্জ প্রেসক্লাবে ‘আজকের অতিথি’ অনুষ্ঠানে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক
জুলি দাস
করিমগঞ্জ, ১২ ফেব্রুয়ারি : রাজ্যে উন্নয়ন বলতে কিছুই হচ্ছে না। বিভিন্ন বিষয় থেকে জনগণকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে চলছে রাজ্য সরকার।
এক কথায় রাজ্যে চলছে মামাগিরি শাসন। একথা বলেছেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
প্রেস ক্লাব করিমগঞ্জ আয়োজিত ‘আজকের অতিথি’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুলোধুনা করেন কমলাক্ষ। তিনি শাসক দলের নেতাদের ভূমিকারও কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন।
কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেছেন, সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে রাজ্য সরকার। উন্নয়ন ছেড়ে অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত সরকার।
ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে গত দেড় বছরে কোনো কাজ হয়নি। শুধু ঘোষণা আর ঘোষণা। অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি।
বড় কয়েকটি ইস্যু নিয়ে সরকার ঘোষণা করলেও কতটুকু সেটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আগে প্রতিবছর সমষ্টির উন্নয়নের জন্য বিধায়কদের ফান্ড ছিল, কিন্তু বর্তমানে ফান্ড-এর কোনো বালাই নেই।
গত দুই বছরে রাস্তাঘাটের জন্য সিএম প্যাকেজ একবার মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। কাজ শুরু হবে মার্চে।
ততক্ষণে ২০২২-২৩ অর্থ বছর চলে যাবে। কাজ শেষ হতে ২০২৫ লেগে যাবে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে মাত্র একবার অর্থ মঞ্জুর।
এদিনের আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে বিধায়কের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, আলোচনার যোগ্য বলেই আমাকে নিয়ে আলোচনা চলছে।
তবে ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মা যেদিন বিজেপিতে যোগ দেন সেদিন থেকেই তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেছেন, ২০১১ সাল থেকেই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।
শর্মা কংগ্রেসে থাকলে তাঁর স্বপক্ষে আরো অনেকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতাম। কিন্তু বিজেপিতে চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। বরং লড়াই চলছে।
কোনো বিষয় নিয়ে সমঝোতা করার প্রশ্নই উঠেনা। মানুষের জন্য কথা বলছি, সত্যের জন্য বলেই যাব। এতে আপস করার প্রশ্ন উঠে না। এছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়, তাই ভয় পাওয়ার প্রশ্ন উঠে না।
ডিলিমিটেশন নিয়ে সরকারের মানসিকতা নিয়ে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বিধায়ক বলেছেন, এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে।
ডিলিমিটেশন হলেই যে বিজেপি জিতবে, আর কংগ্রেস হেরে যাবে, এমন বিষয় নয়। এ নিয়ে সময় কথা বলবে। ডিলিমিটেশন হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চিন্তায় মত্ত বিজেপির নেতারা।
অন্যদিকে, সংরক্ষণ মুক্ত হলে লোকসভা নির্বাচনে করিমগঞ্জ কিংবা কাছাড়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কমলাক্ষ সরাসরি বিষয়টি অস্বীকার না করে বলেছেন, দলে আরো অনেকের এ নিয়ে গ্রহণযোগ্যতা আছে।
সাংসদ হতে হলে সব জায়গার চিত্র নখদর্পণে থাকতে হবে। বিধায়ক হয়েই সব ওয়ার্ডের খবর রাখা যায় না।
করিমগঞ্জের শাসক দলের নেতাদের কড়া ভাষায় সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, শাসক দলের নেতারা হাততালি আর উত্তরীয় দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত।
মন্ত্রীরা জেলায় আসলে তাদের প্রশ্ন করার অধিকার নেই বিজেপির নেতাদের। ফলে এই অবস্থা।
জেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে মেডিকেল কলেজ চলে গেলেও এই বিষয়সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নীরব রয়েছেন বিজেপির নেতারা।
মেডিকেল কলেজ নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে বিজেপির নেতাদের। বলেছেন, ভাষা নিয়ে অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।
কোনো কর্মসংস্থান নেই। জনগণ তা মেনে নেবেন না। সরকারি যাদের ভোটে নির্বাচিত আজ সেই হিন্দু বাঙালিদের এনআরসি, আধার কার্ড, রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, কিছু কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী ড০ হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তবে সেটা ভালো কাজের জন্য নয়, কিছু বাজে কাজের জন্য।
এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে বিধায়ককে উত্তরীয়, স্মারক উপহার ইত্যাদি তুলে দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মিহির দেবনাথ, সম্পাদক অরূপ রায়, অরূপরতন চক্রবর্তী, জুলি দাস।