শ্যামল আচার্য, রামকৃষ্ণনগর : বাংলাদেশে নয়, এবার শতাব্দী প্রাচীন শিব ও নারায়ণ মন্দির জ্বালিয়ে দেওয়া হলো করিমগঞ্জের দুল্লভছড়া দামছড়ায়।
ঘটনাকে ঘিরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে উপজাতি গ্রাম দুল্লভছড়ার দামছড়ায়।
ছুটে এলেন করিমগঞ্জের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার, মোতায়েন করা হয় অর্ধসামরিক বাহিনী।
পরিস্থিতি থমথমে।
রাতের অন্ধকারে রাতাবাড়ি বিধানসভার দুল্লভছড়া গাঁও পঞ্চায়েতের দামছড়া পুঞ্জিতে থাকা ১৮০০ শতাব্দীর প্রাচীন মন্দির পুড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা।
উপজাতি অধ্যুষিত ওই গ্রামে প্রয়াত দেবীরাম বর্মণ ১৮০০ শতাব্দীতে একটি মন্দির স্থাপন করেছিলেন।
মন্দিরের দুটি কক্ষে শিব-পার্বতী ও লক্ষী-নারায়াণের বিগ্রহ স্থাপিত ছিল। প্রাচীন এই মন্দিরে শত শত বছর ধরে পূজাঅর্চনা করে আসছেন উপজাতি লোকজন।
কিন্তু সোমবার রাতে দুষ্কৃতীরা মন্দিরে অগ্নি সংযোগ করে মন্দিরটিকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।
এতে মন্দিরে থাকা শিব-পার্বতী ও লক্ষীনারায়াণের শতাব্দী প্রাচীন বিগ্রহও ভস্মিভূত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আগুনে পুড়ে মরে গেছে মন্দিরে অবস্থানরত প্রচুর সংখ্যক সরীসৃপ।
মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা সেখানে গিয়ে দেখেন তাদের আস্থার প্রতীক শতাব্দী প্রাচীন মন্দির ও মন্দিরে ভিতরে থাকা বিগ্রহ পুড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান মন্দিরের পাশে তারা ছোট ছোট দুটি প্লাস্টিকের গ্যালন দেখতে পেয়েছেন। ওই গ্যালন দুটি থেকে পেট্রলের গন্ধও বের হচ্ছে।
এতে তাঁরা নিশ্চিত, উপজাতি হিন্দুদের ধার্মিক ভাবাবেগে আঘাত হানতে দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিত ভাবে মন্দিরটি জ্বালিয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। উপজাতি মহিলারা তাদের আরাধ্যের মন্দির পুড়িয়ে দেওয়ায় মন্দির চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উল্লেখ্য বনবিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে শত শত বছর ধরে উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ দামছড়া পুঞ্জিতে বসবাস করে আসছেন।
কিন্তু গত কয়েক বছরে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের জমির অনেকাংশ জবর দখল করে ঘর বাড়ি বানিয়ে নেয়।
কয়েকমাস আগে উপজাতিদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সরকার উচ্ছেদ চালিয়ে জবর দখলকারীদের ঘর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়।
তথাপিও তারা ওই গ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বসবাস শুরু করে। এতে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তুষের আগুন জ্বলছিল।
মন্দির জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনার সাথে উচ্ছেদের কোন সম্পর্ক রয়েছে কিনা পুলিশের তদন্তে সেটা বেরিয়ে আসবে।
তবে ওই ঘটনাকে সনাতন ধর্মের উপর হামলা বলে অভিহিত করেছেন বিজেপির দুল্লভছড়া মণ্ডল সভাপতি জিতেন্দ্র লাল রায়।
দামছড়া পুঁজিতে শতাব্দী প্রাচীন মন্দির জ্বালিয়ে দেওয়াকে নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই ঘটনা যাহাতে ভিন্ন মোড় না নেয় এবং কোন প্রকার হিংসা ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য রাতাবাড়ির ওসি উত্তম অধিকারী অর্ধসামরিক বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে টহল দিচ্ছেন।
করিমগঞ্জের জেলা শাসক মৃদুল যাদব ও পুলিশ সুপার পার্থ প্রতীম দাসও ঘটনা স্থলে পৌঁছে যাবতীয় ঘটনাক্রম খতিয়ে দেখেছেন।
সনাতন হিন্দুদের ধার্মিক ভাবাবেগে আঘাত হানা দুষ্কৃতীদের ২৪ ঘন্টার ভেতর গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় উপজাতি মানুষ সহ বিজেপির নেতারা।